Advertisement
E-Paper

ভোটে কিছু হলে ফোন করতে বললেন অশোক

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা। শিলিগুড়ি পুরসভার হিলকার্ট রোডের পাশেই ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ডাঙিপাড়া। শেষদিনের বাড়ি বাড়ি প্রচারের ফাঁকে বেশিরভাগ বাসিন্দার হাতেই তিনি এগিয়ে দিলেন একটি ছোট কার্ড। দলীয় প্রচারের নানা বক্তব্যের সঙ্গেই বড় বড় করে তাতে লেখা তাঁরা মোবাইল নম্বর।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩১
প্রচারে অশোক ভট্টাচার্য।

প্রচারে অশোক ভট্টাচার্য।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা। শিলিগুড়ি পুরসভার হিলকার্ট রোডের পাশেই ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ডাঙিপাড়া। শেষদিনের বাড়ি বাড়ি প্রচারের ফাঁকে বেশিরভাগ বাসিন্দার হাতেই তিনি এগিয়ে দিলেন একটি ছোট কার্ড। দলীয় প্রচারের নানা বক্তব্যের সঙ্গেই বড় বড় করে তাতে লেখা তাঁরা মোবাইল নম্বর। তরুণ যুবক থেকে বৃদ্ধ, মহিলা সকলকেই বললেন, ‘‘নম্বরটা মোবাইলে রাখবেন। বাড়িতেও লিখে রেখে দেবেন নম্বরটা। কোনও দরকারে তো টেলিফোন তো করবেই, আর ভোটের দিনও কিছু মনে হলেই ফোন করবেন। আমি চলে আসব। কোনও চিন্তা নেই।’’

প্রার্থীর নাম-অশোক ভট্টাচার্য। দুই দশকের সিপিএমের রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী ও শহরের ২০১১ সাল অবধি বিধায়ক। সাতাশ বছর পর এবার তিনি পুরসভা ভোটের লড়াইয়ে সরাসরি ভোটের ময়দানে।

মাস খানেক আগেই তাঁকে মেয়র পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে দিয়েছে বামেরা। কার্যত নাওয়া খাওয়া ছেড়ে সকাল থেকে রাত অবধি ঘুরে বেড়িয়েছেন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। পথসভা, গ্রুপ মিটিং, পদযাত্রা কিছুই বাদ রাখেননি। তবে শেষদিনের প্রচারে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেন নিজের ছয় নম্বর ওয়ার্ডেই। এর ফাঁকে সাত সকালে একবার ২২ নম্বর ওয়ার্ডে মিছিল বা কয়েকবার ওয়ার্ডের পাশেই থাকা দলের জেলা দফতরে গিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্মী, সমর্থকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বিকাল নাগাদ তিনি শাসকের বিরুদ্ধে বহিরাগত ‘আমদানি’ করে সন্ত্রাসের আশঙ্কার অভিযোগ করে সাংবাদিক বৈঠকও করেছেন।

দলীয় সূত্রের খবর, শাসক দলের প্রার্থী তো আছেই, একাধিক নির্দল, কংগ্রেস, বিজেপি’র প্রার্থী রয়েছেন অশোকবাবুর ওয়ার্ডে। গতবার জোটের প্রার্থী হিসাবে ওয়ার্ডে জেতেন কংগ্রেস প্রার্থী। আর এবার ‘বহিরাগতদে’র দিয়ে সন্ত্রাসের আশঙ্কাও করেছেন বাম নেতাদের অনেকেই। সেখানে কর্মীদের নিয়ে প্রচারের শেষ সময় অবধি মানুষের কাছে গিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরার হাতছাড়া করতে চাননি অশোকবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সবার থেকে আগে প্রচার শুরু করেছি। প্রায় ১০০ শতাংশ মানুষের কাছে বারেবারে গিয়েছি। ভয়, ভীতি উপেক্ষা করে সকলকে ভোট দিতে বলেছি। এদিন অবশ্য একটু নিজের ওয়ার্ডেই বেশি নজর দিয়েছি। সবাইকে বলেছি, আমি আপনাদের পাশেই আছি।’’

উল্লেখ্য, পরিবর্তনের হাওয়ায় ২০১১ সালে অশোকবাবু প্রথমবার শিলিগুড়ি থেকে হেরে গেলেও এই ওয়ার্ড থেকে তিনি ‘লিড’ পেয়েছিলেন। সেই দিকটাই মূলত মাথায় রেখেই এই সিপিএম নেতা নিজেই বেছে নিয়েছিলেন মিশ্র সম্প্রদায়ের বসবাসের ওয়ার্ডটি।

সকাল পৌণে আটটা নাগাদ ছানা এবূং মুড়ি খেয়ে অশোকবাবুর এদিনের সকাল শুরু হয়। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের দাবি মেনে একটি মিছিলে খানিকক্ষণের জন্য থেকে সোজা চলে আসেন, মহাবীরস্থান উড়ালপুল লাগোয়া মজসিদে। সেখানে থাকা এলাকায় হাজি সাহেব হিসাবে পরিচিত মহম্মদ আজিজকে নিয়ে চপ্পলপট্টি এলাকায় শুরু করেন প্রচার। সঙ্গে ছিলেন শুধু তাঁর ওয়ার্ডের সর্বক্ষণের সঙ্গী শুভ্র দেব। কোনও সময় কোনও টায়ারের দোকান, কোনও সময় দর্জির দোকান, কখনও বাড়িতে ঢুকে ভোটের আবেদন জানান। নিজের মোবাইল নম্বরের কার্ডটা দেন। ডাঙিপাড়া, কুরেসিমহল্লা, মহানন্দপাড়া একাংশ দিনভর চষে বেড়ান অশোকবাবু। এর সঙ্গেই তাঁর সঙ্গে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে অনুগামী, কর্মীদের সংখ্যাও।

আবার কোনও সময় এলাকায় নির্বাচনী দফতরে বসে লাল চা’য়ে গলা ভিজিয়ে হাঁটা দেন অন্য প্রান্তে। রাস্তায অন্য দলের নেতা কর্মীদের প্রচারে দেখেও হেসে শুভেচ্ছাও জানান। পরিচিত লম্বা কালো পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা আর পায়ে চটি দিনভর একই পোশাকে ঘোরার পর বিকাল নাগাদ উল্টো দিকে জেলা অফিসে ঢুকে লাল চা দিয়ে এক দফায় বিস্কুট আর একবার রুটি তরকারি খেয়ে নেন। উড়ালপুল এলাকায় একটিই ছোট্ট পথসভা করে তাঁরা শিলিগুড়িতে কী করেছেন, আগামী দিনে কী করতে চান তা বিশদে হিন্দিতে ব্যাখ্যাও করেন। সন্ধ্যা থেকে ফের দফায় দফায় ওয়ার্ডে গিয়ে কর্মীদের রাতের নজরদারি, খোঁজখবর রাখার নির্দেশও দেন।

অশোকবাবুর এই প্রচার দেখে ওয়ার্ডের বিরোধীদের অনেকেই অবশ্য বলেছেন, ‘‘উনি খুব চাপে পড়ে গিয়েছেন মনে হচ্ছে।’’ আর অশোকবাবুর বক্তব্য, ‘‘চাপ তো ভোটে থাকাটাই স্বাভাবিক। শাসক দলকে আমি কোনও সুযোগ দিতে চাই না। আমি কেন সব ওযার্ডেই বামপ্রার্থীরা একইভাবে ওয়ার্ডে ঘুরেছেন।’’

কাল, শনিবার সকাল ৭ টা থেকে আটঘ্টার ইভিএমে লড়াই শুরু। হারজিৎ কী হবে তা এলাকার মানুষ ঠিক করলেও অশোকবাবু যে শেষ দেখেই ছাড়বেন তা এদিন দিনভর ঠারেঠারে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

ashok bhattacharya unfair poll siliguri election rigging ashok bhattacharya mobile number siliguri corporation poll 2015 kaushik choudhuri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy