E-Paper

বাল্যবিবাহ রুখতে চাই জরিমানা, আইনি পদক্ষেপও

যেমন, আমাদের স্কুল বাংলাদেশের সীমান্তে। ফলে, সীমান্তে চোরাচালানের মতো যাবতীয় সমস্যা এখানেও রয়েছে। রয়েছে বাল্যবিবাহের সমস্যাও।

জয়দেব লাহিড়ি

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ০৮:৩৪
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক কারণে বাল্যবিবাহ হয়ে থাকে। সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা, শিক্ষার সীমিত সুযোগ, মেয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে— এ সব নিয়ে অভিভাবকদের ভয়, মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা, আর্থ-সামাজিক অবস্থার নানা দিক এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করে, যা শুধু বাল্যবিবাহকে বাঁচিয়েই রাখে না, তাকে বাড়তেও সাহায্য করতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শিশু পাচার, যা অনেক সময় ঘটে বিয়ের আড়ালে। ভৌগোলিক ভাবেও পশ্চিমবঙ্গ এক স্পর্শকাতর অঞ্চল। যার ফলে সীমান্ত দিয়ে মেয়েদের পাচার প্রতিরোধ করা প্রশাসনের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যেমন, আমাদের স্কুল বাংলাদেশের সীমান্তে। ফলে, সীমান্তে চোরাচালানের মতো যাবতীয় সমস্যা এখানেও রয়েছে। রয়েছে বাল্যবিবাহের সমস্যাও। এই কঠোর বাস্তবের সামনে দাঁড়িয়েও ১৫ বছর ধরে আমাদের সীমিত ক্ষমতায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি বাল্যবিবাহ নামে অসুরের বিরুদ্ধে।

২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অন্তত পঞ্চাশটি বাল্যবিবাহ আমরা আক্ষরিক অর্থেই মাঠে নেমে আটকেছি। সঙ্গে পুলিশ, প্রশাসন আর চাইল্ড লাইনকে পেয়েছি। আমাদের অনেক বাধা আর হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু, এই লড়াইয়ের সুফল এখন আমরা কিছুটা হলেও পাচ্ছি। গত পাঁচ-ছয় বছরে আমাদের স্কুল থেকে কোনও নাবালিকা বিবাহিতা ছাত্রী মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক দেয়নি। আমরা, এলাকাবাসী এবং ছাত্রছাত্রীরা মিলে এখন একটা ‘টিম’। কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পও খুব সহায়ক হয়েছে। তবে আঠারো বছর হতে এক বা দু-মাস বাকি, সেই অবস্থায় কোনও কোনও ছাত্রী বিয়ে করেছে। আমরা সে ক্ষেত্রে নির্মম হয়েছি, বলতে গেলে ‘জ়িরো টলারেন্স’। তার মধ্যেও কিছু ছাত্রী বহিরাগত কিছু প্রলোভনে পা দিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছে। তাদের জন্য স্কুলের দরজা বন্ধ করতে হয়েছে।

আসল কথা, বাল্যবিবাহ আটকাতে হলে দরকার সর্বাত্মক প্রয়াস। আর স্কুলকে এ ক্ষেত্রে ছাত্রীদের মাথার উপরে বটগাছের মতো হতেই হবে। এলাকা আর সমাজকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে দায়বদ্ধ।

কিন্তু কেন বাল্যবিবাহ হচ্ছে তা নিয়ে কয়েকটি সম্ভাবনার কথা ভাবতে হবে। এক, পরিবারের পিতৃতান্ত্রিকতা। মেয়েদের জীবনসঙ্গী নির্বাচনের সুযোগ দিতে এখনও নারাজ অধিকাংশ পরিবার। তাই নাবালিকা কন্যার বিয়ে দিচ্ছে, আবার কিশোরীদের পালিয়ে বিয়ে করার ঘটনাও বাড়ছে। দুই, বিকল্পের অভাব। কিশোরীদের সামনে কর্মনিযুক্তি, রোজগারের সম্ভাবনা সে ভাবে পরিস্ফুট হচ্ছে না। গার্হস্থ জীবনই অবধারিত বা প্রার্থিত মনে করছে তারা। তিন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে স্কুলছুটের আধিক্য। অতএব শুধু আঠারো বছর পার করার সূচকের দিকে লক্ষ্য রাখলে হবে না, লক্ষ্য হতে হবে মেয়েদের সক্ষমতা। তার জন্য একমুখী প্রকল্প নয়, বহুমাত্রিক পরিকল্পনাও প্রয়োজন।

আর একটা কথা মনে হয় বারবার। প্রায়ই খবরে দেখি, কোনও নাবালিকার বিয়ে আটকে তার অভিভাবকের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ভাবে চললে হবে না। মুচলেকার সঙ্গে বড় অঙ্কের আর্থিক জরিমানা এবং আইনি পদক্ষেপের খুব দরকার। তাতে অন্য অনেকে সাবধান হবে।

প্রধান শিক্ষক, দাল্লা চন্দ্রমোহন বিদ্যামন্দির, মালদহ

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Underage marriage

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy