Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Malda

ভাঙা পথে ট্রাক খারাপ, যেতে হচ্ছে ঘুরে

জেলা সদরের সঙ্গে গ্রামীণ এলাকার যোগাযোগের বিভিন্ন রাজ্য সড়ক, যেমন মালদহ-মানিকচক, মালদহ-নালাগোলা, মালদহ-পীরগঞ্জ এবং জেলার প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার একাধিক রাস্তার অবস্থাও ভাল নয়। রাস্তা নিয়ে তাই সব মহলে ক্ষোভ।

বি-পথ: এমনই অবস্থা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। সুজাপুরে। নিজস্ব চিত্র।

বি-পথ: এমনই অবস্থা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। সুজাপুরে। নিজস্ব চিত্র।

জয়ন্ত সেন 
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৩২
Share: Save:

চাকরি বড় ‘বালাই’। কাজে না গেলে পেটে ভাত জুটবে না। তাই এই করোনা আবহেও নিত্য বাস ধরছেন গাজলের বাসিন্দা, পঞ্চায়েত আনোয়ার শেখ। গন্তব্য কালিয়াচকের জালালপুর। রায়গঞ্জ থেকে বহরমপুরের সরকারি বাসে চেপে বসছেন। কিন্তু রথবাড়ি মোড় এলেই যে উঠে পড়তে হল! কেন? আনোয়ারের কথায়, ‘‘উল্টো দিক থেকে আসা একটি সরকারি বাসের চালকের সঙ্গে কথা হল এই বাসের চালকের। তার পরেই কন্ডাক্টর বলতে শুরু করলেন, যাঁরা সুজাপুর, জালালপুর যাবেন, নেমে যান। বাস মোথাবাড়ি হয়ে যাবে।’’ আনোয়ারের অভিযোগ, এক দু’দিন নয়, এমনটা নিত্য দিনই হচ্ছে

রথবাড়িতে নেমে তিনি ধরছেন ম্যাজিক ভ্যান। সেখানে করোনা আবহেও গাদাগাদি। আনোয়ার বলেন, ‘‘এটা রোজকার রুটিন হয়ে গিয়েছে যেন। অফিস করে বাড়ি ফেরার সময়েও একই অবস্থা।’’ কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি?

অভিযোগ, সে দিন বেহাল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের জন্য সুজাপুর ও ডাঙার মাঝে একটি পণ্যবাহী ট্রাক বিকল হয়ে পড়ায় সুজাপুরে ব্যাপক যানজট। তাতে সুজাপুর থেকে জালালপুর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার জুড়ে যানজট। এই রাস্তা পার হতে ঘণ্টা তিনেকের বেশি লেগে যাবে। ফলে মোথাবাড়ি হয়ে ঘুরপথে যাচ্ছে বাস। পথের মাঝে এমন বিকল ট্রাক আর যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা।

কেন? ‘‘রাস্তার যা দশা, তাতে ট্রাক তো খারাপ হবেই,’’ বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অথচ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ককে চার লেন করার কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও মালদহে এই রাস্তার কাজ এখনও শেষ হয়নি। আর তাতেই পথ বিগড়েছে নানা জায়গায়। রাস্তা ভরে গিয়েছে খানাখন্দে। বর্ষা তাকে আরও বেহাল করেছে। যেমন, সুজাপুর হাসপাতাল মোড় থেকে কালিয়াচক-১ ব্লকের বিডিও অফিস পর্যন্ত বা পুরাতন মালদহের নলডুবি থেকে নারায়নপুরের শিল্পতালুক, গাজলের আলমপুর থেকে ময়না পর্যন্ত রাস্তা। সব জায়গাতেই ছিল বড় বড় গর্ত। পুজোর আগে সুজাপুর এলাকায় কোনওক্রমে গর্ত বোজানোর চেষ্টা করেছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার বেশিরভাগই উঠে গিয়ে ফের বার হয়ে পড়েছে পুরনো গর্ত।

মালদহে বৈষ্ণবনগর সংলগ্ন ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে গাজলের ময়নার বৈদিরা পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার বিস্তৃত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সড়ক সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করে ২০১৪ সালের মধ্যেই কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। জবরদখলও তুলে দেওয়া হয় ২০১৭ সালের মধ্যে। তা সত্ত্বেও এই জেলায় জাতীয় সড়ককে চার লেন করার কাজ এখনও শেষ হয়নি।

সুজাপুরের বাসিন্দা রহমত শেখ, জুলফিকার আলি, ইমতিয়াজ শেখরা বলেন, ‘‘লকডাউনের আগে থেকে চার লেনের কাজই বন্ধ ছিল। এখন ফের শুরু হয়েছে। কিন্তু বেহাল রাস্তার জন্য যানজট লেগেই রয়েছে।’’ ওয়েস্টবেঙ্গল এক্সপোর্টার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘‘মালদহ জেলায় ৩৪, ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গা বেহাল। রফতানির পণ্যবাহী ট্রাকগুলির এই রাস্তায় চলাই এখন দায়। তার উপরে সড়ক কর্তৃপক্ষ টোল আদায় করছে, যা বেমানান।’’

৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের সামসি, শম্ভুনগর থেকে চাঁচল হয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর এবং ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়কের রাঙাভিটা থেকে গাজলের শহিদপুর পর্যন্ত রাস্তারও দশা তথৈবচ। জেলা সদরের সঙ্গে গ্রামীণ এলাকার যোগাযোগের বিভিন্ন রাজ্য সড়ক, যেমন মালদহ-মানিকচক, মালদহ-নালাগোলা, মালদহ-পীরগঞ্জ এবং জেলার প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার একাধিক রাস্তার অবস্থাও ভাল নয়। রাস্তা নিয়ে তাই সব মহলে ক্ষোভ। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের মালদহ-রায়গঞ্জ বিভাগের প্রকল্প অধিকর্তা দীনেশ হংসারিয়া বলেন, ‘‘বর্ষায় জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ সাময়িক বন্ধ ছিল। তবে সে সময়ে খানাখন্দগুলি অস্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়। এখন জোরকদমে কাজ শুরু হয়েছে।’’ মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলার সব রাস্তাই সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malda Road Poor condition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE