বিরোধী প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে সামিল হলেই পড়তে হচ্ছে হুমকির মুখে। রাতে বাড়িতে হানা দিয়ে চলছে ভয় দেখানো। মাথাভাঙা পুরসভার বারোটি ওয়ার্ডেই এমন চাপা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরির অভিযোগ উঠেছে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
বিরোধীদের অভিযোগ, ওই এলাকার বিধায়ক বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের বেঁধে দেওয়া ছকেই তৃণমূল কর্মীরা আসরে নেমেছেন। আগে পুরস্কার পেয়েছেন, এবারে তিনি যদি পুরসভা বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে না পারেন তাহলে মিলতে পারে তিরস্কার। তাই আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছেন তাঁর অনুগতরা। শাসক দলের ভয়ে অনেক ওয়ার্ডেই তাই প্রচারের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি বুথ স্লিপ দিতেও একা একাই ঘুরতে হচ্ছে প্রার্থীকে। মাথাভাঙা পুরসভার বিদায়ী চেয়ারপার্সন সিপিএম নেত্রী কোকিলা সিংহ রায়ের অভিযোগ, সন্ত্রাসের জেরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে মহিলা সমিতির কয়েকজন প্রচারে বার হচ্ছিলেন। রাতে প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে শাসক দলের কর্মীরা হুমকি দেয়। এমন অবস্থায় কেউ আর আমার সঙ্গে বেরোতে চাইছে না।”
সিপিএমের আরেক নেতা মাথাভাঙা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অরুণ চৌধুরীর দাবি, তাঁরা যাতে মিটিং, মিছিল না করতে পারেন সে জন্য ভয় দেখানো হয়। সভা শুরু হওয়ার আগে মাইকের মেশিনপত্র খুলে নেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন তিনি। অরুণবাবু বলেন, “চারদিকে সন্ত্রাস হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে বিপদে পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি মৌখিক ভাবে বহুবার প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কেঊ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
বিনয়বাবু অবশ্য এসব অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। উন্নয়নের প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে সাধারণ মানুষ। এখানে সন্ত্রাসের গল্প ফেঁদে কি হবে? আমরা আমাদের কাজ নিয়ে মানুষের দোরে দোরে ঘুরছি। তাতেই কাজ হচ্ছে। হতাশ হয়ে বিরোধীরা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছেন।”
শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে বিজেপিরও। দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি হেমচন্দ্র বর্মন বলেন, “তৃণমূল স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ভোট হলে তাদের হার ছাড়া কোনও গতি নেই। তাই সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে আমাদের কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে।” পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মাথাভাঙা পুরসভা দীর্ঘ প্রায় পঁচিশ বছর ধরে বামেদের দখলে রয়েছে। গত পুর নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে টক্কর দিয়েছিল তৃণমূল। দুই পক্ষই ৬ টি করে আসনে জয়ী হয়। পরে লটারির মাধ্যমে বামেরা পুরবোর্ড দখল করে। এর মধ্যে সুটুঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। বিধানসভা দখলের পরে ওই এলাকায় শাসক দলের শক্তি আরও বৃদ্ধি হয়। ক্রমশই কোণঠাসা হয়ে পড়ে বামেরা। অবশ্য ময়দান ছেড়ে যাননি তাঁরা। মাথাভাঙার বিধায়ক নির্বাচিত হন বিনয়বাবু। পরে দল তাঁকে বনমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়। দলীয় সূত্রের খবর, বনমন্ত্রী হওয়ার দল বিনয়বাবুর উপর আরও ভরসা করতে শুরু করে। দলের জেলার কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বও দেওয়া হয় তাঁকে।
এবারে পুরভোটে প্রার্থী নির্বাচনের ব্যাপারেও দল দায়িত্ব দেয় বিনয়বাবুকে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকা সত্বেও বিনয়বাবুর প্রার্থী তালিকাতেই সিলমোহর দেন তৃণমূলের রাজ্য নেতারা। ওই এলাকায় প্রচারেও বনমন্ত্রীই শেষ কথা। পাশের এলাকা শীতলখুচির বিধায়ক প্রাক্তন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনকে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না প্রচারে। আবার দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ কোচবিহার, দিনহাটা, তুফানগঞ্জ পুরসভাতেই দৌড়ঝাঁপ করছেন বেশি। মাথাভাঙাতে দুই-একটি সভাতেই তিনি যোগ দিয়েছেন।
এই অবস্থায়, পুরসভা দখল করার ব্যাপারে মরিয়া বনমন্ত্রী। তাঁর দলেরই এক নেতার কথায়, “দল তাঁকে পুরস্কার দিয়েছে। এবার প্রতিদানের পালা। না হলে তিরস্কারও মিলতে পারে তাঁর।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy