Advertisement
E-Paper

আলুর সঙ্গে এ বার বাড়ছে পেঁয়াজের দামও

উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার খুচরো বাজারে আলুর দাম কমছে না। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দামও। শিলিগুড়ির বিভিন্ন বাজারে আলু এ দিনও বিকিয়েছে চড়া দামে। সুভাষপল্লি বাজার, বিধান মার্কেট, গেট বাজার, শান্তিনগর বউ বাজার, চম্পাসারি বাজার, জলপাইমোড় বাজার, তিনবাতি মোড় বাজার, হায়দরপাড়া বাজার সব জায়গায় গত তিনদিনে আলুর সঙ্গে বেড়েছে পেঁয়াজের দামও।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৯
বন্ধের দিনে হিমঘর। ধূপগুড়িতে। ছবি: রাজকুমার মোদক।

বন্ধের দিনে হিমঘর। ধূপগুড়িতে। ছবি: রাজকুমার মোদক।

উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার খুচরো বাজারে আলুর দাম কমছে না। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দামও। শিলিগুড়ির বিভিন্ন বাজারে আলু এ দিনও বিকিয়েছে চড়া দামে। সুভাষপল্লি বাজার, বিধান মার্কেট, গেট বাজার, শান্তিনগর বউ বাজার, চম্পাসারি বাজার, জলপাইমোড় বাজার, তিনবাতি মোড় বাজার, হায়দরপাড়া বাজার সব জায়গায় গত তিনদিনে আলুর সঙ্গে বেড়েছে পেঁয়াজের দামও।

কারণ কী? বিক্রেতারা বেশির ভাগই পরিষ্কার করে কারণ জানাতে পারেননি। পাইকারি বাজারের মালিকেরা দায় চাপিয়েছেন সরকারি উদ্যোগের অভাবকেই। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব দু-একদিনের মধ্যেই টাস্ক ফোর্স নামবে বলে জানালেও এদিন পর্যন্ত কোনও সরকারি কর্মীকে বাজারে টহলদারি করতে দেখা যায়নি। গৌতমবাবু বলেন, “আলু-পেঁয়াজ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। শীঘ্রই টহলদারি শুরু হবে জেলার বাজারগুলিতে। জেলা প্রশাসনগুলিকে নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে দ্রুত। তাতে দু’একদিন সময় লাগবে।”

শহরের সমস্ত বাজারকে টেক্কা দিয়ে এ দিনও ৩৮ টাকা প্রতি কেজি দামে বিক্রি হয়েছে শান্তিনগর বউবাজারে। পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকায়। কেন এই মূল্যবৃদ্ধি তা নিয়ে পরিস্কার কিছু জানাতে পারেননি স্থানীয় বিক্রেতারা। এক বিক্রেতা মহম্মদ কায়ুম বলেন, “সব জায়গায় দাম বাড়ানো হয়েছে। আমরা খবর পেয়েছি। আলুর যোগান কমে যাবে। তাই দাম বাড়ানো হয়েছে।” হঠাৎ আলু-পেঁয়াজের দাম চড়ে যাওয়ায় তিতিবিরক্ত বাজার কমিটি, ন্যায্য দামে সব্জি বিক্রির দাবি জানিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শান্তিনগর বউবাজার কমিটির সম্পাদক গণেশ দাস বলেন, “এই এলাকায় নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের বাস। এই বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ছে কেন তা খতিয়ে দেখা দরকার। এ রকম চললে আলু-পেঁয়াজ খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে।”

বিধান মার্কেটে এদিন আলুর সর্বোচ্চ ৩৪ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। পেঁয়াজ ৩৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি প্রতাপ চন্দ্র দেও দাম কেন বাড়ছে তা নিয়ে অন্ধকারে রয়েছেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, “কাঁচামালের দাম যোগানের উপর নির্ভর করে। কিন্তু এবার যোগান কম রয়েছে বলে কোনও খবর নেই। কেন দাম বাড়ছে তা বুঝতে পারছি না।”

জলপাইমোড় বাজারে আলুর দাম ঘোরাফেরা করেছে ২৪ থেকে ৩৪ এর মধ্যে। পেঁয়াজ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। সুভাষপল্লি বাজার, তিনবাত্তি মোড় বা গেটবাজারের ছবিটাও কম বেশি একই রকম। হায়দরপাড়া বাজারে জ্যোতির আলুর দাম ২২ থেকে ২৪ টাকা থাকলেও ভুটান আলু ৩০ টাকায় বিকিয়েছে। পেঁয়াজ ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকা। উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিত দাসের বক্তব্য, “হিমঘর থেকেই আলুর দাম বাড়ছে। সেখানে আগে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন। এখন আলুর বাজার শেষের দিকে। তাই হিমঘর থেকেই আলু বের করতে হচ্ছে। সেখানে নিয়ন্ত্রণ করলে আলুর দাম আয়ত্তে চলে আসবে। সেটা দেখা দরকার।” তবে রাজ্য সরকার আলুর রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে ভাল উদ্যোগ নিয়েছেন বলে তিনি মনে করছেন।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা হিমঘর থেকে আলু বার করতে সাহস পাচ্ছেন না। বাজার থেকে আলু উধাও হতে শুরু করেছে। বর্ধমান থেকে যে আলু আসত সেটারও সরবরাহ কমেছে। অভিযোগ, সেই সুযোগ কাজে লাগাতে বাড়তি দাম নিতে আসরে নেমেছে একশ্রেণির খুচরো বিক্রেতা।

এ দিকে জলপাইগুড়ি স্টেশন বাজারের খুচরো আলু বিক্রেতা ভজন মণ্ডল, বিশ্বনাথ সেন, অখিল সরকার জানান, অনেক কষ্টে আলু জোগাড় করতে হচ্ছে তাঁদের। বর্ধমান আলু ২১ টাকা কেজি দামে কিনে ২৪ টাকা কেজি দামে এবং স্থানীয় লাল হল্যান্ড আলু ২০ টাকা কেজি দামে কিনে ২৪ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ গত ২ অগস্ট পর্যন্ত ওই আলু ২০ টাকা এবং ১৮ টাকা কেজি দামে বিক্রি করেছেন।

রাজ্যে আলুর ভাল চাহিদা রয়েছে তবে কেন বাইরে পাঠানো? উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক জানান, উত্তরবঙ্গের ৫০টি হিমঘরে ১ কোটি ২৫ লক্ষ প্যাকেট আলু মজুত আছে। প্রতি প্যাকেটে ৫০ কেজি আলু আছে। উত্তরবঙ্গের মানুষ ওই আলুর ৩০ শতাংশ খেয়ে শেষ করতে পারবে না। তাঁর কথায়, সরকারকে বুঝতে হবে ৭০ শতাংশ আলু অন্য রাজ্যে না পাঠালে এখানে পচে নষ্ট হবে। ইতিমধ্যে বক্সিরহাট এলাকায় একশো গাড়ি আটকে রাখা হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের অন্যতম আলু চাষের জায়গা ধূপগুিাড়র চাষিরা কী বলছেন দেখা যাক। সেখানে খুচরো বাজারে বর্তমানে জ্যোতি আলু ২২ টাকা এবং লাল পাহাড়ি আলু ২৬ থেকে ২৮ টাকা কেজি। উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কার্তিক দাসের দাবি, “আলুর কোনও কালোবাজারি হচ্ছে না। সরকারি নিষেধাজ্ঞার জন্য ভয়ে অনেকে হিমঘর থেকে আলু বের করছেন না। সে জন্য দাম বাড়ছে। আমরা কৃষকদের থেকে ১৩ টাকা ২৫ পয়সা দরে আলু কিনেছি। হিমঘর ভাড়া-সহ কয়েকটি খরচ মিলিয়ে আমাদের কেজি প্রতি আলু ১৬ টাকা ৫৫ পয়সা পড়েছে।”

potato price hike onion price hike uttarbanga state news online news heavy problem north bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy