প্রতীকী ছবি।
এলাকায় তাদের পরিচিতি ছিল মাণিকজোড় বলে। আলাদা স্কুলে পড়লেও একই ক্লাসের পড়ুয়া কিশোর দুই বন্ধু সব সময় সব কাজে থাকত এক সঙ্গে। ভুট্টাখেতে নিখোঁজ বন্ধুর দেহ পাওয়ার পরে সঙ্গী কিশোরের কান্নায় মনও গলেছিল সকলের। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। সপ্তাহ পেরোতেই বন্ধুকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল ওই কিশোরকে। জেরায় ‘অভিন্নহৃদয়’ বন্ধুকে খুনের কারণ জেনে স্তম্ভিত তাবড় পুলিশকর্মীরাও।
পুলিশ সূত্রে খবর, হরিশ্চন্দ্রপুর থানার একটি গ্রামে দু’জনের বাড়ি পাশাপাশিই। নবম শ্রেণির পড়ুয়া দু’জনকে সব সময় দেখাও যেত একসঙ্গেই। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সেই সর্বক্ষণের সঙ্গী ‘বন্ধুকে’ খুনের পর তার মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে দিয়েছিল ওই কিশোর। মোবাইলের সূত্র ধরেই সোমবার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এ দিন ধৃতকে নিয়ে এলাকায় গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণও করে পুলিশ। খুনের কারণ হিসেবে ধৃত কিশোর জানায়, সব কাজেই বন্ধু তার উপরে কর্তৃত্ব ফলাত, হেয় করত তাকে। সেই ক্রোধেই বন্ধুকে খুনের পরিকল্পনা করে বলে জানায় সে।
হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয়কুমার দাস বলেন, ‘‘খুনের কারণ শুনে আমরা স্তম্ভিত। সবচেয়ে অবাক লাগছে এটা ভেবেই যে, এমন একটি ঘটনার পরও কী ভাবে এত দিন ধরে ও স্বাভাবিক আচরণ করে গেল, কেউ কিছু বুঝতেই পারল না।’’
পুলিশকে ওই কিশোর জানায়, পাড়ার অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে পুজো—সবেতেই নিজেকে এগিয়ে রাখত তার বন্ধু। গত সরস্বতী পুজোতেও সে পুরোহিতের পাশে বসে ছিল। কিশোরকে বসতে দেওয়া হয়নি। আবার কালীপুজোর সময় কিশোরটি ঢাক বাজাতে চাইলে বন্ধু তাকে বলে, ‘‘যা, তুই ঢাক বাজাতে পারবি না।’’ তা নিয়ে কিশোরের মনে ক্ষোভ ছিলই। এ রকমই সব কারণে সে বন্ধুকে খুনের ছক কষে বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে। এর পরে পরিকল্পনা মতো সে বাঁশবাগান থেকে মোটা একটি বাঁশ কেটে তা ভুট্টাখেতে রেখে আসে। ঘটনার দিন একটি ঠান্ডা পানীয়ের বোতল কিনে দু’জনে মিলে সেটি খাবে বলে বন্ধুকে ডেকে নিয়ে যায় ওই কিশোর। কিছু ক্ষণ পর তার বন্ধু শৌচকর্ম করতে ভুট্টাখেতে ঢোকে। তখনই আচমকা বাঁশ দিয়ে বন্ধুর মাথায় কিশোর আঘাত করতেই লুটিয়ে পড়ে সে। তার পরেও নিশ্চিত হতে আরও দু’বার তার মাথায় সে আঘাত করেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে ধৃত।
পুলিশ জানিয়েছে, ১ মে বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি বন্ধুটি। দু’দিন বাদে একটি ভুট্টাখেত থেকে তার দেহ উদ্ধার হয়। দেহ উদ্ধারের পরই পুলিশ নিশ্চিত ছিল যে এটি খুনের ঘটনা। যদিও কে তাকে খুন করেছে তা নিয়ে ধন্দে ছিল পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তের পরে তারা জানায়, খুনের পরে বন্ধুর মোবাইল ফোনের সিমকার্ড খুলে পরদিন একটি দোকানে ১৩০০ টাকায় ফোনটি বিক্রি করে দেয় ওই কিশোর। সূত্রের মতে, অনেক সময় চোরাই মোবাইলও অনেকে বিক্রি করতে আসে। না জেনে তা কিনে নিলে পরে দোকানিকে সমস্যায় পড়তে হয়, তাই এ সব ক্ষেত্রে দোকানি পুরনো মোবাইল বিক্রেতার ছবি তুলে রাখেন। সোমবার ওই মোবাইলটিতে নতুন সিমকার্ড ভরে তা চালু করতেই ইএমআই নম্বর দেখে সেখানে হাজির হয় পুলিশ। কিশোরের ছবি দেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সে ভেঙে পড়ে।
নিহতের বাবা এ দিন বলেন, ‘‘যাকে সবচেয়ে ও বেশি বিশ্বাস করত, সে যে এমন করবে ভাবতেই পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy