Advertisement
২৩ মার্চ ২০২৩

ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ধৃত

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী এক আদিবাসী কিশোরীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল তৃণমূল সেকেন্ডারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্লক স্তরের এক যুগ্ম আহ্বায়ক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালবাজার শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০১
Share: Save:

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী এক আদিবাসী কিশোরীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল তৃণমূল সেকেন্ডারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্লক স্তরের এক যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, অভিযোগ মিথ্যা। তাঁর স্কুলের প্রধানশিক্ষকও একই দাবি করেছেন। তবে বৃহস্পতিবার মালবাজারে পুলিশের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়। শুক্রবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Advertisement

ওই ছাত্রীর মা চা শ্রমিক। তিনি জানান, চলতি মাসে বেশ কিছু দিন ধরেই মেয়েকে স্কুলে মানসিক নির্যাতন করছিলেন ওই শিক্ষক। তাঁর দাবি, আলাদা করে শুধু তাঁর মেয়েকেই ওই শিক্ষক জিজ্ঞাসা করতেন, কেন সে সেজেগুজে স্কুলে এসেছে! তারপরে তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দিতেন ওই শিক্ষক। অভিযুক্ত শিক্ষক বাইক চালিয়ে তাদের বাড়িতেও গিয়েছিলেন বলে ওই মহিলার দাবি। মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ছাত্রীটি বাড়িতে মায়ের কাছে সব জানালে তার মা আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতৃত্বদের সাহায্য চান। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতাদের পরামর্শেই গত বৃহস্পতিবারে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরিষদের চা শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমরদান বাক্সলা বলেন, ‘‘এ ধরনের ঘটনা আদিবাসী সমাজ ভাল চোখে মেনে নেবে না। তাই অভিযুক্তের শাস্তি চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।’’

তবে পুরো ঘটনাটিই সাজানো বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষক। চলতি সপ্তাহে স্কুলের প্রধানশিক্ষক ছুটিতে থাকায় ওই শিক্ষকই স্কুলের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘‘স্কুলে এসে অনেক সময়েই ছাত্রীটি বিনা কারণে ছুটি নিয়ে বাইরে চলে যেত বলে আমি জানতে পেরেছিলাম। গত সোমবারে আমার কাছে ফের ছাত্রীটি ছুটি নিতে এলে তার মাকে স্কুলে ডেকে পাঠাই। মঙ্গলবারে ছাত্রীর মা স্কুলে এলে তাঁকে মেয়ের দিকে বাড়তি মনোযোগ দিতে বলি। সেই ঘটনাটিই অভিভাবিকা মেনে নিতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে পাল্টা মিথ্যা অভিযোগ করেন।’’ স্কুলের প্রধানশিক্ষকও ওই শিক্ষকের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওই শিক্ষক এই স্কুলে গত ১৭ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। কোনও দিন এ ধরনের ঘটনায় তিনি জড়াননি। ছাত্রীর পরিবারটি শিক্ষকের অনুশাসনকেই ভুল ব্যাখ্যা করেছে বলে আমার ধারণা।’’

এ দিন ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে শিশুদের ওপর যৌন অপরাধ রুখতে তৈরি নতুন পোক্সো ধারার ১২ নম্বর উপধারায় মামলা রুজু করে জলপাইগুড়ি আদালতে তাঁকে পাঠায় পুলিশ। মালবাজারের এসডিপিও নিমা নরবু ভুটিয়া বলেন, ‘‘শিক্ষককে ছাত্রীর উপর মানসিক নির্যাতন ও বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা করে আদালতেও তাকে পাঠানো হয়েছে।’’

Advertisement

তবে ওই শিক্ষক তৃণমূল শিক্ষা সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক হওয়ায় এই ঘটনায় মালবাজারের রাজনৈতিক বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল শিক্ষা সংগঠনের মালবাজার ব্লকের আহ্বায়ক সরিফুল রহমানের দাবি, ‘‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ওই শিক্ষককে ফাঁসানো হয়েছে।’’

কিন্তু সিপিএমের মালবাজার জোনাল নেতা তথা জলপাইগুড়ি জেলা স্তরের নেতা চানু দে বলেন, ‘‘এ ধরনের ঘটনা মালবাজারে প্রথম ঘটল। শহরের সংস্কৃতি রক্ষার স্বার্থেই আমরা অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।’’ শাস্তি চেয়েছে কংগ্রেসও। জেলা বিজেপি-র মজদুর মোর্চার সভাপতি দেবব্রত মিত্র বলেন, ‘‘আমরা এই বিষয়টিকে সামনে রেখে পথসভাও করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.