কমল অগ্রবালের উপর হামলার প্রতিবাদে চার্চ রোডে বন্ধ দোকানপাট।
পুরভোটে প্রার্থী তথা প্রাক্তন কাউন্সিলের উপর হামলার প্রতিবাদে দোকান বন্ধ রেখে রাস্তা অবরোধ শুরু করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণ বাসিন্দাদের দুর্ভোগের খবর পেয়ে, অবরোধ তুলতে এগিয়ে যান আক্রান্ত প্রাক্তন কাউন্সিলরই। জোড় হাতে বিক্ষোভকারীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। তারপরে নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা আগেই উঠে যায় শিলিগুড়ির চার্চ রোডের অবরোধ।
শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ চার্চ রোডের ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রেখে অবরোধ শুরু করেন। গত বৃহস্পতিবার চার্চ রোডের পাশেই কে সি দে রোডে প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা এ বারের ভোটে সিপিএম প্রার্থী আইনজীবী কমল অগ্রবালের অফিসে হাঁসুয়া নিয়ে হামলা চালায় এক যুবক। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনেদুপুরে এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা। ঘটনার প্রতিবাদে চার্চ রোডের ব্যবসায়ীরা এ দিন সকাল ৯টার পর থেকে চার্চ রোডের মাঝ বরাবর অবরোধ শুরু করেন। হিলকার্ট রোড এবং সেবক রোডের মধ্যে অন্যতম সংযোগকারী এই রাস্তা বন্ধ থাকায় শুরু হয় পথচারীদের দুর্ভোগ। স্কুল-অফিসের ব্যস্ত সময়ে যানবাহন বেশি থাকায় রাস্তায় যানজট তৈরি হয়।
যানজট ছড়িয়ে পড়ে মহানন্দা সেতু লাগোয়া হিলকার্ট রোডের কিছু অংশ এমনকী সেবক রোডেও। চার্চ রোডে সার দিয়ে নানা দোকান রয়েছে। সেগুলিও বন্ধ থাকায় ক্রেতারাও নাকাল হন। পরিস্থিতির খবর পেয়েই আসরে নামেন প্রাক্তন কাউন্সিলর কমলবাবু। তাঁর উপর হামলার প্রতিবাদে অবরোধ তুলতে তাঁকেই হাতজোড় করে বিক্ষোভকারীদের অনুরোধ করতে দেখা যায়। কমলবাবুর স্ত্রী মঞ্জু দেবীও বিক্ষোভকারীদের অবরোধ তুলে নিতে বোঝাতে শুরু করেন। পৌনে ১১টা নাগাদ অবরোধ তুলে নেন ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দারা।
এলাকার ব্যবসায়ী সংগঠন চার্চ রোড ট্রেড অর্গানাইজেশনের সভাপতি অরুণ গোয়েল বলেন, ‘‘কমলবাবুর অফিসে ঢুকে যে ধরনের হামলা হয়েছে, তাতে এলাকার সকলেই আতঙ্কিত। আমরা কোনও রাজনীতির মধ্যে নেই। এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে কারণেই সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ব্যবসা বন্ধ রেখে অবরোধ চালানোর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। যদিও, কমলবাবুর অনুরোধে আমরা আগেই অবরোধ তুলে নিয়েছি।’’
কোনও রকম হস্তক্ষেপ বা আশ্বাস ছাড়াই অবরোধ উঠে যাওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে পুলিশ-প্রশাসন। কমলবাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘বৃহস্পতিবারের হামলার ঘটনা নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ-আতঙ্কে ভুগছেন। তাই অবরোধ শুরু করেছিলেন। তবে সাধারণ বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চলুক, এটা কেউই চাইবে না। তাঁদের ক্ষোভের কথা মাথায় রেখেই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাতজোড় করে বিনীত ভাবে অনুরোধ করেছি। ওঁরা সেই অনুরোধ রাখার আমি কৃতজ্ঞ।’’
এ দিকে, কমলবাবুকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেব। শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা শিলিগুড়ির সঙ্গে খাপ খায় না। কমলবাবুর সঙ্গে আমার পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, কমলবাবুকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া উচিত।’’
কমলবাবুর উপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত অর্জুন দাস শুক্রবারেও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার হাঁসুয়া নিয়ে অর্জুন কমলবাবুর অফিসে ঢুকে তাঁর নাম ধরে ডাকতে শুরু করেন। কমলবাবু সামনে থাকলেও অর্জুন তাঁকে চিনতে পারেননি বলে জানা যায়। হঠাৎই তিনি এলোপাথাড়ি হাঁসুয়া চালাতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। অফিসে থাকা দু’জনের হাত হাঁসুয়ার আঘাতে জখমও হয়। এরপরে স্থানীয় বাসিন্দারা অর্জুনকে ধরে মারধরের পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, নেশাচ্ছন্ন থেকে অর্জুন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। তার শরীরে আঘাত রয়েছে। ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার ক্ষোভেই সে কমলবাবুর উপর হামলা চালাতে যায় বলে জানিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অবশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বামেরা। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু বলেন, ‘‘শুধুমাত্র ওই যুবককেই দোষারোপ করছে পুলিশ। কিন্তু হামলার মদত কে দিল, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে না।’’ পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা জানিয়েছেন, ধৃতকে দফায় দফায় জেরা চলছে। যথাযথ পদক্ষেপ হবে।
শুক্রবার ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy