Advertisement
E-Paper

‘শ্রমিক স্বার্থে’ টাকা আদায়, একজোট সব দল

শহরে বাইরে থেকে ট্রাক ঢুকলেই টাকা দিতে হবে। টাকার পরিমাণ অবশ্য বেশি নয়। প্রতিটি দলের জন্য দশ টাকা। অভিযোগ, হলদিবাড়ি শহরে ঢোকার মুখে তিনটি জায়গায় ট্রাক থামিয়ে, দীর্ঘদিন ধরে টাকা তুলছে তিনটি রাজনৈতিক দল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন। শ্রমিকদের স্বার্থেই নাকি ব্যয় হয় এই টাকা। এমনটাই সাফাই দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি।

রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০২:১০
গাড়ি থামিয়ে এ ভাবেই টাকা নেন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা।

গাড়ি থামিয়ে এ ভাবেই টাকা নেন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা।

শহরে বাইরে থেকে ট্রাক ঢুকলেই টাকা দিতে হবে। টাকার পরিমাণ অবশ্য বেশি নয়। প্রতিটি দলের জন্য দশ টাকা। অভিযোগ, হলদিবাড়ি শহরে ঢোকার মুখে তিনটি জায়গায় ট্রাক থামিয়ে, দীর্ঘদিন ধরে টাকা তুলছে তিনটি রাজনৈতিক দল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন। শ্রমিকদের স্বার্থেই নাকি ব্যয় হয় এই টাকা। এমনটাই সাফাই দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলি ক্ষোভ জানালেও প্রশাসন নীরব। যেহেতু কোনও অভিযোগপত্র জমা পড়েনি তাই পদক্ষেপ করা হয়নি, বক্তব্য প্রশাসনের।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন পুজোর মরসুমে যেমন পুজো কমিটিগুলোর পক্ষ থেকে চাঁদা তোলা হয়, তেমন করেই ট্রাক থামিয়ে বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। ১৯৯২ সাল থেকে সিপিএম প্রভাবিত নর্থ বেঙ্গল ট্রাক এন্ড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে হলদিবাড়িতে যেসমস্ত বাইরের ট্রাক আসত তাদের কাছ থেকে পাঁচ টাকা করে চাঁদা নেওয়া শুরু হয়। কিছুদিন পরে কংগ্রেস প্রভাবিত ন্যাশনাল মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও একইভাবে টাকা তোলা শুরু হয়। ২০০৯ সাল থেকে টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রতি ট্রাকের হলদিবাড়িতে ঢোকার জন্য ১০ টাকা করে নেওয়া হতে থাকে।

গাড়ি থামিয়ে এ ভাবেই টাকা নেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা।

২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে তাদের শাখা সংগঠন হলদিবাড়ি মোটর ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও ১০ টাকা তোলা শুরু হয়। এখন হলদিবাড়িতে কোনও বাইরের ট্রাক মাল নামাতে বা আনতে গেলে কেবলমাত্র হলদিবাড়িতে ঢোকার জন্য তিনটি শ্রমিক সংগঠনকে মোট ৩০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। টোম্যাটো ও লঙ্কার মরসুমে প্রতিদিন ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত ২৫০টি গাড়ি হলদিবাড়িতে ঢোকে। সারা বছর এইভাবে একটা বিপুল অঙ্কের টাকা তিনটি দলের শ্রমিক সংগঠনের তহবিলে যাচ্ছে। তিনটি সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন যে এই টাকা ট্রান্সপোর্ট কর্মীদের স্বার্থে ব্যয় হয়।

সিপিএম প্রভাবিত নর্থ বেঙ্গল ট্রাক এন্ড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের মুখপাত্র আশিস বিশ্বাস বলেন, “এই টাকা যাঁরা ট্রাক চালান কেবল তাদের কাছ থেকেই তোলা হয় এবং শ্রমিকদের কল্যাণে খরচ হয়।” কংগ্রেস প্রভাবিত ন্যাশনাল মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি সুশান্ত দে দাস বলেন, “শ্রমিকেরা অসুখ বিসুখে পড়লে, কারও মেয়ের বিয়ের টাকার দরকার হলে, এরকম নানা প্রয়োজনে এই তহবিলের টাকা ব্যয় করা হয়।” তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, “কেবল কর্মীদের দেওয়া চাঁদায় শ্রমিকদের উপকার করা সম্ভব না। কিছুদিন আগে আমাদের সংগঠনের দুজন ট্রান্সপোর্ট কর্মী কর্মরত অবস্থায় মারা যান। তাঁদের পরিবারকে এই তহবিলের টাকা থেকে এককালীন সাহায্য দেওয়া হয়েছে।”

গাড়ি থামিয়ে এ ভাবেই টাকা নেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা।

তবে এইভাবে ট্রাক থামিয়ে সংগঠনগুলি টাকা তুলতে পারে কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হলদিবাড়ির ব্যবসায়ীদের দুটি সংগঠনের সদস্যরা। হলদিবাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, “অবৈধভাবে টাকা তোলা হচ্ছে। রাজ্যের কোনও শহরেই এ ভাবে টাকা তোলা হয়না। ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক নেতাদের দাদাগিরির জন্য কাউকে অভিযোগ জানাতে সাহস পাচ্ছেন না।” হলদিবাড়ি পাইকারি সব্জি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দিগ্বিজয় সরকার বলেন, “এইভাবে টাকা তোলার জন্য উত্তর ভারতের ট্রাক চালকেরা হলদিবাড়িতে আসতে ইতস্তত করেন। সব্জির মরসুমে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হতে হয় আমাদের। আমরা অসহায়।”

প্রশাসনিক কর্তারা নিজেরা পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। মেখলিগঞ্জের মহকুমাশাসক রঞ্জন ঝা বলেন, “কারও অভিযোগ থাকলে তাঁরা পুলিশকে জানাতে পারেন। পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।” মাথাভাঙার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক গণেশ বিশ্বাস বলেন, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টাকা তোলার বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজ নিচ্ছি।”

হলদিবাড়িতে কালিবাড়ি মোড়ে তৃণমূলের এবং কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন তাদের অফিসের সামনেই টাকা তোলে। একটু দূরে রেলগেটের কাছে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন টাকা তোলে। টাকা তোলার জন্য তিনটি সংগঠনের তিনজন লোক আছে। তারা টাকা তোলার ওপর কমিশন পায়। টাকা নিয়ে প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ থেকে ছাপানো রসিদও দেওয়া হয়।

—নিজস্ব চিত্র।

haldibari motor workers welfare union raja bandyopadhyay haldibari cpm haldibari tmc haldibari workers haldibari extortion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy