অটো ও টোটো চালকদের বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র।
যাত্রী তোলা নিয়ে গোলমালের জেরে তুলকালাম কাণ্ড ঘটল তৃণমূলের দুটি সংগঠনের মধ্যে। একটি সিটি অটোর মালিক-চালকদের। অন্যটি টোটো ইউনিয়ন। দু’পক্ষের মারামারিতে জখম হলেন এক অটো চালক। শনিবার সকালে শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন চত্বরের ঘটনা। ঘটনার পর দফায় দফায় ঘেরাও চলল নিউ জলপাইগুড়ির নেতাজি মোড় ও নিউ জলপাইগুড়ি পুলিশ ফাঁড়ি। ওই টোটো চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলেও বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি (পূর্ব) পিনাকী মজুমদার বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ তবে টোটো চালকের নাম না জানাতে পারায় তদন্তে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। ঘটনার পরেই ওই টোটোচালককে গ্রেফতারের দাবিতে এনজেপি থেকে সমস্ত রুটের অটো চালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। টোটো নিয়ে দ্রুত স্পষ্ট নির্দেশিকা জারির ব্যপারে কথা বলবেন পরিবহণ দফতরের সঙ্গে বলে জানান শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘অটো ও টোটো চালকদের মধ্যে বচসায় যাত্রীদের হয়রানি মানা যায় না। দ্রুত পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের দাবি জানাব।’’
বিবদমান দুই গোষ্ঠীই তৃণমূলের ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলার নেতারা। তারা বুঝিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও কোনও পক্ষই মীমাংসায় আসতে নারাজ। অটো চালকদের দাবি, তাঁরা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন চত্বরে কোনও টোটো চালকের প্রবেশ বরদাস্ত করবেন না। সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি ব্লকের আইএনটিটিইউসি সভাপতি বিজন নন্দীও। তিনি বলেন, ‘‘অটো ও টোটোচালকেরা উভয়েই আমাদের ইউনিয়নের সদস্য। সবদিক বাঁচিয়ে চলতে হচ্ছে। দুপক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে মীমাংসার চেষ্টা করা হবে। আমরা অনুরোধ করছি যাতে অটো চালানো বন্ধ না করে চালকেরা। এদিনই সন্ধ্যায় বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়েছে। আইএনটিটিইউসির দার্জিলিং জেলা সভাপতি অরূপরতন ঘোষও এ বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘মারধরের ঘটনা অনভিপ্রেত। সমস্যা মেটাতে আলোচনায় বসা হবে। অটো যাতে বন্ধ না থাকে সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে সাড়ে আটটা নাগাদ নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন চত্বরে একটি অটো থেকে যাত্রীদের ডেকে নিয়ে গিয়ে টোটোতে বসানোর অভিযোগ ওঠে। ওই অটোচালক প্রতিবাদ করায় দুজনের মধ্যে বচসা বাধে। অভিযোগ, এর পরে ওই টোটোচালক আরও কয়েক জনকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ওই চালক মনোজ চৌধুরীকে মারধর শুরু করে। তাঁকে বাচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন মুন্না শাহ নামে অপর এক অটোচালক। মনোজবাবু বলেন, ‘‘আমাকে মারধর করছিল ওই টোটোচালক ও আরও কিছু শ্রমিক। তাদের কাছে মাল টানার হুক ছিল। তা দিয়ে আমাকে মারার চেষ্টা করলে মুন্না বাঁচাতে যায়।’’ তাঁকে ওই লোহার হুক দিয়ে আঘাত করলে তার মুখের ডান দিকে জখম হয়। ওই অবস্থাতেই থানায় যান অভিযোগ জানাতে।
এর পরেই ক্ষুব্ধ অটোচালকেরা স্টেশনে ঢোকার মুখে নেতাজি মোড়ে প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে। এর পরে সেখান থেকে গিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ি ঘেরাও করে অভিযুক্ত টোটোচালককে গ্রেফতারের দাবি জানান তাঁরা। সেখানে একটি টোটো হঠাৎ ঢুকে পড়লে সেটিতেও ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা করে ক্ষিপ্ত অটো চালকেরা। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক অশোক দাস অবশ্য বলেন, টোটো নিয়ে রোজকার সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অটোর পার্কিং এলাকায় টোটো পার্ক করে যাত্রী ওঠানো নামানো হচ্ছে। কিছু বলতে গেলেই বচসা বাধছে। পরিবহণ দফতরের উচিত শীঘ্র ব্যবস্থা নেওয়া।’’
এ বিষয়ে আরটিও সোনম ভুটিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,‘‘দ্রুত টোটোর ব্যপারে গাইড লাইন তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’’ জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য তথা তৃণমূলের জেলা কমিটির নেতা মদন ভট্টাচার্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘কী হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে না দেখে কিছু বলতে পারব না।’’ তবে টোটো নিয়ে দ্রুত নির্দেশিকার তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিন কয়েক দফায় অবরোধে নাকাল হতে হয়েছে যাত্রীদের। কলকাতা থেকে দার্জিলিং মেল এসে পৌঁছানোর পরে পদাতিক, কাঞ্চনকন্যা সহ আরও কয়েকটি ট্রেন ঢোকে। অটো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে প্রত্যেককেই। বচসায় জড়িয়ে পড়ার ফলে টোটোগুলিও এলাকায় ঢোকেনি সারাদিনই। এক টোটোচালক বিকাশ দাস বলেন, ‘‘কে মারধরের ঘটনায় যুক্ত তা জানি না। কিন্তু এতে সকলেরই ক্ষতি হল। যাত্রীদেরও হয়রানি হতে হয়েছে। ট্যুরিস্ট ট্যাক্সি নিয়ে শহরের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে মোটা টাকার বিনিময়ে। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানানোর কথাও ভাবছেন কেউ কেউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy