Advertisement
E-Paper

পাল্টে দিতে যুদ্ধ সূর্য সেন কলেজে

কর্তৃপক্ষের আবেদনে সাড়া দিয়ে যোগ্যতা না থাকলেও পাস করানো কিংবা হাজিরা না থাকলেও পরীক্ষায় বসাতে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কলেজের পড়ুয়ারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০২:৫০
কলেজ: পরিষ্কার, ঝকঝকে কলেজ ভবন। নিজস্ব চিত্র

কলেজ: পরিষ্কার, ঝকঝকে কলেজ ভবন। নিজস্ব চিত্র

প্রয়োজনীয় হাজিরা না থাকলেও পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিতে কলেজের অধ্যক্ষ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ঘেরাওয়ের ঘটনা নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও এমনই ঘটনা ঘটেছে। এই সময়েই উল্টোপথে শিলিগুড়ির সূর্য সেন কলেজ। কর্তৃপক্ষের আবেদনে সাড়া দিয়ে যোগ্যতা না থাকলেও পাস করানো কিংবা হাজিরা না থাকলেও পরীক্ষায় বসাতে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কলেজের পড়ুয়ারা। তাই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে ফেল করা ও গরহাজির থাকা ১২০০ জন ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকদের তলব করতে পেরেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ইউনিট টেস্টে ফেল করেছিলেন যাঁরা, তাঁদের প্রত্যেককে ফের পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে হয়েছে।

অথচ অতীতে ওই কলেজের নাম শুনলেই পড়ুয়া ও অভিভাবকদের অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তেন। কলেজের ক্লাসরুম মানেই ছিল যথেচ্ছ পানের পিক, সিগারেট-বিড়ির টুকরো, পান মসলার খালি পাউচ। প্রায় ৫ হাজার ছাত্রছাত্রীর কে, কখন আসছেন, কখন যাচ্ছেন তা তদারকির কোনও সুষ্ঠু ব্যবস্থাই ছিল না। ফি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাতে হোঁচট খেতেন প্রায় অর্ধেকই। ঘেরাও, বন্‌ধ, বোমাবাজি, মারপিট, রক্তারক্তির ঘটনাও ঘটেছে।

দু’বছর আগে শিলিগুড়ি পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের সম্পাদক গোপাল সরকারকে নিয়ে অন্তত ২০ বার বৈঠক করেন। কলেজ মানেই ‘আড্ডা, পান-সিগারেট খাওয়া, সিনেমা দেখা,’ এটা চলবে না বলে জানিয়ে দেন সভাপতি। নিয়মের বেড়াজালে বাঁধতে চাইলে পড়ুয়ারা আন্দোলনের হুমকি দেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়কে পাশে ডেকে নেন কৃষ্ণবাবু। অধ্যক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরাও কলেজের পরিবেশের মান বাড়ানোর ওই উদ্যোগে যুক্ত হন।

এরপরেই কলেজের ছাত্র সংসদকে নিয়ে বসে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, কলেজের ইউনিট টেস্টে পাস না করা পর্যন্ত চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না কাউকে। যতক্ষণ না কেউ ইউনিট টেস্টে পাস করছে তাঁকে প্রয়োজনে ১০ বার ৫০ নম্বরের পরীক্ষায় বসে পাস করতে হবে। দ্বিতীয়ত, কলেজে হাজিরার হার ৭৫ শতাংশ না থাকলে কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না।

এখন গোটা চত্বর পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। রাজ্যে সরকার অনুমোদিত এটিই প্রথম কলেজ যেখানে ‘ড্রেস কোড’ চালু হয়েছে। হালকা আকাশি শার্ট, নেভি ব্লু প্যান্ট।

ছাত্রীরা চাইলে ওই রঙের কুর্তি-চুড়িদার পরতে পারেন। পড়ুয়াদের মাথা পিছু ১ লক্ষ টাকা দুর্ঘটনাজনিত বিমার প্রিমিয়াম দেয় কলেজ। কলেজই সস্তায় ব্লেজারও দিচ্ছে। কোনও পড়ুয়ার সামর্থ না থাকলে আবেদন করলেই বিনা খরচে পোষাক দেওয়া হচ্ছে। ৩২টি সিসি ক্যামেরা বসিয়ে অধ্যক্ষ প্রণব কুমার মিশ্র দিনভর নজর রাখেন কোথায় কী হচ্ছে।

পরিচালন সমিতির সভাপতি বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী এবং অভিভাবকদের সামিল করে এগোলে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পাল্টে যেতে পারে তার দৃষ্টান্ত হতে পারে আমাদের কলেজ।’’

Surya Sen Mahavidyalaya Attendance Pass-Fail Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy