Advertisement
১৯ মে ২০২৪
উত্তরে ভোটের হাওয়া

একদা দাদার ঘনিষ্ঠই এখন দিদির ভরসা

গত দার্জিলিং লোকসভা আসনে হারলেও ভাইচুং ভুটিয়ার উপরই শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে আস্থা রাখলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার বিকালে কালীঘাটে দলনেত্রীর ঘোষণার দিকে তাকিয়ে ছিলেন দলের জেলার নেতানেত্রীরা। সকাল থেকে বর্তমান বিধায়ক থেকে নানা নেতার নাম নিয়েও চলছিল জল্পনা কল্পনাও।

বদলে যায় ছবি। ২০১১ সালে অশোকবাবুর প্রচারে ভাইচুং।

বদলে যায় ছবি। ২০১১ সালে অশোকবাবুর প্রচারে ভাইচুং।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০২:২৭
Share: Save:

গত দার্জিলিং লোকসভা আসনে হারলেও ভাইচুং ভুটিয়ার উপরই শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে আস্থা রাখলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার বিকালে কালীঘাটে দলনেত্রীর ঘোষণার দিকে তাকিয়ে ছিলেন দলের জেলার নেতানেত্রীরা। সকাল থেকে বর্তমান বিধায়ক থেকে নানা নেতার নাম নিয়েও চলছিল জল্পনা কল্পনাও। শেষ অবধি ভাইচুং ভুটিয়ার নাম সাংবাদিক বৈঠকের শুরুর দিকেই তৃণমূল নেত্রী শিলিগুড়ির প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে দিতেই সব অবসান হয়। তার পরেই শুরু হয়ে যায় নানা আলোচনা, পর্যালোচনা।

দলীয় সূত্রের খবর, টিকিটের একাধিক দাবিদার, এসজেডিএ দুর্নীতির প্রচার, শিলিগুড়ি মডেল ছাড়াও শহরের মেয়র তথা সিপিএমের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের এক সময়কার ‘ঘনিষ্ঠ’ ভাইচুংকে ভোট যুদ্ধে নামিয়ে দিয়েই পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করলেন তৃণমূল নেত্রী।

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে অশোকবাবুই এবারও টিকিট পাচ্ছেন, আর তাঁকে লড়তে হবে তাঁর হয়ে এক সময় ভোটের তারকা প্রচারক ভাইচুং-এর বিরুদ্ধেই। প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম যে চমক তা মেনে নিয়েছেন ভাইচুং নিজেও। অশোকবাবু অবশ্য অস্বস্তি এড়িয়ে তৃণমূলের প্রার্থী নিয়ে তাঁর আগ্রহ বা উৎসাহ নেই বলেই জানিয়েছেন। তৃণমূলকে হারানোই লক্ষ্য বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন।

ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং বলেন, ‘‘ফুটবলে যেমন কোচের কথায় আমাকে ফরওয়ার্ড বা মিডফিল্ডে নানা সময়ে খেলতে হয়েছে। এখানেও মমতাদি আমার কোচ। আমি কী করব তা তো উনিই ঠিক করে দেবেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘অশোকবাবু শিলিগুড়ি থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে শুনেছি। উনি আমার বড় দাদার মতো। ভোটে কোনও ব্যক্তিগত কুৎসা বা প্রচার হবে না। পুরোটাই রাজনৈতিক লড়াই হবে। রাজ্য সরকারের কর্মকাণ্ডকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা শিলিগুড়ি থেকে জেতার জন্য লড়াই করব। কয়েকদিনের মধ্যে শিলিগুড়ি গিয়ে প্রচারে নেমে পড়ব।’’

বিকালে শাসক দলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতেই সিপিএম অফিসের সামনে থেকে ছাত্র, যুবরা তৃণমূলকে হঠানোর ডাক দিয়ে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন।

পার্টি অফিসে বসেই অশোকবাবুর রোজকার মতো কাজকর্মের ফাঁকে খোঁজখবর নিয়ে নেন। রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওঁদের কে দাঁড়াবে তাতে আমাদের কী! এতো রাজনৈতিক লড়াই। তৃণমূলকে যে কোনও মূল্যে হারাতে হবে। নির্বাচন কমিশন যে ভাবে ভোট করানোর কথা বলছে, তা হলে আমাদের জয় নিশ্চিত।’’

দলীয় সূত্রের খবর, গত কয়েক বছর ধরে এসজেডিএ-র দুর্নীতি তৃণমূলকে অনেকটাই অস্বস্তিতে ফেলেছে। বিধায়কের নাম নিয়ে বিরোধীদের প্রচার বাড়তে থাকে। পুরসভা, পঞ্চায়েত ভোটে এর ফল পায় বামফ্রন্ট। প্রায় ৮০ কোটি টাকার দুর্নীতিতে এসজেডিএ-র সিইও গোদালা কিরণ কুমার থেকে বাস্তুকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকারের মতো একাধিক সরকারি অফিসার, ঠিকাদের গ্রেফতার হন।

একাধিক তৃণমূল নেতাকে জেরাও করা হয়। তদন্ত সরকারই করাচ্ছে বলে তৃণমূল পাল্টা প্রচারে নামলেও তা অবশ্য কখনও তেমন জোরদার হয়নি। তাই বর্তমান বিধায়ককে আবার টিকিট দিলে প্রচার কোন দিকে যাবে, তা তৃণমূল শীর্ষ নেতানেত্রীরা আঁচ হয়তো করেছিলেন। দিনের শেষে টিকিট না পেলেও বিদায়ী বিধায়ক রুদ্রবাবু বলেন, ‘‘আমি তৃণমূল কর্মী। দলনেত্রীর নির্দেশে কাজ করব। ভাইচুং জনপ্রিয় প্রার্থী। এবারও আমরা শিলিগুড়িতে জিতব।’’

২০১৪ সালে লোকসভায় বিজেপির সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার কাছে ভাইচুং ভুটিয়া হেরেছিলেন প্রায় ১ লক্ষ ৯৭ হাজারের কিছু বেশি ভোটে। দলীয় সূত্রের খবর, পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণ, সমতল শিলিগুড়ি ফুটবলের জনপ্রিয়তা সব মিলিয়ে ভাইচুংকে প্রার্থী করা হয়। তবে লোকসভায় ৭টি বিধানসভা এলাকার মধ্যে ৬টিতেই পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। শুধু চোপড়া বিধানসভায় ভাল ফল হয়েছিল তৃণমূলের। আদতে সিকিমের বাসিন্দা ভাইচুং-এর পরিচিতি শিলিগুড়ি রয়েছে। তাঁর পেট্রোল পাম্পের অংশীদারি ব্যবসাও রয়েছে শহরে। দলের নেতারা জানান, তেমনই টিকিটের দাবি নিয়ে একাধিক নেতারা লড়াই করলেও দলনেত্রী কাউকে আমল দেননি। তেমনিই রাজনীতির ময়দানের বাইরের লোককে এনে ‘শিলিগুড়ি মডেলে’র টক্কর দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওই মডেলের যার নাম জড়িয়ে রয়েছে, সেই অশোক ভট্টাচার্যেরই।

শিলিগুড়ি পুর এলাকার ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়েই বিধানসভা কেন্দ্রটি। বর্তমান হিসাবে বামেরা তাতে ১৫টি, কংগ্রেস ৪টি এবং তৃণমূল ১৪টি আসনে জিতে রয়েছে। তাই ‘টক্কর’ ভালই হবে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ। গতবার, ২০১১ সালে পরিবর্তনের হাওয়ায় অশোকবাবু ৫০০৬ ভোটে হেরেছিলেন তৃণমূলের রুদ্রবাবুর কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

siliguri constituency election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE