Advertisement
E-Paper

শ্রমিকদের ছাদ দিতে চা সুন্দরী, নজরে বাগান আদিবাসীও

‌রাজ্য বাজেটে চায়ের নামে ৫০০ কোটি টাকার আস্ত একটি প্রকল্প ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।

অনির্বাণ রায় 

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৩৪
ভরসা: গরুমারা জঙ্গল লাগোয়া বড়দিঘি চা বাগান। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

ভরসা: গরুমারা জঙ্গল লাগোয়া বড়দিঘি চা বাগান। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

কেন্দ্রীয় বাজেটে চা শব্দটিই খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে দাবি ছিল শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের। রাজ্য বাজেটে চায়ের নামে ৫০০ কোটি টাকার আস্ত একটি প্রকল্প ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। দশকের পর দশক ধরে যে সমস্যায় সর্বাধিক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে চা শ্রমিকদের, পাকাপাকি ভাবে মাথার ওপর ছাদ দেওয়ার সেই সংস্থানের কথা বলা রয়েছে বাজেটে। রাজনৈতিক চর্চাকারীদের দাবি, চা বলয়ের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধারে ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্প ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হতে পারে তৃণমূলের। সমতল এবং পাহাড়েও এই সিদ্ধান্ত তৃণমূলকে রাজনৈতিক সুবিধে দেবে বলে দাবি নেতাদের। বাজেটে পেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিবৃতি জারি করে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন মোর্চা সভাপতি বিনয় তামাং। তাঁর মন্তব্য, “পাহাড়ের ৬৭ হাজার চা শ্রমিকদের তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাই। শ্রমিকদের নিজস্ব জমির অধিকার পাওয়ারও এটাই প্রথম ধাপ বলে মনে করছি। আমরা বারবার এই দাবি জানিয়ে এসেছি।”

কী বলা হয়েছে প্রকল্পে? রাজ্যের ৩৭০টি চা বাগানের প্রায় ৩ লক্ষ স্থায়ী শ্রমিকরা চা সুন্দরী প্রকল্পের সুবিধে পাবেন। বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, স্থায়ী চা শ্রমিক যাঁরা ‘গৃহহীন’, তাঁদের বসবাসের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। আগামী তিন বছরে ধাপে ধাপে সকলের আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। আগামী আর্থিক বছরে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে প্রকল্প শুরু হচ্ছে। চা শ্রমিকদের দাবি, বাগানের যে ঘরে তাঁরা থাকেন, সেটির মালিক বাগান কর্তৃপক্ষ। কাজেই কাররওই নিজস্ব মাথা গোঁজার ঠাঁই বলে কিছু নেই। চা শ্রমিকদের সব সংগঠনই শ্রমিকদের মাথায় স্থায়ী ছাদের ব্যবস্থা করার দাবি তোলে। রাজ্য সরকার সেই সংস্থানই করেছে বাজেটে।

৯ বছর আগে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও চা বলয় বামেদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। চা বলয় দখল করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ডুয়ার্সে এসে বারবার চা শ্রমিকদের জমির পাট্টা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সে প্রক্রিয়া সরকার শুরু করলেও আইনি নানা জটিলতায় গতি শ্লথ হয়ে রয়েছে। যদিও চা বলয়ের রাজনৈতিক মালিকানা বাম থেকে তৃণমূলের দখলে যায়। তার পরে গত লোকসভা ভোটের ফল জানিয়ে দেয়, সবুজ ফিকে হয়ে চা বলয়ে গেরুয়া রং ধরেছে। বিমল গুরুং পাহাড় ছাড়া হলেও গত লোকসভা ভোটই চোখে আঙুল তৃণমূলকে দেখিয়েছে, গুরুংয়ের প্রভাব এখনও মোছেনি পাহাড় থেকে। দার্জিলিং পাহাড়েরও মূল অর্থনীতি চা-কে ঘিরে চলে। চা শ্রমিকদের ভোট ঝুলিতে ঢুকলে পুরো পাহাড়ের সমীকরণ পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করা হয়। রাজ্যের চা সুন্দরী প্রকল্প তাই পাহাড় সমতল দুইয়েই তৃণমূলকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিল বলে বাজি ধরতে রাজি অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

অস্বস্তি বেড়েছে গেরুয়া শিবিরে। বিজেপির অন্যতম চা শ্রমিক নেতা তথা আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লার মন্তব্য, “২০১১-এর পর থেকে তৃণমূল শুধু চা শ্রমিকদের শোষণই করেছে। গত লোকসভায় ভোটে হারের পরে তৃণমূল বুঝেছে, চা শ্রমিকদের জন্য কিছু করতে হবে, না হলে ওরা হারতেই থাকবে। তাই এ সব বলছে বটে, কিন্তু কার্যকর করবে না কিছুই। সবার আগে প্রয়োজন বন্ধ বাগান খোলা, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের মাথাব্যথা নেই।” জনের মন্তব্য শুনে রাজ্যের টি ডিরেক্টরেটের ভাইস চেয়ারম্যান তথা জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর মন্তব্য, “বন্ধ বাগান কেন্দ্রের চা পর্ষদের খোলার কথা। মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে চা শ্রমিকদের জীবনই বদলে যাবে। তাতেই বিজেপি ভয় পাচ্ছে।”

Tea Workers Bengal Budget 2020 Housing Project
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy