Advertisement
E-Paper

পাড়ার ছেলে দেশের সেরা, শুনেই উৎসব

অকাল বোধনের আগেই যেন শারোদৎসবের অকাল বোধন হয়ে গেল উত্তরে। সকালে ঋদ্ধিমান সাহা যখন সেকেন্ড ইনিংসেও হাফ সেঞ্চুরি করলেন, তখনই উৎসবের সূচনা হয়ে যায়। বিকেলে কলকাতা টেস্টর ম্যান অফ দ্য ম্যাচও হলেন ঋদ্ধিমান।

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২০
শিলিগুড়িতে ঋদ্ধির বাড়িতে আলোর রোশনাই। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক ।

শিলিগুড়িতে ঋদ্ধির বাড়িতে আলোর রোশনাই। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক ।

অকাল বোধনের আগেই যেন শারোদৎসবের অকাল বোধন হয়ে গেল উত্তরে। সকালে ঋদ্ধিমান সাহা যখন সেকেন্ড ইনিংসেও হাফ সেঞ্চুরি করলেন, তখনই উৎসবের সূচনা হয়ে যায়। বিকেলে কলকাতা টেস্টর ম্যান অফ দ্য ম্যাচও হলেন ঋদ্ধিমান। কিন্তু আনন্দের বাঁধ ভাঙল, যখন বিরাট কোহালি রবি শাস্ত্রীকে বলে গেলেন, ‘‘দেশের সেরা উইকেটকিপার এখন ঋদ্ধিমানই।’’

বেড়ে গেল উত্তরের পুজোর আনন্দ। রাঁচির যেমন ধোনি, শিলিগুড়ির তেমন পাপালি। পাপালি ব্যাট করতে নামলেই শিলিগুড়ি দম বন্ধ করে রাখে। টিভিতে চোখ রেখে বসে থাকেন অনেকে। যাঁরা কোনও কারণে বাইরে, তাঁরা বারবার মোবাইলে দেখতে থাকেন, কত করলেন তাঁদের ঘরের পাপালি।

শিলিগুড়ি বাসিন্দা পাপালির মামা পার্থপ্রতিম গোস্বামী যেমন টিভির সামনে সে সময় টেনশনে বসতে পারেন না। বাইরে বেরিয়ে পড়েন। সে সময় কারও কথাও শোনেন না তিনি। খোঁজও করেন না, কী হল। ব্যাট হয়ে গেলে, পাপালি ভাল রান করেছে শুনলে তবে স্বস্তি। এই ম্যাচেও দু’টি ইনিংসে পাপালি ব্যাট করতে নামলে তিনি বাড়িতে থাকেননি। তাঁর কথায়, ‘‘ওর ব্যাটের সময় টেনশন নিতে পারি না। তাই বেরিয়ে পড়ি। প্রথম ইনিংসে যখন ৫৪ করল টেনশন মুক্ত হলাম। দ্বিতীয় ইনিংসেও চিন্তায় ছিলাম। দলের যে পরিস্থিতির মধ্যে ব্যাট করতে নামতে হয় ওকে, সেটা আরও বেশি টেনশন তৈরি করে। শেষ পর্যন্ত ভাল খেলে ম্যান অব দ্য ম্যাচ। দারুণ খুশি আমরা।’’ ম্যান অব দ্য ম্যাচ ঘোষণার পর তাঁদের খুশি উচ্ছ্বাসে পরিণত হয়। শক্তিগড় এলাকাতেই মামাবাড়িতে চলে আসেন ঋদ্ধিমানের বাবা প্রশান্তবাবু, মা মৈত্রেয়ীদেবী, মাসিরা। পাপালির জন্যই বাড়ি আলো দিয়ে সাজিয়েছেন পার্থবাবু।

সম্প্রতি শিলিগুড়িতে নিজের ক্লাবে খুদে খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঋদ্ধি। —ফাইল চিত্র।

শহরের মেয়র, মন্ত্রী সকলেই ঋদ্ধিমানকে নিয়ে গর্বিত। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘আমরা ওর জন্য গর্বিত। রাজ্য সরকারের তরফে ঘটা করেই সংবর্ধনা জানানো হবে। ওর সঙ্গে কথা বলে যখন শিলিগুড়ি আসবে, সে সময় অনুষ্ঠান হবে। অন্য ক্রীড়াবিদ যাঁরা রয়েছেন তাঁদেরও একই মঞ্চে ডেকে বড় করে অনুষ্ঠান করা হবে।’’ মেয়র অশোক ভট্টাচার্য জানান, তিনি ঋদ্ধিমানকে নিজেই ফোন করেছিলেন। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মেয়র বলেন, ‘‘ওকে বলেছি, শহরবাসী যে সংবর্ধনা জানিয়েছে, তুই তাঁর যোগ্য মর্যাদা রাখলি। আমরা সকলেই তোর জন্য গর্বিত।’’ বিশেষ করে ইডেনের মাঠে বাঙালি ক্রিকেটারের ম্যান অব দ্য ম্যাচের সম্মান বড় করে দেখছেন তিনি।

শিলিগুড়ির অগ্রগামী সঙ্ঘে খেলতেন ঋদ্ধিমান। তার ক্লাবে জুনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে খুশির হাওয়া। কর্মকর্তাদের অনেকে এ দিন ক্লাবে বসেই ঋদ্ধির খেলা দেখেছে টিভিতে। পুজোর মধ্যে এমনিতেই আনন্দের রেশ। তার সঙ্গে ঋদ্ধির সাফল্য ক্লাবের পরিবেশ মাতিয়ে দিয়েছে। শিলিগুড়িতে ঋদ্ধিমানের কোচ জয়ন্ত ভৌমিক বলেন, ‘‘আমি বাড়িতে খেলা দেখেছি। খেলার শেষে রাতে ও প্রতিদিনই ফোন করে। কথা হয়। এই টেস্টে দুটি ইনিংসে পঞ্চাশের ওপর রান এবং অপারিজত থাকা, ভাল কিপিং, ম্যান অব দ্য ম্যাচের সম্মান, এটাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আর শতরানের ইনিংসের চেয়ে অল্প হলেও এগিয়ে রাখছি।’’ খুশির হাওয়া পাড়ার ক্লাব শৈলেন্দ্রস্মৃতি পাঠাগারের সদস্য সমর্থকদের মধ্যে। পুজোর আয়োজন নিয়ে তাঁরা ব্যস্ত। তার মধ্যে পাপালির ম্যান অব দ্যা ম্যাচের খবরে তাঁরা উচ্ছ্বসিত।

ইডেনে ঋদ্ধি। সোমবার তোলা শঙ্কর নাগ দাসের ছবি।

পাপালির সাফল্য কিন্তু শুধু শিলিগুড়ির সাফল্য নয়। উত্তরবঙ্গেরই সাফল্য। গোটা উত্তরই মনে করে, ঋদ্ধিমান তাঁদের ঘরের ছেলে। সেই ছেলে ভারত অধিনায়কের কাছ থেকে প্রকাশ্যে যে শংসাপত্র পেলেন, তাতে গর্বিত তিস্তা থেকে তোর্সার পাড়।

Siliguri Wriddhiman Saha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy