Advertisement
E-Paper

ঘরের শত্রুরাই অস্বস্তি মিহিরের

ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ে একরকম অন্তরালেই চলে গিয়েছিলেন। তাঁর ছায়াও যেন আর খুঁজে পাচ্ছিলেন না শত্রুরা। তবে লড়াইটা জারি ছিল। ‘মেঘনাদে’র মতো আড়াল থেকেই ছাড়ছিলেন ব্রহ্মাস্ত্র। সেই অস্ত্রেই দলের মধ্যে থাকা তাবড় শত্রুদের হারিয়ে কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের শাসক দলের প্রার্থী হয়েছেন মিহির গোস্বামী।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০৩:০৮

ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ে একরকম অন্তরালেই চলে গিয়েছিলেন। তাঁর ছায়াও যেন আর খুঁজে পাচ্ছিলেন না শত্রুরা। তবে লড়াইটা জারি ছিল। ‘মেঘনাদে’র মতো আড়াল থেকেই ছাড়ছিলেন ব্রহ্মাস্ত্র। সেই অস্ত্রেই দলের মধ্যে থাকা তাবড় শত্রুদের হারিয়ে কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের শাসক দলের প্রার্থী হয়েছেন মিহির গোস্বামী। কিন্তু জয় আসবে কি? প্রশ্নটা ঘুরে বেড়াচ্ছে শহর থেকে গ্রামে। ফিসফিস করে অনেকে বলছেন, “আবার তো সেই মেঘের আড়ালে যুদ্ধ চলছে। এবারে মিহিরবাবু সামনে। আড়ালে তাঁর শত্রুরা।”

এই শত্রু নিধনে মিহির কোনও খামতি রাখছেন না। সেই প্রথম যে দিন তাঁর নাম ঘোষণা করলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সে দিন থেকেই আসরে নেমেছেন তিনি। যেখানে যে অস্ত্রের প্রয়োজন চেষ্টা করছেন সেটাই ব্যবহার করার। অবশ্য তাতে কাজ খুব একটা হচ্ছে বলে মানতে পারছেন না কেউ। মিহিরবাবু কোনও রাখঢাক না করেই বলেন, “অনেক দিন বাইরে ছিলাম। সরাসরি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়নি। এখন সব জায়গায় যাচ্ছি। কিছু জায়গায় ভুল বোঝাবুঝি ছিল আমি তা মিটিয়ে দিয়েছি।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষও বলেন, “কোথাও দ্বন্দ্ব নেই। জেতার জন্য একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। দিদিকে জেলা থেকে ৯ টি আসন উপহার দেব।”

দলীয় সূত্রের খবর, মিহিরবাবু দলের অভিজ্ঞ নেতা। বাম আমলেও বিধায়ক ছিলেন তিনি। এবারে প্রার্থী হওয়ার পরেই গিয়েছিলেন কোচবিহার পুরসভার পুরপ্রধান রেবা কুন্ডুর বাড়িতে। তাঁর ছেলে শুভজিৎবাবুর (কাউন্সিলর) সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। দুধসাদা পাঞ্জাবি পড়ে একসঙ্গে হাত মিলিয়ে ছবি তুলে তা পোস্ট করেন ‘ফেসবুকে’। আবার যুব নেতা রানা বসু, অভিজিৎ দে ভৌমিকদের সঙ্গে রাস্তায় ভোট প্রচারে দেখা যায় মিহিরবাবাবুকে। শুভজিৎবাবুদের সঙ্গে অভিজিৎবাবুদের সম্পর্ক কারও অজানা নয়। শুভজিৎবাবু রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। গতবার আব্দুল জলিল আহমেদ কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। বাম প্রার্থীর কাছে তিনি অবশ্য হেরে গিয়েছিলেন। এবারে জলিল আহমেদ টিকিট পাননি। তাঁর স্ত্রী আমিনা আহমেদ কোচবিহার পুরসভার ভাইস চেয়ারপার্সেন। তাঁদের সঙ্গেও দেখা করেন মিহিরবাবু। জলিল আহমেদ অবশ্য প্রচার করছেন। মিটিং, মিছিলে দেখা যাচ্ছে তাঁকে।”

শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও তৃণমূলের দ্বন্দ্ব নজরে এসেছে। ঘুঘুমারি, সুটকাবাড়ি, হাড়িভাঙা, চান্দামারি, পুটিমারী ফুলেশ্বরী, চিলকিরহাট, পাটছড়া, ফলিমারি, মোয়ামারি-এই আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠী রয়েছে। সুটকাবাড়ি সিরাজুল হক এবং হোসেন আলি গোষ্ঠীর লড়াইয়ে একাধিকবার মারধর, ভাঙচুর থেকে বাইক পোড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটে। হোসেন আলি রবীন্দ্রনাথ-অনুগামী ও সিরাজুল হক আব্দুল জলিল আহমেদের অনুগামী বলে পরিচিত। মিহিরবাবু প্রতি দিন ব্লক সভাপতি খোকন মিঁয়াকে সঙ্গে নিয়ে দুই গোষ্ঠীকে মেলাতে আসরে নামেন। এটাও ঘটনা, প্রতিদিন এই হাত মেলানোর ছবি দেখা যেত ফেসবুকে। মিহিরবাবু নিজেই তা পোস্ট করতেন।

তাতেই কি আর সমস্যা মিটে গিয়েছে? মুচকি হাসছেন বিরোধীরা। ওই কেন্দ্রে জোটের প্রার্থী হয়েছেন দেবাশিস বণিক। প্রার্থী হিসেবে তিনি আনকোরা। বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই প্রথম। গত বছর ওই কেন্দ্র থেকে জয়ী বাম প্রার্থী অক্ষয় ঠাকুর। তিনি এবার দিনহাটায় প্রার্থী হয়েছেন। দেবাশিসবাবু বলেন, “প্রচারে বেরিয়ে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষ এবার আমার সঙ্গেই আছেন। শাসক দল শুধু গোষ্ঠীকোন্দলেই জেরবার নন, তাঁদের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ রয়েছে।” বিজেপি প্রার্থী নিখিল রঞ্জন দে’ও আশাবাদী। তিনি বলেন, “বাম ও তৃণমূল দু’পক্ষ থেকেই মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দলের খবর সবাই জানেন। এই অংশে কে কোনদিকে হলফ করে বলতে পারেন না কেউ। তাই আমি আশাবাদী।”

এমনিতেই জোট-শক্তি উজ্জীবিত। উপরন্তু, মেঘের আড়াল থেকে লড়াই চালাচ্ছে মিহির বিরোধী গোষ্ঠীও। তাতেই স্বস্তিতে নেই মিহির অনুগামীরা।

Mihir Goswami concerned worried TMC Inter clash Cooch Behar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy