Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ভিএইচপির সভা নিয়ে উত্তাল রায়গঞ্জ, বন্‌ধের ডাক

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) সভা নিয়ে রবিবার দিনভর উত্তাল হয়ে রইল রায়গঞ্জ। সোমবার উত্তর দিনাজপুর বন্‌ধের ডাক দেওয়া হয়েছে। এদিন সকাল ১০টা থেকে রায়গঞ্জের এমজি রোড লাগোয়া বিজেপির জেলা কার্যালয়ের পাশের ভিএইচপি কার্যালয়ে সদস্যদের ভিড় বাড়তে থাকে। কার্যালয় থেকে মিছিল করে তাঁরা যাতে মার্চেন্ট ক্লাব ময়দানের দিকে যেতে না পারেন, তার জন্য বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনশোরও বেশি পুলিশ এমজি রোডের ধারে ভিএইচপির কার্যালয়ের যাওয়ার রাস্তা আটকে ব্যারিকেড তৈরি করে।

১৪৪ ধারা অমান্য করেই জমায়েত ভিএইচপির। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

১৪৪ ধারা অমান্য করেই জমায়েত ভিএইচপির। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০১
Share: Save:

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) সভা নিয়ে রবিবার দিনভর উত্তাল হয়ে রইল রায়গঞ্জ। সোমবার উত্তর দিনাজপুর বন্‌ধের ডাক দেওয়া হয়েছে।

এদিন সকাল ১০টা থেকে রায়গঞ্জের এমজি রোড লাগোয়া বিজেপির জেলা কার্যালয়ের পাশের ভিএইচপি কার্যালয়ে সদস্যদের ভিড় বাড়তে থাকে। কার্যালয় থেকে মিছিল করে তাঁরা যাতে মার্চেন্ট ক্লাব ময়দানের দিকে যেতে না পারেন, তার জন্য বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনশোরও বেশি পুলিশ এমজি রোডের ধারে ভিএইচপির কার্যালয়ের যাওয়ার রাস্তা আটকে ব্যারিকেড তৈরি করে। বেলা ১২টা নাগাদ রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ বাহিনী কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে রায়গঞ্জের রেলস্টেশন এলাকা, সুভাষগঞ্জ রোড, নাগর রোড, কর্ণজোড়া, মোহনবাটী ও হাসপাতাল রোড সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ জন ভিএইচপি সদস্যকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। অভিযোগ, ভিএইচপি সমর্থকেরা মিছিল করে ময়দানে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

ভিএইচপি সূত্রে খবর, দুপুর একটা নাগাদ ভিএইচপি সদস্যরা কার্যালয় চত্বরে বসে বৈঠক করে জোর করে মাঠে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় ওই কার্যালয় চত্বরে প্রায় ৭০০ ভিএইচপি সদস্য সংগঠনের পতাকা, ব্যানার ও ফ্লেক্স নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় ভিএইচপির সদস্যদের উপর লাঠি চালিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করেছে। দেড়টা নাগাদ ভিএইচপি সমর্থকেরা মিছিল করে কার্যালয় থেকে বেরোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে গাড়িতে তুলতে শুরু করে। কিন্তু গাড়ির অভাবে ভিএইচপির কয়েকশো সদস্যকে গ্রেফতার করতে পুলিশের কালঘাম ছোটে। পুলিশকর্মীরা এমজি রোড দিয়ে যাওয়া একাধিক খালি বেসরকারি বাস ও ট্রেকার থামিয়ে তাতেই ভিএইচপির সদস্যদের তুলতে বাধ্য হয়।

কিন্তু ভিএইচপির ধৃত সদস্যদের এমজি রোড থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে কর্ণজোড়া পুলিশ লাইনের মাঠে নামিয়ে পুলিশের গাড়ি ফিরে আসতে অনেক সময় লেগে যায়। এরই মধ্যে দুপুর সওয়া দু’টো নাগাদ মার্চেন্ট ক্লাব ময়দানে একদল ভিএইচপি সদস্য পুলিশের সামনেই জোর করে ঢুকে অসমাপ্ত মঞ্চে সংগঠনের পতাকা লাগিয়ে সভা শুরু করতে শুরু করে দেন। পুলিশকর্মীরা একাধিক প্রিজনভ্যান নিয়ে দুপুর আড়াইটে নাগাদ ওই ময়দানে পৌঁছন। তখন অবশ্য সভা শুরু হওয়ার আধঘন্টা সময় পেরিয়ে গিয়েছে। পুলিশ ময়দানে গিয়ে ভিএইচপির কয়েকশো সদস্যকে গ্রেফতার করে সেই কর্ণজোড়া পুলিশ লাইনের মাঠে নিয়ে যায়। কিন্তু এরপর দুপুর তিনটে নাগাদ ফের শতাধিক ভিএইচপি সদস্য ওই ময়দানে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠি উচিয়ে তাড়া করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে হটিয়ে দেয়।

এদিন সকাল থেকেই কখনও রায়গঞ্জ থানায় বসে, আবার কখনও ভিএইচপি কার্যালয়ের সামনে ও মার্চেন্ট ক্লাব ময়দানে গিয়ে পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছিলেন রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি জ্ঞানবন্ত সিংহ ও মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি সত্যজিৎবাবু সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সত্যজিৎবাবুকে ভিএইচপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে পুলিশকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বলতে শোনা যায়, ভিএইচপির কার্যালয়ে ঢুকে কাউকে গ্রেফতার যেন না করা হয়। একমাত্র তাঁরা মিছিল করে বার হলেই যেন তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার হওয়ার পর ভিএইচপি সদস্যদের দুপুরের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেন বিজেপির নেতা কর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সত্যজিৎবাবু ভিএইচপির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে পুলিশকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, কোনও পুলিশকর্মী যাতে ভিএইচপির কার্যালয়ে ঢুকে কাউকে গ্রেফতার না করে। একমাত্র তাঁরা মিছিল করে বার হলেই যেন তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।

বিকাল চারটে নাগাদ ভিএইচপি কার্যালয়ে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করে সংগঠনের কলকাতা ক্ষেত্রের সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহ ও এদিনের সভার কার্যকর্তা বিজয়কৃষ্ণ তালুকদার বলেন, ‘‘আদালত আমাদের সভা করার পক্ষে মত দিয়েছিল। কিন্তু রায়গঞ্জের মহকুমাশাসক বিপুলকুমার বিশ্বাস আদালতের ঊর্ধ্বে উঠে মার্চেন্ট ক্লাব ময়দানে ১৪৪ ধারা জারি করেন। তাই আমরা ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে সভা করিনি বলেই মনে করি। তা ছাড়া, পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে বলেই ভিএইচপি সদস্যরা ওই ময়দানে ঢুকে সভা করতে পেরেছেন।’’ তাঁদের দাবি, ‘‘রাজ্য সরকার ও প্রশাসন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত নির্দেশে বেআইনিভাবে আমাদের সভা বানচালের চেষ্টা করে। ভিএইচপি সমর্থকদের উপর লাঠিচার্জ করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’’ তাঁদের দাবি, এদিন পুলিশ তাঁদের তিন হাজার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE