টোপ: জলপাইগুড়ির মণ্ডলঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রহ্মতল পাড়ায় চিতাবাঘের আতঙ্কের জেরে খাঁচা বসাল বন দফতর। ছবি: সন্দীপ পাল
টোপ: জলপাইগুড়ির মণ্ডলঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রহ্মতল পাড়ায় চিতাবাঘের আতঙ্কের জেরে খাঁচা বসাল বন দফতর। ছবি: সন্দীপ পালজোড়া চিতাবাঘের আতঙ্কে কাঁপছে গোটা এলাকা। রাতে বাড়ির বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন জলপাইগুড়ির মণ্ডলঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রহ্মতল পাড়ার বাসিন্দারা। বন দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন গ্রামবাসীরা।
শহর থেকে দূরে প্রত্যন্ত ওই এলাকায় রাত হলে এমনিতেই একটা গা ছমছমে ব্যাপার থাকে। এর মধ্যে চিতাবাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় ভয়টা যেন আরও জাঁকিয়ে বসেছে। বাসিন্দাদের দাবি, প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে শুরু হয়েছে এই উৎপাত। এলাকার চাষের জমিতে বেঁধে রাখা ছাগল সন্ধে নামলেই উধাও হয়ে যাচ্ছে। পড়ে থাকছে শুধুই তার দেহাবশেষ। প্রথম দিকে স্থানীয়েরা তেমন একটা আমল দেননি বিষয়টিতে। ভেবেছিলেন শেয়াল বা ভামের মতো কোনও জন্তুর কাণ্ড হবে। কিন্তু গত দু’দিনে এই অত্যাচারের মাত্রা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে জানালেন গ্রামবাসীরা।
গত মঙ্গলবার একসঙ্গে দু’টি ছাগল এবং দু’টি বাড়ির পোষা কুকুর উধাও হয়ে যাওয়ায় আতঙ্ক বাড়তে শুরু করে গ্রামবাসীদের মধ্যে। অবশ্য সেদিন রাতে আর খোঁজাখুঁজির সাহস পাননি তাঁরা। বুধবার সকালে খুঁজতে বেরিয়ে একটি কুকুরের দেহাবশেষ পড়ে থাকতে দেখেন। সেদিন সন্ধ্যায় লাঠিসোঁটা নিয়ে বাঁশবনের সামনে জড়ো হন এলাকার বাসিন্দারা।
বাবলু রায় নামে একজন দাবি করেন, আঁধার নামতেই বাঁশবনের আড়াল থেকে দু’টি জন্তু বেরিয়ে আসতে দেখেছেন তাঁরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি অনু্যায়ী, ইটারঙা জন্তুগুলির গায়ে কালো ছোপ-ছোপ দাগ ছিল। একটি সাইজে বড়, অপরটি ছোট। জন্তু দু’টি বাঁশবনের সামনে জমিতে বাধা ছাগলগুলির দিকে এগোতেই লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের উপর হামলা চালান গ্রামবাসীরা। অতর্কিত হামলায় বাঁশবনের আড়ালেই পালিয়ে যায় জন্তু দু’টি।
কলিন রায় নামে এক গ্রামবাসীর দাবি, অন্ধকারে প্রাণী দু’টির চোখ যে ভাবে জ্বলজ্বল করছিল এবং যে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে তারা উধাও হয়ে যায়, তাতেই সেগুলি যে চিতাবাঘ তা সহজেই অনুমান করা যায়।
সে দিনের ঘটনার পর আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সকলে। বিশেষ করে বাচ্চাদের একা বাড়ির বাইরে বের হতে দেওয়ার সাহস পাননি অভিভাবকেরা। গ্রামবাসীরা আরও জানিয়েছেন, গত সাতদিনে অন্তত ১২টি ছাগল উধাও হয়ে গিয়েছে গ্রাম থেকে।
গ্রামবাসীরা বৃহস্পতিবার বন বিভাগের দ্বারস্থ হন। জলপাইগুড়ির গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। এরপর খাঁচা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো ছাগলের টোপ দিয়ে ওই বাঁশবনের পাশেই খাঁচাটি পাতা হয়েছে।
বনকর্মী বিজয় ধর জানিয়েছেন, হাড়গোড় দেখা গেলেও চিতাবাঘের পায়ের ছাপ কিন্তু কোথাও দেখতে পাননি। প্রাণীটি কোন প্রজাতির তা স্পষ্ট নয়। তবে গ্রামবাসীরা যেহেতু আতঙ্কে রয়েছেন তাই তাদের দাবি মেনে খাঁচা বসানো হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছে, আজও তাঁরা রাত জেগে পাহারা দেবেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত জন্তু দু’টি ধরা পড়ছে, ততক্ষণ তাঁদের শান্তি নেই। তাই পালা করে গ্রাম টহল দেবেন গ্রামবাসীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy