বীরেন: সরকারি খাতায় আমাকে মৃত ঘোষণা করার আগে মাসে চারশো টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা পেতাম।
প্রশ্ন: তার পর?
বীরেন: তার পর আর কী! আমাদের গ্রামে আমার নামেই এক জন মারা যায়। এ দিকে সরকারি খাতায় মৃতের ঘরে নাম উঠে যায় আমার।
প্রশ্ন: কে কে আছেন বাড়িতে?
বীরেন : আমি ছাড়া বর্তমানে আর কেউ নেই। স্ত্রী ছিলেন। তিনিও মারা গেছেন।
প্রশ্ন: স্ত্রীর মৃত্যুর পর কোনও টাকা পেয়েছিলেন?
বীরেন : না না। কে দেবে টাকা?
প্রশ্ন: পঞ্চায়েত থেকে?
বীরেন: আরে বাবা আমি তো মৃত...। ঘর পাইনি। কুয়ো পাইনি। এমনকি, শৌচাগারও না।
এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ভাঙামালি গ্রামেও অনেকেই সরকারি প্রকল্পের কোনও সুবিধা পাননি বলে অভিযোগ।
এই গ্রামেরই বাসিন্দা আকবর আলি অসুস্থ। বর্তমানে হাঁটাচলার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন। কথা পর্যন্ত বলতে পারেন না। এই পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা। আকবরের স্ত্রী সাকিনা খাতুন গ্রামের ক্ষুদ্র চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করেন।
প্রশ্ন: ঘর পেয়েছেন?
সাকিনা: না।
প্রশ্ন: কেন?
সাকিনা : আমাদের জন্য কোনও সুযোগ সুবিধাই নেই।
প্রশ্ন: একশো দিনের কাজ করেন?
সাকিনা: কোথায় কাজ হয় এখন? একশো দিনের কাজ তো এখন বন্ধ আছে বলে পঞ্চায়েত থেকে জানিয়েছে।
প্রশ্ন: সংসার চলে কী ভাবে?
সাকিনা: চা বাগানের পাতা তুলে যা মজুরি পাই, তাই দিয়েই। কোনও দিন খাই, আবার কোনও দিন না খেয়েই দিন কাটাতে হয়।
প্রশ্ন: আপনার তো মেয়ের বিয়ে। কী ভাবে বিয়ে দিচ্ছেন?
সাকিনা: গ্রামের বাসিন্দারা সাহায্য করছেন। আর আত্মীয়স্বজনেরা আছেন পাশে, তাই বিয়েটা দিতে পারছি।
প্রশ্ন: পঞ্চায়েতের থেকে কিছুই দেয়নি?
সাকিনা: কী দেবে? বেশ কয়েক বার আমাদের ফটো তুলে নিয়েছে। ফর্ম ফিলাপ করেছে। আর বলে তোমাদের নাম নেই গো। কিছু পাওয়া যাবে না।
এই গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা জানান, সরকারি সুবিধা গ্রামে যাঁদের পাওয়ার কথা ছিল, তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলেই অভিযোগ। বেশিরভাগ বাড়িতেই শৌচাগার তৈরি করা হয়নি বলেও দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। পানীয় জলের অভাব আছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পের কাজও সঠিক ভাবে হচ্ছে না। এই ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে দলবাজি করার অভিযোগও উঠেছে জনমানসে।