Advertisement
E-Paper

মিড ডে মিলে রোজ খিচুড়ি, সইবে তো!

একেই বরাদ্দ নামমাত্র। তার উপরে টানা বৃষ্টিতে শাক-সব্জির বাজার চড়া। জ্বালানিও বাড়ন্ত। কাঠের দামও বেড়ে গিয়েছে। শুকনো কাঠ মেলাই মুশকিল। অতএব, উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার স্কুলের মিড ডে মিলের মেনুই পাল্টে গিয়েছে।

অনুপরতন মোহান্ত

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০২:১১
পড়ুয়ার জন্য মিড ডে মিল

পড়ুয়ার জন্য মিড ডে মিল

একেই বরাদ্দ নামমাত্র। তার উপরে টানা বৃষ্টিতে শাক-সব্জির বাজার চড়া। জ্বালানিও বাড়ন্ত। কাঠের দামও বেড়ে গিয়েছে। শুকনো কাঠ মেলাই মুশকিল। অতএব, উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার স্কুলের মিড ডে মিলের মেনুই পাল্টে গিয়েছে।

সোম বা শুক্র যে দিন-ই হোক না কেন, স্কুলের মিড ডে মিলের রান্নাঘর মুসুরির ডালের খিচুড়ির গন্ধে ম-ম করছে। ডিম, সয়াবিন পাতেই পড়ছে না। বাধ্য হয়েই স্কুলের অভিভাবকরা অনেক এলাকায় প্রধান শিক্ষককে গিয়ে অভিযোগ করেছেন, ‘‘রোজ রোজ খিচুড়ি খাওয়াচ্ছেন, বাচ্চাগুলোর পেটে সইবে না।’’ প্রধান শিক্ষকের বাঁধা উত্তর, ‘‘আলু থেকে শাক-সব্জির দামে আগুন। বরাদ্দে কুলোচ্ছে না।’’

জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া একটি স্কুলের ঘটনা। জেলার প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শককে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফোনে বর্ষায় মিড মে মিল সমস্যা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। তবু খিচুড়ি রান্না চলছেই বহু জায়গায়।

সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, সপ্তাহে দু’দিন করে সোয়াবিন-আলু, ভাত এবং খিচুড়ি অথবা ডাল-আলুভাতে মিড ডে মিলের মেনুতে থাকবে। একদিন খাওয়াতে হবে আলু দিয়ে রান্না করা ডিমের ঝোল-ভাত এবং আরেক দিন সব্জি-ভাত। তবে যে সে সব্জি রান্না করলে চলবে না। শাক-পাতাওয়ালা সব্জি (লিফি-ভেজিটেবল) খাওয়াতে হবে। অর্থাৎ শুধু স্কোয়াশের ঝোল রান্না করা যাবে না, বাঁধাকপি, ফুলকপির মতো মরসুমি সব্জি চাই। প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশের দাবি, সমস্যা তৈরি হয়েছে সেখানেই। মেনুতে যে বহর দেওয়া হয়েছে এবং তার জন্য যে দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে বর্ষাকালের বাজারের সমন্বয় নেই। ফলে অনেক স্কুলপড়ুয়ার মেনু থেকেই ডিম-আলু-সব্জি বিদায় নিয়েছে, পাতে গড়াচ্ছে মসুরির ডালের খিচুড়ি।

সমস্যা কোথায়?

দক্ষিণ দিনাজপুরে নাগাড়ে বৃষ্টি চলছে না। তবে বাজার দর চড়া। জেলার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানালেন, পড়ুয়া পিছু মিলের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৩ টাকা ৮৬ পয়সা। এই বরাদ্দে জ্বালানি কাঠের দামও ধরা থাকে। এখন বেশিরভাগ প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা গড়ে ৪০ জন করে। এর ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৩২ জন পড়ুয়ার জন্য স্কুলগুলিকে মিড ডে মিল রান্নার টাকা দেওয়া হয়। মাসে গড়ে ২১ দিন রান্নার হিসাবে প্রায় ২৬০০ টাকা। এর মধ্যে জ্বালানি কাঠ কিনতে অন্তত ৫০০ টাকা খরচ হয়ে যায়। মাস চালাতে হয় বাকি ২১০০ টাকা দিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘টেনেটুনে তাও চলে যেত। কিন্তু ১৫ টাকা দরের আলু এখন মিলছে ২৫ টাকা। কুমড়ো, ঝিঙে, পটলের মতো সব্জির দামও দ্বিগুণ।’’ ওই জেলারই বাম শিক্ষক সংগঠনের নেতা রঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘‘অন্তত বর্ষার সময়ে মিড ডে মিলের বরাদ্দ বাড়ানো উচিত সরকারের। না হলে পড়ুয়াদেরই পুষ্টি বাকি পড়ছে।’’

গত কয়েক দিন ধরে গঙ্গারামপুরের চালুন হাইস্কুলে ডাটা শাকের ঝোল দিয়েই পড়ুয়াদের ভাত দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। গত বুধবার পড়ুয়ারা স্কুলের সামনের রাস্তা প্রায় দু’ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। কোচবিহারের একটি স্কুলে মিড ডে মিলের রান্না দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। গত মঙ্গলবার মন্ত্রী কোচবিহারের টাকাগছ বাঁধেরপাড় শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন, পড়ুয়াদের থালায় পাতলা ডাল এবং নামমাত্র আলুর সব্জি। তিনি শিক্ষকদের ডেকে বলেন, ‘‘এ সব কী খাওয়াচ্ছেন? যে ভাবেই হোক, খাওয়ারের মান বাড়ানোর চেষ্টা করুন।’’

কোচবিহারেও মিড ডে মিলে থাকছে আলু কিংবা সয়াবিন। তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষা সেলের কোচবিহার জেলা আহ্বায়ক পার্থপ্রতিম রায় জানান, ‘‘প্রাথমিক স্তরে জুলাই থেকে পড়ুয়া প্রতি ৪.১৩ টাকা ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরে ৬.১৮ টাকা অনুমোদন হয়েছে। ৭% বরাদ্দ বেড়েছে। বন্যায় সব্জির দাম বেড়ে যাওয়ায় সাময়িক কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানো দরকার।’’

মালদহে চলতি মাস থেকে প্রথম-পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ হচ্ছে মাথা পিছু ৪ টাকা ১৬ পয়সা ও ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির জন্য ৬ টাকা ১৮ পয়সা। কিন্তু জেলার বিভিন্ন প্রাইমারি ও হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তাঁরা এখনও নতুন ওই রেট পাননি। তাঁরা প্রাথমিক বিভাগের জন্য ৩ টাকা ৭৮ পয়সা ও ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির জন্য ৫ টাকা ৭৮ পয়সা দরেই মিড ডে মিল খাওয়াচ্ছেন। হবিবপুর ব্লকের সিংহাবাদ তিলাসন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মানব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে ৫০০ ছাত্রছাত্রীর মিড ডে মিল রান্না হলে দু’টি সিলিন্ডারে মাত্র তিন দিন যায়, সেখানে ২৫ দিন রান্না করতে যতগুলি সিলিন্ডার প্রয়োজন, তা মিলছে না।’’ পুরাতন মালদহ ব্লকের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তনয় মিশ্রও বলেন, ‘‘সব্জির দাম বেড়ে যাওয়ায়, মিড ডে মিল নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।’’ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান দিলীপ দেবনাথ অবশ্য বলেন, ‘‘গত কয়েকদিন ধরে আমি বেশ কয়েকটি প্রাইমারি স্কুল পরিদর্শন করেছি, কিন্তু মিড ডে মিল নিয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি।’’

সহ-প্রতিবেদন: অরিন্দম সাহা, সব্যসাচী ঘোষ, অভিজিৎ সাহা।

Mid-day meal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy