Advertisement
০১ মে ২০২৪
রায়গঞ্জে বিক্ষোভ জনতার

কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুনের নালিশ, ধৃত চার

অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগে প্রতিবেশী পরিবারের চার সদস্যকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জ থানার শেরপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতরা সামেদ আলি, তার বাবা সামসুল হক, দাদা সামিদুল রহমান ও মা নিহার খাতুন। সামসুল পেশায় গাড়ি চালক।

খুনে অভিযুক্তদের বাড়িতে ভাঙচুর। ছবি: গৌর আচার্য।

খুনে অভিযুক্তদের বাড়িতে ভাঙচুর। ছবি: গৌর আচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৬
Share: Save:

অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগে প্রতিবেশী পরিবারের চার সদস্যকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জ থানার শেরপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতরা সামেদ আলি, তার বাবা সামসুল হক, দাদা সামিদুল রহমান ও মা নিহার খাতুন। সামসুল পেশায় গাড়ি চালক।

শুক্রবার দুপুর থেকে ওই কিশোরী নিখোঁজ ছিল। এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ রায়গঞ্জের কুলিক নদীতে তার দেহ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন বাসিন্দারা। পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে পাঠায়। দেহটির হাত ও মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল।

এ দিকে, কিশোরীর দেহ উদ্ধারের ঘটনা জানাজানি হতে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে এলাকার কয়েকশো বাসিন্দা তাদের বাড়িতে চড়াও হয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। অভিযুক্তদের তিনটি টিনের ঘর ভাঙচুর করার পাশাপাশি তিনটি পাকা ঘর থেকে বিভিন্ন আসবাবপত্র, একাধিক সাইকেল, একটি মোটরবাইক-সহ বিভিন্ন গৃহস্থালীর সামগ্রী বাইরে বের করে ভাঙচুর চালান। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজার দাবি, মৃতার পরিবারের তরফে দায়ের করা খুনের অভিযোগে ধর্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তাই ধৃতদের বিরুদ্ধে আপাপত খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার মামলা দায়ের হবে। ময়নাতদন্তের পর প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ প্রদীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘খুনের আগে কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, ভাইবোনেদের মধ্যে এই কিশোরীই বড় ছিল। তার এক আত্মীয়ের অভিযোগ, শুক্রবার দুপুর দেড়টা নাগাদ সে বাড়ির পাশের মাঠে গরু বেঁধে বাড়ি ফিরছিল। সেই সময় প্রতিবেশী সামেদ তাকে জোর করে পাটখেতে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। পরে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। দীর্ঘ ক্ষণ সে বাড়ি না ফেরায় তার পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।

কিশোরীর ওই আত্মীয়ের দাবি, ওই রাতে তাকে খোঁজাখুঁজির সময়ে কয়েক জন প্রতিবেশি তাঁদের জানান দুপুরে তাঁরা পাটখেতে সামেদের সঙ্গে কিশোরীকে কথা বলতে দেখেছেন। খবর পাওয়ার পর পাটখেতে গিয়ে বোঝা যায় ভারী কোনও জিনিস পাটখেত দিয়ে টেনে হেঁচড়ে নদীর ধারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিশোরীর পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা সামেদের বাড়িতে গিয়ে কিশোরীর ব্যাপারে খোঁজ করলে সামেদ দাবি করে সে কিছু জানে না।

শনিবারও কিশোরীর খোঁজ করে না মেলায় রাতে সামেদের বাড়ি ঘেরাও করে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেন বাসিন্দারা। চাপে পড়ে সামেদ অভিযোগ স্বীকার করে বলে মৃতার পরিবারের দাবি। সেই সময় প্রতিবেশীরা অভিযুক্তদের উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

মৃতার বাবা বলেন, ‘‘ধর্ষণের পরে শ্বাসরোধ করে খুন করে সামেদ পরিবারের লোকজনের সহায়তায় ওকে কুলিকের জলে ভাসিয়ে দেয় বলে আমাদের সন্দেহ। সামাজিক কারণে পুলিশের কাছে দায়ের করা খুনের অভিযোগে ধর্ষণের কথা উল্লেখ করিনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের প্রমাণ মিললে নিশ্চয়ই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেয়েকে যারা খুন করেছে তাদের ফাঁসির সাজার দাবি জানিয়েছি পুলিশের কাছে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, সামেদের দুই বোন সানোয়ারা খাতুন ও জ্যোত্স্না খাতুনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের না হওয়ায় তাঁদের আপাতত রায়গঞ্জ মহিলা থানায় রাখা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তাঁদের আপাতত বাড়িতে না পাঠিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে পুলিশ। এ দিন থানার লকআপে দাঁড়িয়ে সামেদ অবশ্য দাবি করে, তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের বিনা দোষে ফাঁসানো হল। ছাত্রীকে খুনের ঘটনার তারা কিছুই জানে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE