Advertisement
E-Paper

‘লজ্জা’য় বাড়ি যেতে হবে না, স্বস্তি ছাত্রীদের

ঋতুচক্র চলাকালীন ছাত্রীদের অনেকেই শিক্ষিকাদের কাছে তা চাইতে লজ্জ্বা পেত। অনেকে পেট ব্যথা বলে ‘ছুটি’ চাইত। আবার কেউ চেয়েও নিত। কিন্তু ন্যাপকিন ফুরিয়ে গেলে ছাত্রীকে ছুটিও দিতে হত।

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ০৮:২০
তৈরি যন্ত্র: এই সেই ভেন্ডিং মেশিন। নিজস্ব চিত্র

তৈরি যন্ত্র: এই সেই ভেন্ডিং মেশিন। নিজস্ব চিত্র

মাস পাঁচেক আগের ঘটনা। অষ্টম শ্রেণির ঘরে তখন ক্লাস চলছে। পিছনের বেঞ্চে অনেকক্ষণ ধরে এক ছাত্রী উসখুস করছিল। শিক্ষিকা তার কাছে গিয়ে দেখেন, মেয়েটির স্কার্ট রক্তে ভিজে গিয়েছে। একঘর সহপাঠীর মধ্যে ছাত্রীটির মুখ তখন কাঁচুমাচু অবস্থা।

শিক্ষিকা বুঝতে পারেন, মেয়েটির ঋতুচক্র শুরু হয়েছে। তড়িঘড়ি স্টাফরুমে গিয়ে বিষয়টি জানান। দোকান থেকে ন্যাপকিন কিনে এনে ওই ছাত্রীটিকে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও সে ন্যাপকিনটা নিয়ে চাইছিল না। অনেক বুঝিয়ে শিক্ষিকারা তাকে রাজি করান। কোচবিহার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ঘটনা। সে দিনের কথা মনে করে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নবনীতা শিকদার বলেন, ‘‘ওই ঘটনা আমাদের ভীষণ নাড়া দেয়। একটা ভেন্ডিং মেশিন থাকলে মেয়েটি নিঃসঙ্কোচে ন্যাপকিন নিতে পারত।’’ তাঁর স্কুলে স্যানিটারি ন্যাপকিন মজুত থাকে মেয়েদের জন্য। কিন্তু লজ্জায় অনেকেই তা কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে নিতে চাইত না।

ঋতুচক্র চলাকালীন ছাত্রীদের অনেকেই শিক্ষিকাদের কাছে তা চাইতে লজ্জ্বা পেত। অনেকে পেট ব্যথা বলে ‘ছুটি’ চাইত। আবার কেউ চেয়েও নিত। কিন্তু ন্যাপকিন ফুরিয়ে গেলে ছাত্রীকে ছুটিও দিতে হত। শিক্ষিকারাই তখন একটা ভেন্ডিং মেশিনের অভাব বোধ করছিলেন। কী ভাবে কেনা যায় তা নিয়ে আলোচনাও চলছিল। ইতিমধ্যে স্কুলের সদ্য অবসর নেওয়া শিক্ষিকা ধরিত্রী দেবনাথ স্কুলের উন্নয়নে এক লক্ষ টাকা দেন। ওই টাকা ছাত্রীদের সরাসরি কাজে লাগে এমন কিছু করার ইচ্ছের কথাও তিনি কর্তৃপক্ষকে জানান। এর পরেই স্কুল থেকে ধরিত্রীর টাকায় ভেন্ডিং মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত হয়। তাতে সায়ও দেন তিনি। স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে, ধরিত্রী অবিবাহিত। স্কুলে থাকতে ছাত্রীদের সঙ্গে মিশে যেতেন। সেই ভালবাসা থেকেই অবসরের পর নিজের সঞ্চয় থেকে এক লক্ষ টাকা স্কুলকে দান করেন তিনি। ধরিত্রীর কথায়, ‘‘মেয়েদের ওই বয়সে সমস্যা হয়। আমার টাকাটা ওদের ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন কেনার জন্য খরচের প্রস্তাব শুনে সায় দিয়েছি।” স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে, মেশিনে একসঙ্গে ৩৫টি ন্যাপকিন থাকবে। পাঁচ টাকার কয়েন ফেললেই ন্যাপকিন বেরিয়ে আসবে।

ঋতুচক্রের সময় সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে মেয়েদের আড়ষ্টতা কাটাতে সম্প্রতি ওই স্কুলে ‘প্যাডম্যান’ দেখানো হয়। ছাত্রী তমালিকা মণ্ডলের কথায়, ‘‘ম্যাডামরা বরাবর পাশে থেকেছেন। প্যাডম্যান দেখেছি। আড়ষ্টতা অনেক কেটেছে। তবু সবটা মেটেনি। মেশিনে সেটাও ঘুচবে।’’ সহকারি প্রধান শিক্ষিকা পারিজাত মজুমদার জানান, মেয়েদের সকলের দারুণ সুবিধে হবে। উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহাও। তিনি বলেন, “ভীষণ ভাল উদ্যোগ। এতে অন্য স্কুলগুলিও উৎসাহিত হবে।”

Napkin Vending machine School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy