গরম বাড়তে শুরু করেছে চৈত্রে। তার সঙ্গেই বেড়ে গিয়েছে জলকষ্ট। আগে যে বাড়িতে এক জার জলের প্রয়োজন হত, এখন সেখানে দ্বিগুণেরও বেশি লাগছে। তা নিয়েই বাড়তে শুরু করেছে ক্ষোভ। সোমবার পানীয় জলের কষ্টের কথা জানিয়ে রাস্তা অবরোধে নেমেএলেন মানুষ।
সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ কোচবিহারের হরিণচওড়ায় কোচবিহার-দিনহাটা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে নামেন বাসিন্দারা। তাতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নিত্যযাত্রীদের। বাসিন্দারা জানান, এলাকায় পানীয় জল সংগ্রহের জন্য একটি মাত্র কল রয়েছে। সেখানে উপচে পড়ে ভিড়। তার মধ্যে গত ছ’মাস ধরে সে জলে দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে, তা পানের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। রমজান মাসে প্রায় এক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বাসিন্দাদেরকয়েকজনের কথায়, ‘‘জানি মানুষের সমস্যা হল। কিন্তু আমরা তো বহুদিন ধরে জলকষ্টে ভুগছি। সকলের কাছে গিয়েছি। কেউ গুরুত্ব দেয়নি।’’ শুধু ওই এলাকা নয়, পানীয় জল নিয়ে এমন সমস্যা বহু জায়গায়।
জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, জলস্বপ্ন প্রকল্পে কোচবিহার জেলায় ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তাতে গ্রামীণ এলাকায় ২০২৪ সালের মধ্যে সাত লক্ষ ২০ হাজার বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হবে। এখনও পর্যন্ত দুই লক্ষ ২০ হাজার বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আরও পাঁচ লক্ষ বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হবে। তার মধ্যে বেশ কিছু এলাকায় পাইপ লাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি উমাকান্ত বর্মণ বলেন, ‘‘পানীয় জলের সমস্যা কিছু জায়গায় রয়েছে। তা মেটাতে জোরকদমে কাজ চলছে। নতুন জলাধার তৈরি হচ্ছে। পাইপ লাইন হচ্ছে। এর পরেই বাড়িতে বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, অল্প সময়ে সমস্যা মিটবে।’’ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক সুব্রত ধর বলেন, ‘‘ওই প্রকল্পের কাজ চলছে। নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হবে।’’
পানীয় জল নিয়ে সমস্যা শুধু গ্রামীণ এলাকায় নয়, শহরেও বেশ কিছু মানুষ জলকষ্টে ভুগছেন। কোচবিহার জেলা শহরে এখনও সব এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ হয়নি। বেশ কিছু এলাকায় পানীয় জলের গতি খুবই শ্লথ। কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, এ বার পুর-বাজেটে পানীয় জল প্রকল্পে ১১ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। ৬৯ কিলোমিটার নতুন পাইপ লাইন বসবে। তোর্সার পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্পে সাড়ে সাত হাজার বাড়িতে নতুন সংযোগ দেওয়া হবে।
এ দিন হরিণচওড়ার যে জায়গায় অবরোধ হয়েছে তা শহর থেকে চার কিলোমিটারের মধ্যে। ওই এলাকার বাসিন্দা আমিনা বিবি বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় কারও বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ নেই। গোটা এলাকায় একটি মাত্র কল। শতাধিক পরিবার ওই কলের উপরে নির্ভরশীল। ছ’মাস ধরেকলের জলে দুর্গন্ধ। বার বার গ্রাম পঞ্চায়েতে জানিয়েও লাভ হয়নি।’’ কোচবিহার জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ সুচিস্মিতা দেবশর্মা বলেন, ‘‘ওই এলাকার পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)