Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছাড়ের বহরে হরির লুঠ বাইক

ভারত স্ট্যান্ডার্ড-৩ বা বিএস-৩। গাড়িতে দূষণ নিয়ন্ত্রণে এটি একটি মাপকাঠি। ১ এপ্রিল থেকে আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়ে গেল বিএস-৩ ইঞ্জিন। আর তার আগে ‘স্টক ক্লিয়ার’ করতে জেলায় জেলায় বিপুল ছাড় দিল সংস্থাগুলি।

সারিবদ্ধ: বুক করে রাখা হয়েছে মোটরবাইক। শিলিগুড়িতে একটি শোরুমে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

সারিবদ্ধ: বুক করে রাখা হয়েছে মোটরবাইক। শিলিগুড়িতে একটি শোরুমে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৬
Share: Save:

ভারত স্ট্যান্ডার্ড-৩ বা বিএস-৩। গাড়িতে দূষণ নিয়ন্ত্রণে এটি একটি মাপকাঠি। ১ এপ্রিল থেকে আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়ে গেল বিএস-৩ ইঞ্জিন। আর তার আগে ‘স্টক ক্লিয়ার’ করতে জেলায় জেলায় বিপুল ছাড় দিল সংস্থাগুলি। আর তাতেই মোটরবাইক, স্কুটারের মজুত শেষ। কিন্তু সেই নোটিস ঝোলানো সত্ত্বেও ভিড় কমলো না। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গে জমজমাট বাইক-কাহিনি।

শিলিগুড়ি

সকাল থেকে দোকানের সামনে ভিড়। আর সন্ধে নাগাদ লাগিয়ে দেওয়া হল ‘স্টক শেষ’ স্টিকার। তার পরেও ভিড় কমার নাম নেই।

শিলিগুড়ির এক মোটরবাইকের শোরুমে এমন পরিস্থিতি দেখে শেষে খবর যায় পুলিশের কাছে। পুলিশের বড় কর্তা উল্টে শোরুম মালিককে ফোনে বললেন, ‘‘দেখুন না, আর একটা বাইক পাওয়া যায় কি না। আমার নিজের এক লোক নেবে।’’ এই অনুরোধ অবশ্য নেতা থেকে পুরসভার কাউন্সিলর, মায় সাধারণ মানুষ, সকলের কাছ থেকেই। বর্ধমান রোডের আর একটি শোরুমে শুক্রবার ২০০টি বাইক বিক্রি হয়েছে। শোরুমের কর্ণধার সুভাষ কুম্ভট বলেন, ‘‘স্টক শেষ। তবু ক্রেতাদের ভিড় সামলানো যাচ্ছে না।’’ মাটিগাড়ার ব্যবসায়ী শ্যামকিশোর সিংহের চার চাকা রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘যানজটের জেরে অনেক সময়েই চার চাকা গাড়ি চালাতে সমস্যা হয়। তাই ছাড়ের কথা শুনে কিনে নিলাম।’’ শক্তিগড়ের বাসিন্দা হরি রায়ের ভাগ্যে অবশ্য শিকে ছেড়েনি। ‘‘আসতে দেরি হয়ে গেল। দেখি স্টক শেষ,’’ হতাশা তাঁর গলায়।

উত্তর দিনাজপুর

রায়গঞ্জে মোট পাঁচটি মোটরবাইক শোরুম আছে। বৃহস্পতিবার থেকেই প্রতিটি শোরুমে বিশেষ ছাড় ঘোষণা করা হয়। সেই ছাড়ের কথা ছড়িয়ে গেলে শুক্রবার উপচে পড়ে ভিড়। কোথাও সাত হাজার, কোথাও ১৪ হাজার টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। এই খবরের ধাক্কায় বেলা ১২টার মধ্যেই সমস্ত বাইকের বুকিং হয়ে যায়। একটি শোরুমের কর্মী বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘আমাদের শোরুম থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০টি করে বাইক বিক্রি হয়। ছাড় ঘোষণা হতেই দু’দিনে শ’দুয়েক বাইক বিক্রি হয়েছে।’’ এই শোরুমে এসেছিলেন মোহনবাটির স্টেশনারি ব্যবসায়ী শঙ্কু সাহা। তিনি বলেন, সব জায়গা থেকেই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। সব বুকড্।

জলপাইগুড়ি

জলপাইগুড়ি শহরে শুধু দামেই নয়, ছাড় ছিল মোটর বাইকের বিমার অঙ্কেও। তাই অনেকেই লাইন দিয়ে বাইক কিনেছেন। জলপাইগুড়ির একটি বাইক শোরুমের কর্ণধার প্রদীপকুমার দেব বলেন, ‘‘মাসে যেখানে গড়ে একশো বাইক বিক্রি হয়, সেখানে আজকে এক দিনেই সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে।’’

কোচবিহার

গাড়ি মজুত রয়েছে। কিন্তু কেনার জন্য একটাও নয়। কারণ, সবই বুকিং হয়ে গিয়েছে। এমনই ছবি কোচবিহার শহরের বিভিন্ন শোরুমে। ছাড়ের হরির লুঠ, দিনভর উপচে পড়া ভিড়, আর শেষে না পাওয়ার হতাশা— সবই ছিল এখানে। কোচবিহারের একটি শোরুমের কর্ণধার অজয় গুপ্ত বলেন, “জেলায় কয়েক দিনে এক হাজারের বেশি মোটর বাইক বিক্রি হয়েছে।” বক্সিরহাটের বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী বলেন, একটা স্কুটি কিনব বলে কত ঘুরলাম! পেলাম না কোথাও।

মালদহ

শুক্রবার দুপুর ২টার পরই মোটর বাইক, স্কুটারের বুকিং বন্ধ হয়ে যায় মালদহে। একটি নামজাদা সংস্থার আটটি সাব ডিলার রয়েছে জেলায়। তারা হাজার খানেক বাইক-স্কুটার বিক্রি করেছে এ দিন। কারণ, ছাড়ও ছিল বিপুল পরিমাণে। কোথাও পাঁচ হাজার তো কোথাও বারো হাজার। তাদের জেলা ডিলার রহিত চিৎলাঙ্গিয়া বলেন, এমন ব্যবসা হবে ভাবতেই পারেনি! অন্য একটি সংস্থা জানিয়েছে, আর একটিও পড়ে নেই।

দক্ষিণ দিনাজপুর

বালুরঘাটের দীপালিনগরের একটি বাইকের শো রুমে ঢুঁ দিলেন এক স্কুল শিক্ষক। খবরের কাগজে ছাড়ের কথা পড়ে আসতে দুপুর হয়ে গেল। ততক্ষণে সব শেষ। বাইকের গায়ে চক দিয়ে তারিখ এবং যিনি বুক করেছেন তাঁর নাম লেখা। বালুরঘাটে সব শোরুমে শুক্রবার দু’চাকার ‘নেই নেই’ রব। একটির খবর, গত তিন দিন ধরে পাইকারি হারে বাইক বুক হচ্ছিল। এ দিন সকালের মধ্যে সমস্ত বাইক ও স্কুটি বিক্রি হয়ে যায়। বালুরঘাট শহরেই শুধু গত দু’দিনে ২৭৫টি বাইক বিক্রি হয়েছে। অন্য একটি সংস্থা জানাল, তাদের বিক্রিও শতাধিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bikes Discount BS-3
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE