Advertisement
E-Paper

বাধা ডিঙিয়ে জয় দৃষ্টিহীন সহোদরদের

একে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, অন্য দিকে আর্থিক অনটন। অদম্য ইচ্ছে শক্তি ও মনের জোরকে সম্বল করে লক্ষ্যে অবিচল থাকলে ওই বাধার পাহাড়ও অবশ্য কোনও সমস্যা নয়। কোচবিহার টাউন হাইস্কুলের দুই দৃষ্টিহীন সহোদর এ বার উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করে যেন সেটাই প্রমাণ করে দিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০৩:০৪
প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে রিতেশ ও অরুণ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে রিতেশ ও অরুণ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

একে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, অন্য দিকে আর্থিক অনটন। অদম্য ইচ্ছে শক্তি ও মনের জোরকে সম্বল করে লক্ষ্যে অবিচল থাকলে ওই বাধার পাহাড়ও অবশ্য কোনও সমস্যা নয়। কোচবিহার টাউন হাইস্কুলের দুই দৃষ্টিহীন সহোদর এ বার উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করে যেন সেটাই প্রমাণ করে দিলেন। ওই দুই ছাত্রের নাম অরুণ মিনজ ও রীতেশ মিনজ। মাধ্যমিকে দু’জনেই ৮০ শতাংশের বেশী নম্বর নিয়ে পাশ করেছিলেন। এ বার উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর খানিকটা কমেছে। তবে হাজারো প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে দুই জনে পাশ করায় খুশি পরিবারের লোকেরা। স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরাও তাঁদের সাফল্যে খুশি। কোচবিহার টাউন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থসারথি রায় বলেন, “ নবম শ্রেণী থেকে অরুণ ও রীতেশ আমাদের স্কুলে পড়াশোনা করছে। মাধ্যমিকে দুই জনেই তাক লাগান নম্বর পেয়েছিল। এবার উচ্চমাধ্যমিকে তাই ওদের আরও ভাল নম্বর আশা করেছিলাম। আর্থিক সমস্যা সহ নানা কারণে এবার স্কুলে পুরোপুরি উপস্থিত থাকতে না পারাতেই এমনটা হয়েছে মনে হচ্ছে। তবে সামগ্রিকভাবে ওরা পাশ করায় একটা আলাদা আনন্দ তো হচ্ছেই।” উচ্চমাধ্যমিক সংসদের কোচবিহারের প্রতিনিধি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “ শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের মত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় ওদের পাশ করাটাই বড়প্রাপ্তি, গর্বের।”

ওই স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, অরুণ ও রীতেশের বাড়ি জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা থানার নয়াসাইলি চা বাগান এলাকায়। বাবা লিম্পার মিনজ চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করেন, মা অনিতা মিনজ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। চার ভাই, বাবা-মা মিলে ছয় জনের অভাব-অনটনের দৈনন্দিন সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর জোগাড়। তারমধ্যে মিনজ দম্পতির সন্তানদের মধ্যে সবার বড় অরুণ ও দ্বিতীয় সন্তান রীতেশ ছোটবেলা থেকেই দৃষ্টিহীন। কোচবিহারের এনইএলসি ব্লাইন্ড স্কুলে তাঁদের পড়াশোনার হাতে খড়ি। সেখান থেকেই অষ্টম শ্রেণী পাশ করে কোচবিহার টাউন হাইস্কুলে ভর্তি হন দু’ভাই।

পুরানো স্কুলের হস্টেলে থেকে ‘ব্রেইল’ পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেন তাঁরা। আর্থিক অনটনের জন্য মাঝেমধ্যে নাগরাকাটার বাড়িতে থাকতে হত। অনেক সময় টাকার সমস্যায় গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসের দিন স্কুলে আসাও দুই ভাইয়ের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তারপরেও দুই ছেলের এমন সাফল্যে খুশি তাঁদের মা অনিতা মিনজ বলেন, “ এবার কলেজের পড়াশোনা কিভাবে কতটা চালাতে পারব সেটা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগে পড়েছে।” অরুণ, রীতেশরাও জানান, মাধ্যমিকের পর শুভানুধ্যায়ীদের সাহায্য এসেছে বলে তবু উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা গিয়েছে। এবারেও সহৃদয় কেউ পাশে দাঁড়ালে ভাল হতো।

উচ্চ মাধ্যমিকে অরুণের প্রাপ্ত নম্বর ২৭৪। বাংলায় ৬১, ইংরেজিতে ৫০, সংস্কৃতে ৫৫ , দর্শনে ৫৩ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সে ৫৫ নম্বর পেয়েছে। ভবিষ্যতে ফিজিওথেরাপিস্ট হয়ে সাবলম্বী হতে চান তিনি। তাঁর আগে অবশ্য বাংলায় অনার্স নিয়ে কোচবিহারের কোন কলেজেই পড়ার ইচ্ছের কথাও জানিয়েছেন। ছোটভাই রীতেশের প্রাপ্ত নম্বর ২৮২। বাংলায় ৭০, ইংরেজিতে ৫০, দর্শনে ৫১, সংস্কৃতে ৫৮ নম্বর , রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৫৩ নম্বর পেয়েছেন তিনি। রীতেশের ইচ্ছে শিক্ষকতা করার। দুইভাই একসুরে বলেন, “ আপাতত কোচবিহারের কোন কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশোনার ইচ্ছে রয়েছে। জানি না শেষপর্যন্ত কতটা কি হবে!”

Cooch Behar blind Town high school Jalpaiguri Tea garden Nagrakata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy