Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বিধিভঙ্গের অভিযোগ বেশি শাসকের বিরুদ্ধেই

গত ১৮ মার্চ পুরভোটের দিনক্ষণের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। আর এরপর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে প্রচারের ক্ষেত্রে বিধিভঙের অভিযোগ ওঠা শুরু হয়। নিবার্চন কমিশনের নির্দেশে শিলিগুড়িতে মডেল কোড অব কন্ডাক্টের (এমসিসি) সেল খুলে অভিযানও শুরু হয়। কমিশন সূত্রের খবর, গত দশ দিনে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি বিধিভঙ্গের অভিযোগ সামনে এসেছে।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩০
Share: Save:

গত ১৮ মার্চ পুরভোটের দিনক্ষণের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। আর এরপর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে প্রচারের ক্ষেত্রে বিধিভঙের অভিযোগ ওঠা শুরু হয়। নিবার্চন কমিশনের নির্দেশে শিলিগুড়িতে মডেল কোড অব কন্ডাক্টের (এমসিসি) সেল খুলে অভিযানও শুরু হয়। কমিশন সূত্রের খবর, গত দশ দিনে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি বিধিভঙ্গের অভিযোগ সামনে এসেছে। শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিই নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফেও শাসক দলের বিরুদ্ধে মহকুমা শাসক তথা রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুসারে, গত ৩০ মার্চ পর্যন্ত বিধি ভেঙে সরকারি জায়গায় পোস্টার, হোর্ডিং এবং ব্যানার লাগানোর সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই। দ্বিতীয় স্থানেই অবশ্যই রয়েছে সিপিএম। তার পরেই রয়েছে বিজেপি-সহ অন্য দলগুলি। বিরোধীদের কথায়, ‘‘এমসিসি সেল এখনও পুরোপুরি সক্রিয় নয়, শাসক দলের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ এখনও রয়েছে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি প্রকল্পের প্রচারের হোর্ডিং ছেয়ে রয়েছে। সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারেরা আদতে সরকারি অফিসার হওয়ায় এই অবস্থা চলছে। তবুও যা হিসাব দেখা যাচ্ছে তাতেই বোঝা যাচ্ছে, শাসক দল কীভাবে একের পর এক বিধিভঙ্গ করেই চলেছে।’’

সিপিএম ও কংগ্রেসের তরফে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে রাজ্য নিবার্চন কমিশনে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও নিবার্চনী দফতরের এমসিসি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বীর বিক্রম রাই বলেন, ‘‘পক্ষপাত বা নিষ্ক্রিয়তার কোনও ব্যাপার নেই। আমরা যখন যেখান থেকে অভিযোগ পাচ্ছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি। পাশাপাশি, প্রতিদিন এমসিসি সেলের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে।’’

গত ২০ মার্চ এমসিসি সেলের পক্ষ থেকে অভিযান শুরু হয়। সবার প্রথমেই বামফ্রন্টের শরিক দল আরএসপি-র তরফে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলা হয়। শহরের ট্রেজারি ভবনের সামনে থেকে দলের জেলা সম্মেলনের হোর্ডিং খোলা নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। এমসিসি সেলের পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়, কোনও রাজনৈতিক দলের প্রচার সামগ্রী থাকার কথা নয়। এর পরেই কংগ্রেসের তরফে একই অভিযোগ তুলে সার্কিট হাউস থেকে সবর্দল বৈঠক বয়কট করেন জেলা কংগ্রেস নেতারা। এমনকী, সিপিএমের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে শাসক ঘনিষ্ঠ হওয়ার অভিযোগ তোলা হয়।

এমসিসি সূত্রের খবর, গত শুক্রবার শহরের এক বাসিন্দা ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ন’টি এলাকার ছবি দিয়ে মহকুমা শাসকের দফতরে অভিযোগ করে জানান, ওই ন’টি এলাকার সরকারি বাতিস্তম্ভ এবং টেলিফোনের খুঁটি-সহ বিভিন্ন এলাকায় ভোটের প্রচার করা হচ্ছে। যা আইনমাফিক নয়। সরকারি সূত্রের খবর, ওই অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধেই তিনি করেন। অভিযোগ পেয়ে অবশ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রচার সামগ্রী খুলে ফেলা হয়। এ ছাড়াও ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীকে সরকারি দেওয়াল বা সম্পত্তি থেকে সমস্ত প্রচার সামগ্রী খুলে ফেলারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘এমসিসি সেল কাজ করছে বলা হচ্ছে, তবে শাসক দলের অনেক কিছুই তো তাঁরা দেখতেই পাচ্ছে না। এখনও শহর জুড়ে সরকারি জায়গায় প্রচার চলছে। বিধি ভঙ্গের সংখ্যা থেকেই তা পরিষ্কার। রাজ্য কমিশনে চিঠি দিচ্ছি।’’

সরকারি সূত্রের খবর, এ দিনও ঝংকার মোড়, কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম, হাসমিচক, মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়ের মত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সরকারি বিজ্ঞাপন দেখা গিয়েছে। এমসিসি সেলের একাংশ কমীরা সেগুলি দেখেও কয়েকটি ক্ষেত্রে তা উঁচুতে থাকায় খুলতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। যা নিয়ে সেলের অন্দরেও বিতর্ক রয়েছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘শহরের মানুষ সব দেখছেন। সরকারি মাধ্যমকে ব্যবহার করে কীভাবে শাসক দলের প্রচার চলছে। সেগুলি খোলারও কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না।’’ আবার জেলা বিজেপির সভাপতি রথীন বসু জানান, তৃণমূল একচেটিয়াভাবে বিধিভঙ্গ করেই চলছে। এমসিসি সেলের কর্মীরা সঠিকভাবে কাজ করলে তৃণমূল কী করছে তা আরও পরিস্কার হবে।

যদিও বিরোধীদের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘‘এমসিসি সেল তো শুনেছি সঠিকভাবেই কাজ করছে। আমাদের কোনও অভিযোগ নেই। আর আমাদের প্রার্থীরা বিধি ভঙ্গ করলে এমসিসি সেল ব্যবস্থা নেবে। বিরোধীরা আসলে রাজনৈতিক কারণে ওই সব কথা বলছেন।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE