Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
nrc

প্রতিদিনই প্রমাণ দিচ্ছেন, তাই এনআরসি-তে ভয় কী

চরের বাসিন্দাদের নদী পার হতে ভোটার কার্ড লাগে। জমি চাষ করতে যেতে ভোটার কার্ড লাগে। গ্রাম থেকে শহরে যেতেও ভোটার কার্ড দেখাতে হয়। ফকতের চরের মতো কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছু গ্রামে, বাইরে থেকে ভিতরে যেতে হলে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে ভোটার কার্ড জমা রেখে যেতে হয়। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো তিস্তার চরে এ ভাবেই দিন কাটাচ্ছেন দেড়শো পরিবারের প্রায় এক হাজার মানুষ।

বিচ্ছিন্ন: তিস্তা নদীর উপর সেই ফকতের চর। নিজস্ব চিত্র

বিচ্ছিন্ন: তিস্তা নদীর উপর সেই ফকতের চর। নিজস্ব চিত্র

সজল দে
কুচলিবাড়ি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২০ ০৬:০১
Share: Save:

এনআরসি আর সিএএ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করেন না তাঁরা। কারণ প্রতিটা দিনই তাঁদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হয়। কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তিস্তা নদীর চরে থাকা ফকতের চর এলাকার বাসিন্দারা তাই নিজেদের নিজভূমে পরবাসী বলেই মনে করেন।

চরের বাসিন্দাদের নদী পার হতে ভোটার কার্ড লাগে। জমি চাষ করতে যেতে ভোটার কার্ড লাগে। গ্রাম থেকে শহরে যেতেও ভোটার কার্ড দেখাতে হয়। ফকতের চরের মতো কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছু গ্রামে, বাইরে থেকে ভিতরে যেতে হলে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে ভোটার কার্ড জমা রেখে যেতে হয়। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো তিস্তার চরে এ ভাবেই দিন কাটাচ্ছেন দেড়শো পরিবারের প্রায় এক হাজার মানুষ।

ওই এলাকায় যেতে হলে প্রথমে নৌকোয় ১০০ মিটার পার হওয়ার পর দুর্গম চর এলাকা। এবড়োখেবড়ো আড়াই কিলোমিটার চরের রাস্তা বাসিন্দারা পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করেন। এলাকার কয়েকজন চাষের কাজে ট্রাক্টর ব্যবহার করেন। কেউ অসুস্থ হলে বা অন্য জরুরি প্রয়োজনে, অনেক সময় ট্রাক্টরে করে এই পথ অতিক্রম করেন তাঁরা। রাস্তা এতটাই খারাপ, যে পদে পদে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। চর পেরিয়ে আবার নদী। আবার নৌকোয় চড়া। এ বার ১৫০ মিটার নৌকায় যাওয়ার পর তবে ফকতের চর এলাকায় পৌঁছনো যাবে।

গ্রামের একমাত্র পথ ভাঙাচোরা। বেশিরভাগ বাড়ি খড় অথবা টিনের। সকলের পকেটেই সব ভোটার কার্ড সময় থাকে। যেগুলি অতিব্যবহারে তেল চিটচিটে, কোনটার ছবি স্পষ্ট নয়।

চরের বাসিন্দা সাহিন আলম, রনজিৎ রায় জানালেন, বিভিন্ন কাজে শহরে যেতে বারবার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানদের ভোটার কার্ড দেখাতে দেখাতে কার্ডের এমন অবস্থা। আর-এক বাসিন্দা মজদুল ইসলাম বললেন, ‘‘ক্যাম্প থেকে আমার কার্ডটি হারিয়ে গিয়েছে। এখন তাই ভরসা কার্ডের ফোটোকপি।’’ তিনি জানালেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকেও আলাদা কার্ড দেওয়া হয়। রোজই বাহিনীর জওয়ানদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাঁদের। তাই প্রতিটি দিনই এই চরের লোকজনকে নিজেদের ভারতীয় হিসেবে প্রমাণ দিতে হয় বলে তিনি জানালেন।

যদিও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক সীমান্তে নিরাপত্তার স্বার্থেই কিছু নিয়ম মানতে হয়। এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাঁরা একটা নিয়মে থিতু হতে না-হতেই সমস্যা আরও বেড়ে যায় ব্যাটলিয়ন পরিবর্তন হলে। কারণ ব্যাটেলিয়ন পরিবর্তন হলে সীমান্তের নিয়মেরও অনেক পরিবর্তন হয়। যার প্রভাব পড়ে চরের বাসিন্দাদের জীবনে। অন্য রাজ্য থেকে আসা জওয়ানদের সঙ্গে ভাষা সমস্যার কারণে মাঝেমধ্যেই পরিস্থিতি জটিল হয় বলে বাসিন্দারা জানালেন।

তাঁরা জানালেন, ওই এলাকায় কোনও জন প্রতিনিধি নেই। সে কারণে বড় সমস্যা হলে এপার থেকে প্রধান গিয়ে সমস্যা মেটান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE