মালতিপুর থেকে এনায়েতনগরগামী রাস্তায় বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সি। ছবি: বাপি মজুমদার।
বেহাল রাস্তায় জুতো খুলে জলকাদা মাড়িয়ে বিধায়ককে হাঁটতে বাধ্য করলেন ক্ষুব্ধ মহিলারা। হাঁটু জলে দাঁড় করিয়েও রাখলেন তাঁদের। মালদহের চাঁচল-২ ব্লকের মালতিপুর থেকে এনায়েতনগরগামী রাস্তায় পথ অবরোধ করে বিক্ষোভের সময় সোমবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে। বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে মালতিপুরের আরএসপি-র বিধায়ক ওই রাস্তা যাতে সংস্কার হয়, সে জন্য প্রশাসনের কাছে দরবার করবেন জানালেও রেহাই মেলেনি। পরে বিধায়ককে নিয়ে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতে হাজির হন বিক্ষোভকারীরা। পঞ্চায়েতের তরফে সংস্কার করার আশ্বাস দেওয়ার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সির দাবি, ‘‘ওই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে এর আগে আমি নিজেই আন্দোলন করেছি। বিধায়ক তহবিলের পাঁচ বছরের টাকা বরাদ্দ করলেও ওই রাস্তা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। বাসিন্দাদের সে কথা বললেও তাঁরা তা শোনেনি। ফলে ওঁদের দাবি মতোই জলকাদায় হাঁটতে হয়েছে।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, মালতিপুরে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে এনায়েতনগর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তা ২০ বছর আগে পাকা করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তা থেকে পিচের চাদর উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সেই গর্তে জমে রয়েছে হাঁটু সমান জল। ২৫টি এলাকার লক্ষাধিক মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। পাশাপাশি ওই রাস্তা দিয়ে সহজে হরিশ্চন্দ্রপুরেও যাতায়াত করা যায়। কিন্তু বারবার আবেদন করলেও কোনও ফল হয়নি। রাস্তা এতটাই বেহাল হয়ে পড়েছে যে, কয়েক বছর আগেই ওই রাস্তায় যান চলাচলও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন জলকাদা মাড়িয়ে বিপজ্জনকভাবে পায়ে হেঁটে বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে হয়।
রবিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন শিলিগুড়ি তথ্যকেন্দ্র লাগোয়া রাস্তা। সোমবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
কিন্তু কেন ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি সংস্কার করা হচ্ছে না, সেই প্রসঙ্গে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সহ সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, ‘‘ওটা জেলা পরিষদের রাস্তা। রাস্তা এতটাই বেহাল যে, তা সংস্কার করেও কোনও লাভ হবে না। পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষে ওই রাস্তা নতুন করে করা সম্ভব নয়। জেলা পরিষদকে বারবার বলেও কোনও ফল হয়নি।’’ জেলা পরিষদের স্থানীয় কংগ্রেস সদস্য তথা জনস্বাস্থ্য কর্মধ্যক্ষ সৈয়দ মানজারুল ইসলাম বলেন, ‘‘আরআইডিএফ, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ সহ প্রধামন্ত্রী সড়ক যোজনা প্রকল্পে রাস্তাটি তৈরির প্রাস্তাব পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলেছি। পূর্ত দফতরকে ওই রাস্তা হস্তান্তর করে তৈরি করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’’
এদিন দুপুরে সংস্কারের দাবিতে মহিলারা যখন রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন, ঘটনাক্রমে তখন মালতিপুরে দলীয় অফিসে ছিলেন বিধায়ক। বিক্ষোভের কথা জেনে সেখানে হাজির হতেই বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তাঁরা কীভাবে ওই রাস্তায় য়াতায়াত করেন, তা বোঝাতে গাড়ি থেকে বিধায়ককে নামিয়ে রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য করা হয়। মহিলাদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে বিধায়কও জুতো খুলে রাস্তায় নেমে পড়েন। প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় হাঁটিয়ে বিধায়ককে বেহাল অবস্থা দেখান বাসিন্দারা।
এলাকার বাসিন্দা সুমতি দাস, নয়না মণ্ডলরা বলেন, ‘‘ওই রাস্তা এতটাই বেহাল যে গোটা এলাকার বাসিন্দাদের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাতবিরেতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কাঁধে বা খাটিয়ায় চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু সবাই শুধু দেখছি দেখব বলে দায় সেরেছেন। আমাদের দুর্দশার কথা কেউ ভাবেন না। আমরা কী ভাবে নিত্যদিন যাতায়াত করি সেটা আশা করি বিধায়ক বুঝতে পেরেছেন।’’
চাঁচল-২ ব্লকের বিডিও ইশে তামাঙ্গ বলেন, ‘‘বিভিন্ন প্রকল্পে রাস্তাটির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। দ্রুত যাতে তা সংস্কার হয় দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy