Advertisement
E-Paper

সালিশি সভাতেই খুন তৃণমূল নেতা

সালিশি সভার মধ্যেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হলেন এক তৃণমূল নেতা। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কোচবিহারের কোতোয়ালি থানার বাণেশ্বরের বড়াইবাড়ি এলাকায় ওই সালিশি সভা বসে। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা রফিজুল ইসলামের প্রথম পক্ষের স্ত্রী রেজিনা বিবি তাঁকে মারধরের অভিযোগ করেন। রেজিনার পক্ষ নিয়েই সভায় সওয়াল করছিলেন আব্দুল হামিদ (২৮) নামে তৃণমূলের ওই স্থানীয় নেতা।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০২:৪৪
নিহত আব্দুল হামিদ। কোচবিহারের বাণেশ্বরে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

নিহত আব্দুল হামিদ। কোচবিহারের বাণেশ্বরে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

সালিশি সভার মধ্যেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হলেন এক তৃণমূল নেতা। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কোচবিহারের কোতোয়ালি থানার বাণেশ্বরের বড়াইবাড়ি এলাকায় ওই সালিশি সভা বসে। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা রফিজুল ইসলামের প্রথম পক্ষের স্ত্রী রেজিনা বিবি তাঁকে মারধরের অভিযোগ করেন। রেজিনার পক্ষ নিয়েই সভায় সওয়াল করছিলেন আব্দুল হামিদ (২৮) নামে তৃণমূলের ওই স্থানীয় নেতা। সে সময় রফিজুলের বাবা জব্বার আলি ও তাঁর আত্মীয়স্বজন বাড়ি থেকে কুড়ুল ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসে আক্রমণ করেন। তাতেই মারা যান হামিদ। এই ঘটনার পরে এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সালিশিতে বসে কোনও বিবাদ মেটানোর প্রথা বরাবরের মতো বন্ধ করে দেওয়া হবে। কোনও সমস্যা হলে তা প্রশাসনকেই সরাসরি জানানো হবে।

হামিদের বাড়ি বড়াইবাড়িতেই। তিনি তৃণমূলের বাণেশ্বর অঞ্চল কমিটির সদস্য। তাঁর সঙ্গে শাসক দলের এক পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী সহ জখম আরও ৩। তাঁদের কোচবিহার এমজেএন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অভিযুক্তরা অবশ্য গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। উত্তেজিত জনতা অভিযুক্তদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ও দমকল বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে পুলিশ প্রধান অভিযুক্ত জব্বারকে গ্রেফতার করেছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব জানান, বাকিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ৪ বছর আগে রফিজুল ইসলাম হরিণচওড়ার বাসিন্দা রেজিনা বিবিকে বিয়ে করেন। তাঁদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। দু’বছর আগে রফিজুল ফের বিয়ে করলে প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে গণ্ডগোল শুরু হয়। রেজিনা বিবি পুলিশে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। বছর খানেকে আগে রফিজুল তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে নিয়ে জয়গাঁ গিয়ে বসবাস শুরু করেন। এর মধ্যে রেজিনাকে রফিজুলের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। তা নিয়ে মাস খানেক আগে একবার স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতিতে জব্বারের বাড়িতে সালিশি সভা বসে। তাতে সমস্যার সুরাহা হয়নি। রেজিনা তাঁর অধিকারের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির সামনে সপ্তাহখানেক ধরে ধর্নায় বসেন। পরে জব্বারের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন।

রবিবার রাতে রেজিনাকে তাঁর শ্বশুর সহ কয়েকজন প্রচণ্ড মারধর করেন বলে অভিযোগ। তা নিয়েই এদিন সালিশি সভা ডাকা হয়। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী রঞ্জিত দাসের দাবি, “পরিবারের দুই পক্ষের মত নিয়েই এদিনের সালিশি সভা ডাকা হয়।” দুপুর ১২টা নাগাদ হামিদ, হামিদের ভাই হাইরুল হোসেন, রুমিতা বিবি সহ কয়েকজন সালিশি সভায় যান। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, হামিদ সহ তৃণমূলের নেতারা জব্বার অন্যায় করছেন বলে দাবি করায় দু’পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়। আচমকা জব্বার, তাঁর দুই ছেলে, স্ত্রী এবং এক আত্মীয় ঘর থেকে কুড়ুল সহ বেশ কিছু ধারাল অস্ত্র নিয়ে তৃণমূল নেতাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। সবাই পালাতে শুরু করেন। কিন্তু ধানের বীজতলায় কাদায় পা আটকে পড়ে যান হামিদ। সেখানেই তাঁর গলায় কুড়ুল দিয়ে তিনটি কোপ দেওয়া হয়। হাইরুলকেও কোপানো হয়। আঘাত করা হয় রঞ্জিতবাবু এবং রুমিতা বিবিকেও।

সালিশি সভায় রাজ্যে গণ্ডগোলের একাধিক ঘটনা রয়েছে। বীরভূমের লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সিপিএমের তিন কর্মীকে সালিশি সভায় ডেকে এনে খুনের অভিযোগ রয়েছে। সালিশি সভার নিদান মেনে ওই জেলাতেই গণধর্ষণের অভিযোগও উঠেছিল। তবে সালিশিতে মধ্যস্থতাকারীদের নিগ্রহ বা হত্যার নজির সাম্প্রতিক কালে নেই। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “বড়াইবাড়ির সভাটিকে সালিশি সভা হিসেবে দেখা ঠিক নয়। গ্রামের এক মহিলা অভিযোগ নিয়ে দলের প্রধান, পঞ্চায়েতদের কাছে গিয়েছিলেন। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা হচ্ছিল। তার মধ্যেই হামিদকে খুন করা হয়।”

namitesh ghosh abdul rahim arbitration tmc leader
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy