Advertisement
০৮ মে ২০২৪
ইংরেজবাজার

মৃত্যুর শোক বদলেছে ক্ষোভে

একজন প্রকাশ্যে মদ্যপান, জুয়া এবং মহিলাদের কটুক্তি করতে দেখলেই প্রতিবাদ করতেন। অপরজনের চরিত্র ছিল ঠিক উল্টো। প্রথমজন হলেন এলাকার প্রতিবাদী যুবক অর্জুন দাস ওরফে বুবাই। দ্বিতীয়জন হলেন এলাকার কুখ্যাত মুকান্দর চৌধুরী।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩২
Share: Save:

একজন প্রকাশ্যে মদ্যপান, জুয়া এবং মহিলাদের কটুক্তি করতে দেখলেই প্রতিবাদ করতেন। অপরজনের চরিত্র ছিল ঠিক উল্টো। প্রথমজন হলেন এলাকার প্রতিবাদী যুবক অর্জুন দাস ওরফে বুবাই। দ্বিতীয়জন হলেন এলাকার কুখ্যাত মুকান্দর চৌধুরী।

মালদহের ইংরেজবাজার শহরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কুলদীপ মিশ্র কলোনির প্রতিবাদী যুবক অর্জুনই যে আগে মারা যাবেন, তা ভাবতেই পারছেন না এলাকাবাসীরা। অর্জুনের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়লেও, মুকান্দরের শাস্তির দাবিতে ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁরা। সোমবার সকালে এলাকাবাসীদের একাংশ অর্জুনকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মুকান্দর ও তাঁর দাদা সিকান্দরের বাড়ি ভাঙচুর করে সমস্ত কিছু পুড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত মুকান্দর ও সিকান্দর সপরিবারে ঘর ছাড়া। স্থানীয় বাসিন্দারাই অভিযুক্তদের মা মীরা চৌধুরীকে আটক করে তুলে দিয়েছেন পুলিশের হাতে। এলাকা জুড়ে টহলদারি চালাচ্ছে ইংরেজবাজার থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্জুন দাস ওরফে বুবাই মালদহ টাউন স্টেশনে হকারি করতেন। অর্জুন মালদহের রেলওয়ে হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। তাঁর বাবা বৈদ্যনাথ বাবু পেশায় রাজমিস্ত্রি। আর্থিক অনটনে কলেজে ভর্তি হতে পারেননি অর্জুন। তবে এলাকায় শিক্ষিত এবং ভাল ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এলাকাতে একটি মদের ঠেক চলত। এলাকার মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে সেই মদের ঠেক ভেঙে দিয়েছিলেন অর্জুন। তাঁর সামনে মহিলাদের অশ্লীল মন্তব্যে করলে প্রতিবাদ করতেন তিনি। তিনি এলাকায় প্রতিবাদী যুবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুকান্দর এলাকায় কুখ্যাত হিসেবে পরিচিত। মুকান্দরের মদতে এলাকায় চলে জুয়ার ও বেআইনি একটি মদের ঠেক। এ ছাড়া মদ্যপ অবস্থায় এলাকার মহিলাদের প্রায় অশ্লীল মন্তব্য করতেন তিনি। মুকান্দরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের একটি পুরোনো মামলাও রয়েছে। কেন এত বাড়বাড়ন্ত মুকান্দরের। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বছর দশেক আকে মুকান্দরের বাবা বিজয় চৌধুরী মারা যান। তিনি ছিলেন রেলের কর্মী। মুকান্দরেরা দুই ভাই থাকায় বিজয় বাবুর মৃত্যুর পরে রেলের সাফাইকর্মীর চাকরি পান সিকান্দর।

সিকান্দর রেলের মালদহ ডিভিশনের স্থায়ী সাফাই কর্মী পদে এখনও রয়েছেন। চাকরির পাওয়ার পর থেকেই বদলে যায় দুই ভাই এর জীবন যাপন। সিকান্দর নাম লেখান মালদহের বাম সমর্থিত ইস্টার্ন রেলওয়ে মেন্স ইউনিয়নে। আর তাঁর ভাই মুকান্দর এলাকায় সিপিএমের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। ইংরেজবাজার শহরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডটি বরাবরই সিপিএমের দখলে। এখনও সিপিএমের দখলেই রয়েছে। যার সুবাদে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াত সিকান্দর ও মুকান্দর। যদিও সিপিএম নেতৃত্ব ওই দুই ভাইকে দলের কেউ নন বলে দাবি করেছেন।

গত, শুক্রবার রাতে আমন্ত্রিত না হওয়া সত্ত্বেও অর্জুনের ভাগ্নির বিয়েতে গিয়ে মহিলাদের সঙ্গে অভব্য আচারন করেন মুকান্দর। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই প্রতিবাদ করেছিলেন অর্জুন। যার জন্য রবিবার রাতে তাঁকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে খুন করে মুকান্দর ও তাঁর দলবল বলে অভিযোগ। ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসীরা। মৃতের দাদা ভীম দাস বলেন, ‘‘এলাকাবাসীর আপদে বিপদে ঝাপিয়ে পড়ত ভাই। আর তাঁকেই এই ভাবে নৃশংস ভাবে খুন হতে হল। এলাকার কেউ তা মেনে নিতে পারছেন না।’’ এ দিন বিকেলে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ ময়না তদন্তের পর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হলে কান্নার রোল পড়ে যায়। এলাকায় কোন বাড়িতে এদিন হাঁড়ি চড়েনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bereave anger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE