Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ট্রেকারের রেষারেষিতে মৃত ৫

দুটি যাত্রী বোঝাই ট্রেকারের রেষারেষিতে মৃত্যু হল এক ট্রেকার চালক সহ পাঁচ যাত্রীর। গুরুতর জখম আরও তিন যাত্রীর চিকিৎসা চলছে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরও পাঁচ জন। মঙ্গলবার সকাল পৌনে দশটা নাগাদ আলিপুরদুয়ার জেলার বারবিশা-কুমারগ্রাম রাজ্য সড়কের ঘোড়ামারা এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

বারবিশা-কুমারগ্রাম রাজ্য সড়কে দুর্ঘটনার পরে গাড়িটির অবস্থা।

বারবিশা-কুমারগ্রাম রাজ্য সড়কে দুর্ঘটনার পরে গাড়িটির অবস্থা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শামুকতলা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০২:০৬
Share: Save:

দুটি যাত্রী বোঝাই ট্রেকারের রেষারেষিতে মৃত্যু হল এক ট্রেকার চালক সহ পাঁচ যাত্রীর। গুরুতর জখম আরও তিন যাত্রীর চিকিৎসা চলছে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরও পাঁচ জন। মঙ্গলবার সকাল পৌনে দশটা নাগাদ আলিপুরদুয়ার জেলার বারবিশা-কুমারগ্রাম রাজ্য সড়কের ঘোড়ামারা এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

জানা গিয়েছে, যাত্রীদের অধিকাংশই আধার কার্ডের ছবি তুলতে এদিন সকালে ট্রেকারে চেপে কুমারগ্রাম বিডিও অফিসে যাচ্ছিলেন। পুলিশ জানায়, দুটি ট্রেকার যাত্রী বোঝাই করে কামাখ্যাগুড়ি থেকে কুমারগ্রাম রওনা দেয়। বারবিশার পর থেকে যাত্রী তোলা নিয়ে ওই ট্রেকার দু’টির মধ্যে রীতিমত রেষারেষি শুরু হয়। দু’টি ট্রেকারেই ঠাসাঠাসি করে ১৪/১৫ জন যাত্রীকে তোলা হয়েছিল। তবুও আরও যাত্রী তোলার জন্য তীব্র গতিতে একটি ট্রেকার অন্যটিকে অতিক্রম করার সময় উলটো দিক থেকে আসা পাথর বোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় দুই যুবকের। গুরুতর জখম ছয় যাত্রী কে কামাখ্যাগুড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।

বাকি পাঁচজন কে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে ওই ট্রেকারের চালক এবং এক মহিলা যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর জখম অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিন যাত্রী।

হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা চলছে।

মৃতদের নাম দীপঙ্কর সরকার(২৪), জুরেন্দ্র নাথ রায়(৭০), তাঁর নাতি কৃষ্ণ রায়(২২), রহিমা বেওয়া(৫৫) ও ট্রেকারের চালক মকসেদুল ইসলাম(৩০)। জানা গিয়েছে, দীপঙ্কর সরকার নামে ওই যুবকের বাবা নেই। মা অনিতাদেবী কে নিয়ে অসমের লখিমপুরে থেকে দিন মজুরির কাজ করেন। কয়েক দিন আগে আধার কার্ডের ছবি তোলার জন্য কুমারগ্রামের পূর্বনারারথলি গ্রামে নিজেদের বাড়িতে ফেরেন তাঁরা। মা-কে সঙ্গে নিয়েই এদিন আধার কার্ডের ছবি তুলতে কুমারগ্রাম বিডিও অফিসে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় সামান্য আহত হয়েছেন অনিতাদেবী। চোখের সামনে একমাত্র ছেলের মৃত্যু দেখে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। স্বামীর মৃত্যু পর এক মাত্র ছেলেকে আঁকড়ে বেঁচে ছিলেন। এখন কি করবেন, সেই হাহাকারই করছিলেন তিনি।

পূর্ব নারার থলি গ্রামের যুবক কৃষ্ণ রায়, আধার কার্ডের ছবি তোলানোর জন্য দাদু জুরেন্দ্র নাথ রায়কে নিয়ে বিডিও অফিসে যাচ্ছিলেন। এদিনের পথ দুর্ঘটনায় দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে। বারবিশা থেকে কুমারগ্রামের পুখুরিগ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন রহিমা বেওয়া। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে মৃত্যু হয় রহিমা এবং ট্রেকারের চালক মকসেদুল ইসলামের।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু কুমারগ্রাম নয় আলিপুরদুয়ার জেলা জুড়ে ট্রেকার অটোরিক্সা এবং বাস গুলি অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বেপরোয়া ভাবে যাতায়াত করলেও এর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না প্রসাশন। তাঁদের অভিযোগ এক শ্রেণীর পুলিশের সঙ্গে গাড়ি চালকদের গোপন বোঝাপড়া থাকায় এই অনিয়ম চলছেই।

আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসু বলেন, ‘‘পুলিশ ও গাড়ি চালকদের বোঝাপড়া না থাকলে এমন অনিয়ম ঘটতে পারে না। এর বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই ডিএম এবং এসপির কাছে দাবিপত্র দেওয়া হবে।’’

এদিনের দুর্ঘটনার পরেই পালিয়ে যায় ট্রাক চালক।

ছবি: রাজু সাহা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE