হিমঘরে এখনও প্রচুর মজুত। —রাজকুমার মোদক
হিমঘরে আলু রাখার শেষ সীমা ছিল বৃহস্পতিবার। শুক্রবার কোচবিহারের বেশ কিছু পাইকারি বাজারে দেখা গেল, হিমঘর থেকে বার করে আনা আলু ২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা। এই সমস্যার জন্য তাঁরা নোট বাতিলের চোটকেই দায়ি করছেন।
তাঁরা জানাচ্ছেন, হিমঘরে রাখা আলু বার করার সব থেকে ভাল সময় নভেম্বরই। কেননা, তার পরে বাজারে আস্তে আস্তে নতুন আলু চলে আসে। আলু চাষের সময়ও এখন। তার জন্য বীজ হিসেবেও আলু বার করে নিতে হয় হিমঘর থেকে। কিন্তু তার জন্য দরকার হিমঘর মালিককে যে ক’মাস আলু রাখা হয়েছে, তার ভাড়া মেটানো। কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, নভেম্বরে পুরনো পাঁচশো ও হাজারের নোট বাতিল করে দেওয়ার ফলে তাঁদের হাতে হিমঘরের ভাড়া মেটানোর টাকা ছিল না। হিমঘর মালিকেরা পরে একবার বৈঠক করে সেই নোট নিতে রাজি হলেও পরে আবার বেঁকে বসেছিলেন। তাই অনেকেই সে সময় আর আলু বার করতে পারেননি। অনেকে এই আশাতেও ছিলেন যে, টাকার জোগান স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু তা-ও হয়নি। ফোসিনের সদস্য রানা গোস্বামীর দাবি, টাকার সমস্যার জেরে হিমঘরগুলি থেকে আলু একরকম বেরোনো বন্ধ হয়ে গেলে আলোচনায় বসেন তাঁরা। তারপরে কয়েক দিন পাঁচশো ও হাজারের নোটে ব্যবসাও হয়। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
এর মধ্যে হিমঘরে আলু রাখার শেষ সীমা ছিল ৩০ নভেম্বর। পরে পরিস্থিতি দেখে সরকার সময়সীমা বা়ড়িয়ে ৮ ডিসেম্বর করে। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। তাই ৫ শতাংশ আলু এখনও উত্তরবঙ্গের হিমঘরগুলিতে রয়েছে। উত্তরবঙ্গ হিমঘর মালিক সংগঠনের সভাপতি মানিক বৈদ বলেন, ‘‘আলু রাখতে গেলে হিমঘর ঠান্ডা রাখতে হবে। বৃহস্পতিবার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে শুক্রবারও তা করা হয়েছে। কিন্তু এত খরচ কতদিন ধরে করা যাবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তা ছাড়া, নতুন সব্জির জন্য হিমঘরে জায়গাও করতে হবে।’’ দিনহাটার এক কৃষক বলেন, ‘‘হিমঘর ঠান্ডা রাখতে মালিকেরা রাজি না হলে আলু পচে যাবে। তাই বাধ্য হয়েই আলু বার করে নিতে হচ্ছে।’’ দিনহাটার এক আলু ব্যবসায়ী মালেকুল রহমান জানান, গত মার্চে কেজি প্রতি ৯ থেকে ১০ টাকা করে আলু কিনে হিমঘরে রাখেন তিনি। সেই আলু বাজারে এখন দুই টাকা কিলো বিক্রি হচ্ছে।
আলু কাহিনি
•গত মার্চে ব্যবসায়ীরা আলু কেনেন ৯-১০ টাকা কেজিতে
•৩০ নভেম্বরের মধ্যে হিমঘর থেকে সব আলু বের করে বাজারে আনার কথা
• নোট বাতিলে হিমঘরের ভাড়া দেওয়াই মুশকিল। প্রচুর আলু বের করা যায়নি
•এখনও পাঁচ শতাংশ আলু হিমঘরে
• বাজারেও বিপুল আলু, বিকোচ্ছে ২ টাকা কেজি দরে
আলু ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বাজারে খুচরো নোটের আকালের ফলে বিক্রি ভাল নয়। তার উপরে নতুন আলু চলে আসছে। নতুন আলু পাইকারি বাজারে ১২ টাকা ও খুচরো বাজারে ১৮-১৯ টাকায় বিকোচ্ছে। এর মধ্যে পুরনো আলু বিক্রি হচ্ছে না।
ফোসিনের রানাবাবু বলেন, “ঠিক যে সময় আলু বাজারে ছাড়বেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা, সেই সময়ই পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত হয়। যার জন্য চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হয়েছে সবাইকে। এখন হাজার হাজার মেট্রিক টন আলু বাজারে ফেলে দিতে হবে।”
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর, কোচবিহারে আটটি হিমঘর রয়েছে। সেখানে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন আলু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। মার্চ মাসের পর থেকেই আলু হিমঘরে রাখা শুরু হয়। জুলাইয়ের শুরু থেকে ওই আলু ফের বাজারে ছাড়া হয়। এ বারে সেই সময় আলুর দাম ভাল ছিল। প্রথম দিকে লাভের মুখ দেখেন চাষিরা। ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরবঙ্গের আলুর একটি বড় অংশ অসমে যায়। কিন্তু এ বারে অসমের বাজার অনেকটাই ধরে পঞ্জাব, হরিয়ানার আলু। অগস্টের পরে আলুর দাম খানিকটা পড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের আশা ছিল, নভেম্বরে দাম ফের উঠবে। ঠিক সেই সময় নোট বাতিলের ঘটনা ঘটায় বিপাকে পড়ে যায় তাঁরা।
মালেকুল বলেন, “এখন তো এক গাড়ি (দশ টন) আলু বিক্রি করে হিমঘরের ভাড়া এবং আনুষঙ্গিক সব খরচ তোলা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় আমরা কোথায় দাঁড়াব।” সনৎ দাস বলেন, “পঞ্চাশ কেজির বস্তা ১০০ টাকায় বিক্রি করেছি। কী করব? ঘরে আলু রাখলে সব নষ্ট হয়ে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy