বছর পনেরোর ছেলেটাকে দেখতে আর পাঁচটা ছেলের মতনই সাধারণ। রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা কোনও বাইকের উপরে বসে বাদাম চিবোলে কারও কোনও সন্দেহ হওয়ার কথাও নয়। কিন্তু বাদাম চিবোতে চিবোতেই কখন পকেটে থেকে ‘মাস্টার কি’ বার করে বাইক খুলে ফেলবে তা বোঝার সাধ্যি কার।
আর তাতে নজর রাখছে কিছুটা দূরে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকাল চক্রের লোকজন। বাইক খুলে গেলেই ভিড়ে মিশে যায় ছেলেটি। আর তখনই আরেকজন এসে বাইক স্টার্ট করে হাওয়া। অনেক সময়ই বাইক মালিক এসে চিত্কার চেঁচামেচি করে পুলিশে যতকক্ষণে টেলিফোন করছেন, ততক্ষণে প্যাকেটের বাদাম শেষ করে ছেলেটি মিশে গেল বাজার, বড় রাস্তার লোকজনের মধ্যে।
এইভাবে একের পর এক বাইক চুরিতে নাজেহাল হয়ে পড়েছে শিলিগুড়ি পুলিশ। প্রতিটি থানা এলাকা থেকেই খবর আসছিল বাইক চুরির। পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা প্রতিটি থানা এলাকায় বিশেষ টিম করে তল্লাশিতে নামার নির্দেশ দেন। আর সেই তল্লাশিতে ধরা পড়ল বাইক চুরি চক্রের ওই অন্যতম পান্ডা।
শুক্রবার তাকে গাঁজা পাচারের অভিযোগ গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের বয়স মাত্র ১৫ বছর। তার সঙ্গে আরও দু’জনকে এদিন সকালে মহানন্দা মোড় লাগোয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাইক পাচারের অভিযোগে আরও দু’জনকে জলপাইমোড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের একটি দল। এই প্রসঙ্গে শিলিগুড়ি পুলিশের এডিসিপি ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “মোট পাঁচজনকে বাইক ও গাঁজা পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হবে।”
শিলিগুড়ি পুলিশের অফিসারেরা জলপাইমোড় এবং মহানন্দা মোড়ে নজরদারি শুরু করেন। গোটা ঘটনাটি তদারকি করছিলেন এসিপি পিনাকী মজুমদার এবং শিলিগুড়ি থানার আইসি অচিন্ত্য গুপ্ত। পুলিশ জানায়, ধৃতেরা একটি ব্যাগে গাঁজা ভরে অপেক্ষায় করছিল। ওই নাবালক ছাড়াও বাবুল মহম্মদ ও আব্দুল কালাম বলে আরও দু’জনকে ধরা হয়। এরা উত্তর দিনাজপুর এবং শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার বাসিন্দা। মূল পাণ্ডা ওই নাবালকের বাড়িও মাটিগাড়ায়। এর আগেও চুরির মামলায় গ্রেফতার হয়ে সে জলপাইগুড়ি জুভেনাইল হোমে ছিল। সেখান থেকে কয়েক মাস আগে সে দেওয়াল টপকে পালিয়ে যায়। ধৃতদের কাছ থেকে প্রায় ২৩ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ এদিন বিরাজ সিংহ ও মহম্মদ পইমুদ্দিন নামের আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে দুটি বাইকও উদ্ধার করা হয়েছে। এদের বাড়ি উত্তর দিনাজপুর জেলায়।