Advertisement
১৭ মে ২০২৪

টাকার মুখ দেখতে ঘুমের সঙ্গে আপস

টাকার জন্য আক্ষরিক অর্থেই ঘুম ছুটেছে ফালাকাটায়। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও কপালে শিকে ছেঁড়েনি অনেকের। টাকা তুলতে পারেননি কেউ। নোট না বদলেই ঘরে ফিরতে হয়েছে কাউকে। তাই এ বার শুরু হল ব্যাঙ্কের সামনে রাত জাগা।

শীত পড়ে গিয়েছে, তার মধ্যেই রাত জেগে ব্যাঙ্কের লাইনে। নিজস্ব চিত্র।

শীত পড়ে গিয়েছে, তার মধ্যেই রাত জেগে ব্যাঙ্কের লাইনে। নিজস্ব চিত্র।

রাজকুমার মোদক
ফালাকাটা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৭
Share: Save:

টাকার জন্য আক্ষরিক অর্থেই ঘুম ছুটেছে ফালাকাটায়। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও কপালে শিকে ছেঁড়েনি অনেকের। টাকা তুলতে পারেননি কেউ। নোট না বদলেই ঘরে ফিরতে হয়েছে কাউকে। তাই এ বার শুরু হল ব্যাঙ্কের সামনে রাত জাগা।

ফালাকাটায় স্টেট ব্যাঙ্কের একটিই মাত্র শাখা। আরও দু’একটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখা থাকলেও স্টেট ব্যাঙ্কের গ্রাহক সংখ্যাই সর্বাধিক। তাই নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকেই লম্বা লাইন এখানে। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকশো গ্রাহকের মধ্যে প্রথম দিকে থাকা তিন, সাড়ে তিনশো গ্রাহক হয়ত টাকা তোলা-জমা বা বদল করতে পারছে। শেষের দিকে দেড় দু’শো গ্রাহক দিনভর লাইনে থেকেও কাজের সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সুযোগ পাচ্ছেন না। সারাদিন সময় নষ্টের পরেও কাজ না হওয়ায় ধৈর্য হারাচ্ছেন তাঁরা। মরিয়া হয়ে বুধবার থেকে ব্যাঙ্কের সামনেই রাত জাগছেন মানুষ।

এ দিন সারা রাত ঠান্ডায় খোলা আকাশের নীচে শুয়ে বসে কাটিয়েছেন অন্তত দু’শো জন।

তাঁরাই জানালেন, সারা রাত ব্যাঙ্কের সামনে নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। গভীর রাত পর্যন্ত লাগোয়া এটিএমও খোলা ছিল। সেখানেও গ্রাহকদের লম্বা লাইন। ফালাকাটা থানার আইসি বিনোদ গজমির অবশ্য বলেন, “ব্যাঙ্কের সামনে রাতে পুলিশ দাঁড়িয়ে না থাকলেও কিছুক্ষণ পর পর টহলদারি ভ্যান গিয়ে পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছিল।”

ফালাকাটা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বালাসুন্দর গ্রামের অনিল বর্মন গত চারদিন ধরে টাকা বদল করার জন্য ফালাকাটা স্টেট ব্যাঙ্কের সামনে বিশাল লাইনে দাঁড়িয়েও শেষ বেলায় ফেরত যাচ্ছিলেন। হাতের চার হাজার টাকা বদলের জন্য বুধবার দিনের বেলায়ও টাকা বদল করতে না পেরে জেদ চেপে যায়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে রাতের খাবার খেয়ে কাথা-কম্বল নিয়ে ফের স্টেট ব্যাঙ্কের সামনে চলে আসেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা নাগাদ লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “কাল রাত এগারোটা নাগাদ এসেছি। তখনও ৫০ জনের মতো লাইনে দাঁড়িয়ে। তড়িঘড়ি তাঁদের পিছনেই দাঁড়িয়ে পড়ি। বস্তা বিছিয়ে কাথা গায়ে জড়িয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে কোনও রকমে রাত কাটিয়েছি। যাতে সকাল সকাল টাকা বদলানো যায়। ’’

কয়েক দিন ধরে ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়ে এ ভাবেই রাতে স্টেট ব্যাঙ্কের সামনে গায়ে কাথা-কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে ছিলেন ফালাকাটা থেকে ৭ কিলোমিটার দূরের হরিনাথপুর গ্রামের অরুন দাস। তিনি বলেন, “বাড়িতে অসুস্থ রোগী। টাকার চিন্তায় রাতের ঘুম চলে গিয়েছে। ক’দিন ধরে সকালে মানুষের লাইন ব্যাঙ্কের সীমানা ছাড়িয়ে চলে গিয়েছে জাতীয় সড়ক পর্যন্ত। ব্যাঙ্কের দরজায় পৌঁছতেই সময় শেষ। খালি হাতে ফিরতে হওয়ায় এ বার রাত থেকে লাইনে। সারা জীবন এমন রাতের কথা ভুলব না।”

শুধু ফালাকাটা কেন। ফালাকাটা স্টেট ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে লাগোয়া কোচবিহার জেলার মাথাভাঙা ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের অনেক মানুষের। তাঁরাও রাত থেকে লাইনে সামিল। মাথাভাঙার ফুলবাড়ি গ্রামের বিশ্বজিৎ রায় বললেন, ‘‘চাষের জন্য টাকার খুব দরকার। জমিতে আলু রোপন করতে না পারলে সারা বছর খাব কি? তাই রাত জেগে টাকার জন্য পড়ে রইলাম।’’

তবে জানা গিয়েছে রাত থেকে লাইন দিয়েছিলেন যাঁরা তাঁদের সবাই এ দিন সারতে পেরেছেন ব্যাঙ্কের কাজ। কিন্তু যাঁরা একটু বেলা করে প্রায় চার’শ গ্রাহকের পিছনে লাইন দিয়েছেন তাঁদের ফিরতে হয়েছে খালি হাতেই। ফালাকাটা স্টেট ব্যাঙ্কের ভিড় সামলাতে ডাকা হয়েছে এসএসবি-র জওয়ানদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Banks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE