Advertisement
E-Paper

শিল্পীর সম্মান চান পার্বতী

তাঁর আক্ষেপ, তৈরি মুখোশ এখন একেবারেই মূল্যহীন। আর বরাতও পান না। মনের কষ্ট ভুলতে মাছ ধরার অছিলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেন তিনি।পার্বতীচরণের তিন ছেলে। দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গিয়েছে।

সুদীপ্ত মজুমদার

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৫৬
 শিল্পী: নিজের তৈরি মুখোশ হাতে পার্বতীচরণ রায়। ছবি: সুদীপ্ত

শিল্পী: নিজের তৈরি মুখোশ হাতে পার্বতীচরণ রায়। ছবি: সুদীপ্ত

পুজো এলেই বেশ কদর বাড়ত সাবেক ছিটের বাসিন্দা পার্বতীচরণ রায়ের। কাঁটাতারের ওপারে মণ্ডপসজ্জায় ডাক পড়ত পেশায় মুখোশ শিল্পী পার্বতীচরণের। ছিটমহলে তো বটেই, বাংলাদেশের অনেক পুজো উদ্যোক্তা তাদের মণ্ডপ মুখোশ দিয়ে সাজাতে তাঁকে বরাত দিত। দিন বদলেছে। বদলে গিয়েছে দেশও। কাঁটাতারের ওপার থেকে ভারতীয় মূল ভূখণ্ডে এসে পার্বতীচরণ হারিয়েছেন তাঁর প্রিয় পেশার কাজ। তাঁর আক্ষেপ, এখানে তাঁকে সাবেক ছিটবাসী হিসেবে দেখলেও কেউ তাঁকে শিল্পী বলে ভাবতে নারাজ। তিনি আরও জানান, তাঁর শিল্পকর্মের কোনও মূল্যই নেই এপারে। তাঁর অভিযোগ, শিল্পী ভাতাও তিনি পান না। অগত্যা মাছ ধরে দিন কাটছে ৭৫ বছরের এই মুখোশ শিল্পীর।

শনিবার দুপুরে উত্তর বড় হলদিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সাবেক ছিটের স্থায়ী শিবিরে পার্বতীচরণের নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে খোঁজ করে জানা গেল, তিনি মাছ ধরতে বেরিয়েছেন। কোথায় যেতে পারেন জেনে নিয়ে হলদিবাড়ি-জলপাইগুড়ি রাজ্য সড়কের উঠতেই দেখা মিলল শিল্পীর। রাস্তার ধারে নয়ানজুলিতে মাছ ধরছেন। প্রতিবেদকের পরিচয় ও উদ্দেশ্য শুনে মাছ ধরায় ক্ষান্ত দিয়ে ফ্ল্যাটে ফিরে আসা।এরপর কথায় কথায় তিনি জানালেন, ওপারে থাকার সময় পুজোর কয়েকমাস আগে থেকেই তাঁর মুখোশ দিয়ে মণ্ডপসজ্জার জন্য একের পর এক বরাত আসত। এরপর উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী মুখোশ তৈরির কাজ শুরু হত। কাঠ কেটে তৈরি করতেন মুখোশ। তার উপর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কাজ করে বিভিন্ন ধরনের রূপ দিতেন।

তাঁর কথায়, একটি মুখোশ তৈরি করতে সময় লেগে যেত প্রায় তিনদিন। প্রতিটি মুখোশ দেড় থেকে দু’হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যেতেন উদ্যোক্তারা। পুজোর আগে লাভও ভাল হত। তবে বাস বদলের পর এখন সবই এখন স্মৃতি। কাজ নেই। তাঁর আক্ষেপ, তৈরি মুখোশ এখন একেবারেই মূল্যহীন। আর বরাতও পান না। মনের কষ্ট ভুলতে মাছ ধরার অছিলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেন তিনি।পার্বতীচরণের তিন ছেলে। দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গিয়েছে। এক ছেলে পড়াশোনা করছে। এপারে আসার সময় তিনি যে টাকাপয়সা নিয়ে এসেছিলেন, তা ফুরিয়ে গিয়েছে। কী করে চলবে সংসার? ছেলেকে কী করেই বা পড়াশোনা করাবেন তিনি? কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। সব মিলিয়ে তিনি এখন কিছুই ভাবতে পারছেন না। শিল্পী ভাতা পেতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে সাবেক ছিটের বাসিন্দা পার্বতীচরণ বলেন, ‘‘আমি ওপারে কাঠের মুখোশ তৈরি করে সংসার চালাতাম। এখানে মুখোশের বাজারই নেই। পুজোর সময়ও মণ্ডপসজ্জার জন্য কেউ ডাকে না। এ বার ভাবছি, পুজোর সময় ক্রেতা মিললে সব মুখোশ বিক্রি করে দেব। সরকারি সাহায্য পেলে এই শিল্পটাকেও ধরে রাখতে পারতাম।’’হলদিবাড়ির বিডিও সঞ্জয় পণ্ডিত বলেন, ‘‘বিষয়টি নজরে আছে। সরকারি সুযোগ এলে অবশ্যই ওঁর ব্যবস্থা করা হবে।’’

Durga Puja Artist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy