Advertisement
১১ মে ২০২৪

ছাত্রীর আত্মহত্যার কারণ নিয়ে ধন্দ

মালদহের কালিয়াচকের মোথাবাড়ির স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় কোন পরিবার সত্য কথা বলছেন তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন গ্রামবাসী। তাই তাঁরা পুলিশের কাছে সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ছাত্রীর বাড়ির লোকেরা দাবি করছেন স্থানীয় এক যুবকের অত্যাচারে আত্মহত্যা করেছে ওই ছাত্রী।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৫ ০২:১৬
Share: Save:

মালদহের কালিয়াচকের মোথাবাড়ির স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় কোন পরিবার সত্য কথা বলছেন তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন গ্রামবাসী। তাই তাঁরা পুলিশের কাছে সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ছাত্রীর বাড়ির লোকেরা দাবি করছেন স্থানীয় এক যুবকের অত্যাচারে আত্মহত্যা করেছে ওই ছাত্রী। তবে ওই যুবকের বাড়ির লোকেরা দাবি করছেন, পরিবারের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ছাত্রীটি আত্মঘাতী হয়েছে। ছাত্রীটির সঙ্গে ধৃত যুবকের প্রেমের সর্ম্পক ছিল কি না, তা নিয়েও রহস্য দানা বেঁধেছে গ্রামবাসীদের মনে। গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের মিরা রজক বলেন, ‘‘প্রথমে শুনেছিলাম মেয়েটিকে ছেলেটি উত্ত্যক্ত করত। এখন গ্রামের মানুষ জানাচ্ছেন, ওই দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। পুলিশের উচিত তদন্ত করে সত্য সামনে আনা।’’

রবিবার সকালে কালিয়াচকের মোথাবাড়ির বাজারপাড়া গ্রামে ছাত্রীটির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পরিবারের ছেলেরা মাথা ন্যাড়া করছেন। পরিবারের মধ্যে শোকের ছায়া। ছাত্রীটির বাবা মোথাবাড়ি স্ট্যান্ডে তেলে ভাজার দোকান করলেও আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল। ছাত্রীটির বাড়ি থেকে ধৃত যুবকের বাড়ি ৫০০ মিটার দূরে পাশের গ্রাম বৈষ্ণব পাড়ায়। তাঁর বাড়ির লোকেরাও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। তাঁদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। ভাঙাচোরা টালির বাড়িতে বসবাস তাঁদের। গ্রামের একাংশ বাসিন্দাদের দাবি, ছেলে ও মেয়েটির মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক ছিল। বেশ কয়েকবার তাদের দু’জনকে কথা বলতেও দেখা গিয়েছে।

যদিও ছাত্রীটির বাবার দাবি, ‘‘আমার মেয়ের সঙ্গে ওই যুবকের কোনও সম্পর্ক ছিল না। আমরা মেয়েকে বারবার করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, ছেলেটির সঙ্গে তার কোনও সর্ম্পক রয়েছে কি না। বারেবারেই সে বলেছিল কোনও সর্ম্পক নেই। মেয়েকে আমি নিজের মায়ের থেকেও বেশি ভালবাসতাম। কোনও দিন তাকে আমরা মারধর করিনি। ছেলেটির অত্যাচারে আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।’’

যদিও পাল্টা অভিযোগ করেছেন ছেলের বাড়ির লোকেরা। ধৃতরা দুই ভাই। অভি‌যুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। বাড়ির আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। তার দাদা মোবাইলের সিমকার্ড বিক্রির কাজ করেন। অভিযুক্ত যুবক কখনও ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে যায়, আবার কখনও দাদার সঙ্গে সিমকার্ড বিক্রিরই কাজ করে।

ওই যুবকের মা চিঠি লিখে স্থানীয় ফাঁড়ি এবং থানায় অভিযোগ পাঠিয়েছে। যদিও পুলিশের দাবি, এখনও কোন অভিযোগ জমা পড়েনি। ওই মহিলা বলেন, ‘‘প্রায় নয় মাস ধরে আমার ছেলের সঙ্গে ওই মেয়ের সম্পর্ক ছিল। আমরা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলাম। তবে মেয়ে নাবালিকা থাকার জন্য বলেছিলাম বয়স হলে দুই জনের বিয়ে দেওয়া হোক। মেয়ের পরিবার রাজি হয়নি। ওরা মেয়েকে খুব মারধর করত। আমার ছেলেকে লেখা ওই কিশোরীর বেশ কয়েকটি চিঠি রয়েছে আমাদের কাছে। আমরা তা আদালতে পেশ করব।’’

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই স্কুল ছাত্রী গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আত্মহত্যা করে। ঘটনার দিন মৃতার পরিবারের তরফ থেকে কোন অভিযোগ করা না হলেও পরের দিন সকালে গিয়ে স্থানীয় এক যুবকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মোথাবাড়ি ফাঁড়িতে। পুলিশ পরিবারের লোকেদের অভিযোগের ভিত্তিতে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার জন্য ৩০৬ ধারায় মামলা রুজু করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ায় ধৃত জেলে রয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে ওই ছাত্রীর কয়েকজন বান্ধবী জানিয়েছেন, স্কুলে গিয়ে তাকে ফোনে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। স্কুল যাওয়ার সময়ও ওই যুবকের সঙ্গে সে দেখা করত। সাত আট দিন ধরে তার বাড়ির লোকেরা তার বন্ধুদের সঙ্গেও দেখা করতে দিত না। ছাত্রীটির বন্ধুরা জানায়, তারা দেখা করতে গেলে বাড়ি থেকে চলে যেত বলত। ছাত্রীটির দাদার অবশ্য দাবি, ‘‘ওই যুবকের সঙ্গে আমার বোনের যদি সম্পর্ক থাকত, তা হলে সে কথা সে জানায়নি কেন? ছেলের বাড়ির লোকেরা এখন ভুল কথা বলছেন।’’

মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে। ঘটনার সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malda suicide Kaliachawk police super
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE