গত প্রায় একসপ্তাহ ধরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের জেরবার উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়া ও গোয়ালপোখরে প্রশ্ন উঠছে বিধায়ক ও সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে। আলো-পাখার অভাবে এই গরমে পড়ুয়া ও বাসিন্দারা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও লোকসানের মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, লোডশেডিংয়ের জেরে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে পুলিশের দাবি। রাতবিরেতে বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে পথ দুর্ঘটনাও।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির চাকুলিয়া ও গোয়ালপোখরের দফতরের কর্তাদের কাছে গত চার দিন ধরে বার বার লোডশেডিং সমস্যার সমাধানের দাবি জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি। এ দিকে চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রমজ (ভিক্টর) ও গোয়ালপোখরের তৃণমূল বিধায়ক তথা সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যের পর্যটন দফতরের প্রতিমন্ত্রী গোলাম রব্বানি দু’জনেই এক সপ্তাহ ধরে বাইরে থাকায় বাসিন্দারা সমস্যার কথা জানাতে গিয়ে তাঁদের দেখা না পেয়ে বারবার ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির রায়গঞ্জের ডিভিশনাল ম্যানেজার সুনীল কুমারের দাবি, চাকুলিয়া ও গোয়ালপোখরে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে বলে তাঁর কাছে কোনও খবর নেই। তাঁর পরামর্শ, কোম্পানির ইসলামপুরের রিজিওনাল ম্যানেজারের সঙ্গে বাসিন্দারা যোগাযোগ করুন।
ইসলামপুরের রিজিওনাল ম্যানেজার বিষ্ণু দত্তের দাবি, অনেক সময় ঝড়বৃষ্টির কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় বিদ্যুতের সংযোগ সাময়িক কালের জন্য বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘কেন এই অভিযোগ উঠছে তা খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছি।’’
বিধায়ক ভিক্টরবাবু ও রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী গোলাম রব্বানি পৃথক ভাবে দাবি করেছেন, বিধানসভার অধিবেশন চলায় গত এক সপ্তাহ ধরে তাঁরা কলকাতায় রয়েছেন। কোম্পানির কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে অবিলম্বে সমস্যার সমাধানের তাঁরা চেষ্টা করবেন বলে জানান।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক সপ্তাহ ধরে চাকুলিয়া ব্লকের চাকুলিয়া সদর, কালীবাড়ি, রামকৃষ্ণপুর, কানকি, শকুন্তলা, হাসিমারা, জনতাহাট, গোয়ালপোখর ব্লকের বিপ্রীত, সোলপাড়া, সাহাপুর, গোয়াগাঁও, লোধন, ধরমপুর ও তাজপুর এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় অন্তত ৮ থেকে ১০ বার করে লোডশেডিং হচ্ছে। প্রতি দফায় গড়ে ২০-৫০ মিনিট ধরে লোডশেডিং থাকছে। আকাশ মেঘলা বা হাল্কা বৃষ্টি শুরু হলেও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার দিনভর আকাশ মেঘলা থাকায় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ওই সব এলাকায় ছ’বার লোডশেডিং হয়েছে। ওই দিনই বিকেল ৫টা থেকে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আবার টানা ১৭ ঘণ্টা চাকুলিয়া ও গোয়ালপোখরের ব্লকজুড়ে লোডশেডিং ছিল বলে বাসিন্দাদের দাবি।
চাকুলিয়া সদর এলাকার বাসিন্দা সীতারাম দাস, শিলা দাস, ললিতা কর্মকার, হোটেল ব্যবসায়ী কিশোর ঝাঁ ও গোয়ালপোখরের গোয়াগাঁও এলাকার বাসিন্দা তথা রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী কল্পনা সাহার অভিযোগ, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের জেরে পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। পাখা না চলায় প্রচণ্ড গরমে বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন রাস্তাঘাট, বাজার এলাকা অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় হোটেলে-দোকানে ক্রেতাদের দেখা মিলছে না। ফলে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।
চাকুলিয়া থানার ওসি পিনাকী সরকারের কথায়, ‘‘অন্ধকারের জেরে পুলিশকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি ও অভিযান চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এ রকম চলতে থাকলে অন্ধকারের সুযোগে যে কোনও সময়ে দুষ্কৃতীরা চুরি, ছিনতাই সহ বিভিন্ন সমাজবিরোধী কার্যকলাপ ঘটাতে পারে।’’