রয়্যাল কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ায় ওই সংস্থার ব্যবসার বাড়বাড়ন্তের দায় নিয়ে রীতিমতো তরজায় জড়ালেন শাসক ও বিরোধী শিবিবের নেতারা। লগ্নিসংস্থাটি নিয়ে সিবিআই তদন্ত শুরুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর প্রথম রবিবাসরীয় ভোট প্রচারে অন্য সব বিষয়ের সঙ্গে ডান-বাম দুই শিবিরের নেতাদের বক্তব্যেই রয়্যাল প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।
এ দিন কোচবিহারে বাড়ি বাড়ি ভোট প্রচারের ফাঁকে বামেদের নির্বাচনী ক্যাম্প অফিসে বসে বিষয়টি নিয়ে শাসকদলকে কাঠগড়ায় তুলে সমালোচনা করেন ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ। উদয়নবাবুর ওই বক্তব্যের আধঘণ্টার মধ্যে রয়্যাল কাণ্ডে বামেদের দায়ী করে প্রচার কর্মসূচির মধ্যেই পাল্টা অভিযোগ তোলেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষও। কংগ্রেস, বিজেপিও প্রচারে রয়্যাল-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরানোর দাবি জানায়। সব মিলিয়ে রবিবাসরীয় পুরভোট প্রচারে নাগরিক পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে রয়্যাল কাণ্ড জুড়ে নয়া মাত্রা যোগ করেছে। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে চান্দামারির মৃত্যুঞ্জয় সরকার সংস্থাটি গড়ে তোলেন। কম সময়ে টাকা দ্বিগুণ করে ফেরানর টোপ দিয়ে বাজার থেকে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়। সংস্থার দাবি, ২০১৩ সালে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি সিবিআই সংস্থার অফিস ও এক কর্তার বাড়িতে অভিযান চালায়। তার পর থেকেই রয়্যাল-কাণ্ড নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে কোচবিহারের প্রচার।
রবিবার সকালে কোচবিহার পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী তপন ঘোষের সমর্থনে প্রচার কর্মসূচিতে যোগ দেন ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ। ভোটারদের মন পেতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচার চালান। প্রচারের ফাঁকে বামেদের নির্বাচনী ক্যাম্প অফিসে উদয়নবাবু বলেন, “লগ্নি সংস্থার মালিকেরা ১০০ টাকা তুললে তা থেকে ৭০ টাকা শাসক দলের নেতাদের কাছে গিয়েছে। তাই তদন্ত করে দোষী নেতাদের গ্রেফতার করে তাঁদের সম্পত্তি ক্রোক করে আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে হবে। রয়্যাল শুধু নয় সব সংস্থা নিয়েই সিবিআই তদন্ত দরকার।” সেইসঙ্গে উদয়নবাবুর সংযোজন, ‘‘রয়্যালের কাঁঠাল যারা ভেঙে খেয়েছেন তাঁদের শাস্তি হওয়া দরকার। তা তিনি যিনিই হোন। শাসকদলের নেতা, প্রশাসনের কর্তা কিংবা অতীতে কোনও দায়িত্বে থেকে থাকুন না কেন। দোষীদের ধরা হোক।’’
কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষও এ দিন সকালে ২ নম্বর ওয়ার্ডে সমর্থকদের নিয়ে পদযাত্রায় যোগ দেন। মিছিলের ঢঙে এলাকা পরিক্রমা করার পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়েও দলের প্রার্থী মীনা তরকে ভোট দেওয়ার আর্জি জানান। ওই প্রচারসূচির মধ্যেই রয়্যাল নিয়ে রবীন্দ্রনাথবাবু বামেদের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। তিনি পাল্টা বলেন, “রাজ্যে বামফ্রন্ট আমলে এই ধরনের সমস্ত অর্থলগ্নি সংস্থার জন্ম হয়েছে। বামেদের মদতে মানুষের টাকা লুঠের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কাদের দলের লোকেরা এজেন্ট ছিল তাও সবাই জানেন। সেই অর্থে উদয়নবাবু তাই ঠিকই বলেছেন, সেসময়কার শাসকদল বামেদের পকেটেই ওই ৭০ শতাংশ টাকা গিয়েছে! ওই টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের ফেরানো হোক সেটা আমরাই চাইছি।”
বিজেপি অবশ্য বিঁধেছে দু’দলকেই। বিজেপির নিখিলরঞ্জন দে, কুমার রাজীব নারায়ণ প্রমুখরাও রবিবারে জোরদার প্রচার চালান। রাজীববাবুর প্রচার কর্মসূচিতে ঢাক-ঢোল ছিল নজরকাড়া। কোচবিহার পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী তথা দলের জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “আমার নির্বাচনী ওয়ার্ডেই শতাধিক বাসিন্দা রয়্যালে টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন। গোটা পুর এলাকায় ওই সংখ্যা কয়েক হাজার। বাম আমলে জন্ম হলেও, তৃণমূল আমলে তাদের লালন পালন হয়েছে। তাই দুই শিবিরই সমান দোষী।” কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী এ দিন একাধিক ওয়ার্ডে প্রচার চালান। শ্যামলবাবু বলেন, “সিবিআই তদন্তেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। শাসক বা বিরোধী বুঝিনা, যে টাকা খেয়েছে তারই শাস্তি হওয়া দরকার।”