Advertisement
E-Paper

সঙ্কটে রক্ত দিলেন জাহাঙ্গির, আখতার

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর দিদার ওই অসহায় অবস্থা দেখে পাশে এসে দাঁড়ালেন অচেনা দুই যুবক।

জয়ন্ত সেন

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ১৩:৪২
আখতার শেখ (বাঁ দিকে) ও মহম্মদ জাহাঙ্গীর শেখ। নিজস্ব চিত্র।

আখতার শেখ (বাঁ দিকে) ও মহম্মদ জাহাঙ্গীর শেখ। নিজস্ব চিত্র।

মিটেছে লোকসভা নির্বাচন। মিটেছে ভোট গণনাও। এমনকি নির্বাচনী আচরণবিধিও উঠে গেছে। কিন্তু তারপরেও ব্যাপক রক্তসঙ্কট চলছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে। মঙ্গলবার সকালে ব্লাডব্যাঙ্কে থাকা ডিসপ্লেবোর্ডে ‘ও’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত রয়েছে মাত্র এক ইউনিট। আর সবের ভাড়ার শূন্য। ডোনার ছাড়া রক্ত মিলছেই না। অসহায় হয়ে ব্লাডব্যাঙ্কের সামনে ঘোরাঘুরি করছেন অসংখ্য রোগীর পরিবার।

থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ৭ বছরের নাতনির জন্য মাত্র এক ইউনিট রক্ত মেলার আশায় এদিন ব্লাডব্যাঙ্কের সামনে বসে কাঁদছিলেন কালিয়াচকের মাহাজুরা বিবি। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর দিদার ওই অসহায় অবস্থা দেখে পাশে এসে দাঁড়ালেন অচেনা দুই যুবক। রক্তের গ্রুপও মিলে গেল। রোজা ভেঙে ওই শিশুর জন্য রক্ত দিয়ে মানবিকতার নজির গড়লেন কালিয়াচক ২ ব্লকের গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামের দুই মুসলিম যুবক মহম্মদ জাহাঙ্গির শেখ ও আখতার শেখ।

রতুয়ার বাহারাল গ্রামের বাসিন্দা আবু হায়াতের একমাত্র মেয়ে জারিয়া খাতুন। আবু ভিন রাজ্যে কাজ করেন। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ওই জারিয়ার শরীরে রক্ত দিতে হবে বলে বেশ কিছুদিন আগেই মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটে নাম লিখিয়ে গিয়েছেলেন মা জান্নাতুন বিবি। কিন্তু হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে ব্যাপক রক্তসংকট চলায় রক্ত দিতে ডাক আর পড়েনি জারিয়ার। এদিকে রক্ত কমতে থাকায় ছোট্ট জারিয়ার শরীর ফ্যাকাসে হতে শুরু করেছিল। উপায়ন্তর না দেখে মঙ্গলবার সকালেই জারিয়াকে নিয়ে মালদহের থ্যালাসেমিয়া ইউনিটে চলে আসেন তাঁর দিদা কালিয়াচকের সিলামপুরের বাসিন্দা মাহাজুরা বিবি। তিনি বলেন, “ইউনিট থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত সঙ্কট চলছে। ফলে ডোনার যোগাড় না করে আনলে রক্ত মেলা ভার।” অগত্যা রক্ত যোগাড়ের আশায় গ্রামে ফোনাফুনি করেন মাহাজুরা। কিন্তু তা কাজে আসেনি। কী হবে ভেবে হতাশায় ভুগে ব্লাডব্যাঙ্কের সামনেই বসে কাঁদছিলেন মাহাজুরা। হঠাৎ সেখানে আসেন মোথাবাড়ির ওই দুই যুবক জাহাঙ্গির ও আখতার।

তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁরা একই এলাকার বাসিন্দা হলেও দু’জনেই পৃথকভাবে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি তাঁদের দুই আত্মীয়কে দেখতে এসেছিলেন। রোজার মধ্যে তাঁরা দু’জন রোগীকে দেখেই বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সে সময়ই ব্লাডব্যাঙ্কের সামনে বয়স্ক এই মহিলাকে কাঁদতে দেখেন তাঁরা। কী ঘটনা হয়েছে জানতে পেরে তাঁরা দু’জনেই রক্ত দেওয়ার জন্য রাজি হয়ে যান। রোজা ভেঙেই রক্ত দেন তাঁরা। অদ্ভুত ভাবে ওই শিশুর সঙ্গে রক্তের গ্রুপও মেলে তাঁদের। রক্ত দিয়ে ছোট্ট ওই জারিয়াকে আপাতত প্রাণে বাঁচিয়ে বাড়ি ফিরে যান তাঁরা। মাহাজুরা বিবি বলেন, “আমরা এর আগেও অনেকবার ডোনার যোগাড় করে জারিয়াকে রক্ত দিয়েছি। কিন্তু দিন কয়েক ধরে ডোনার আর যোগাড় করতে পারছিলাম না। এদিন দুই যুবক ফরিস্তার মতো এসে আমার নাতনির জীবন রক্ষা করল। তাঁদের সালাম জানাই।” থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিট সূত্রে জানা গিয়েছে, এক ইউনিট রক্ত শরীরে টেনে বেলা দুটো নাগাদ ইউনিট ছেড়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে জারিয়া। আর ওই দুই যুবক বলেন, “এক বৃদ্ধা তার নাতনিকে বাঁচাতে রক্তের জন্য হাহাকার করছিলেন। তা দেখে আর সামলাতে পারিনি। রোজা থাকলেও তা ভেঙেই রক্ত দিলাম আমরা।”

মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার অমিত দাঁ বলেন, “ওই দুই যুবক মানবিকতার নজির গড়লেন। তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি আমরা অভূতপূর্ব রক্তসঙ্কট মেটাতে সকলকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেছি।”

Blood Donation Malda মালদহ Thalassemia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy