Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের কড়চা

এবং বিকল্প

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৯
Share: Save:

এবং বিকল্প

উত্তর এবং দক্ষিণ দুই বঙ্গের লেখকদের লেখা নিয়েই প্রকাশিত হল ‘এবং বিকল্প’। মালদা থেকে প্রকাশিত ওই পত্রিকার এটি ২৭ তম সংকলন। নবারুণ ভট্টাচার্যের কাব্যগ্রন্থ ‘অতন্দ্র বিমান’ রয়েছে। সঙ্গে অরুণেশ ঘোষ, মলয় রায়চৌধুরীর রচনাও রয়েছে। অরুণেশ এবং মলয় ‘হাংরি আন্দোলনের’ লেখক বলেও পরিচিত। মলয় রায়চৌধুরীর বিশেষ রচনা ‘চাইবাসা ও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রেম’ রয়েছে। অরুণেশের অপ্রকাশিত রচনা ‘ফ্রানৎস কাফকার ভাবশিষ্যের সন্ধানে অথবা নাড়ুদার খেরোর খাতা’ রয়েছে ওই সংকলনে। পত্রিকার সম্পাদক রাজীব সিংহের উপন্যাস ‘দ্রোহপর্ব’, ছোট গল্প, কবিতা স্থান পেয়েছে। পত্রিকা সম্পাদক জানান, বছরে একটি করে সংখ্যা বের করা তাঁদের লক্ষ্য। পত্রিকার পক্ষ থেকে রণজিৎ দাস এবং সেবন্তী ঘোষকে ‘এবং বিকল্প কবি জীবনানন্দ স্মারক সম্মান’ দেওয়া হয়।

উত্তরের কণ্ঠ

উত্তরবঙ্গের জনজীবন ও সংস্কৃতি নিয়ে যাঁরা চর্চা করছেন, তাঁদের প্রকাশিত বই, নিবন্ধের পর্যালোচনা করেছেন সৌমেন নাগ। তাঁর প্রবন্ধ ‘উত্তরবঙ্গ এখন নিজের কথা নিজেই বলতে চাইছে’ প্রকাশিত হয়েছে গ্রন্থসমালোচনা পত্রিকা ‘বিতর্কিকা’-য় (জুন ২০১৫)। সৌমেনবাবুর আলোচনায় এসেছে আনন্দগোপাল ঘোষের ‘উত্তরবঙ্গ নামের সন্ধানে’, দেবব্রত চাকীর ‘ব্রাত্যজনের বৃত্তান্ত,’ রজতশুভ্র মুখোপাধ্যায়ের রাজবংশী এবং অন্যান্য জনজাতির উপর লেখা বই। ডিসি রায় সম্পাদিত উত্তরবঙ্গের অর্থনীতি নিয়ে একটি বইও সৌমেনবাবু তালিকায় রেখেছেন। আলোচিত বইয়ে সংকলিত নিবন্ধগুলির উপরে আলোকপাত করেছেন তিনি। তাঁর সিদ্ধান্ত, ‘‘উত্তরবঙ্গ নিজেই যে সেই একটা উত্তরবঙ্গীয় পরিচয় নিয়ে ক্রমশ একটা পৃথক সত্তার উপস্থিতি দিতে চাইছে তার প্রমাণ, উত্তরবঙ্গ নামকে সামনে রেখে উত্তরবঙ্গর নানা প্রসঙ্গ নিয়ে লেখক এবং গবেষকরা যে ভাবে বই প্রকাশে এগিয়ে আসছেন তা কয়েক বছর আগেও দেখা যায়নি।’’ বিতর্কিকার এই সংখ্যার বিষয়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গঃ এই সময়।’’

ফিরে চাই

একটি নাটকের খোঁজে বসে মঞ্চ। আজ দুই দশকের বেশি সময় ধরে। ফালাকাটা পোস্ট অফিস মাঠের মুক্ত মঞ্চের নাটক দেখতে এক সময় শহর–গ্রাম উজাড় করে দর্শকরা ভিড় করতেন। আসন না-পেয়ে গাছের ডালে বসে নাটক দেখতেন অনেককে। পনেরো দিন অন্তর রবিবার মুক্ত মঞ্চে হত নাটক। ফালাকাটার ছ’টি নাট্য দল বাদেও পলাশবাড়ি ও ভুটনিরঘাট গ্রামের নাট্যগোষ্ঠী নাটক পরিবেশন করতেন। ১৯৮০ থেকে এক দশক চলার পর ১৯৯১ সালে বন্ধ হয়ে যায় মুক্ত মঞ্চ। কেন? আটের দশকের শেষে শহরের বাড়িবাড়ি টেলিভিশনের প্রবেশকেই দায়ী করছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু মুক্তমঞ্চের স্মৃতি আজও নাড়া দেয় ফালাকাটার বাসিন্দাদের। তাঁদের প্রশ্ন, টেলিভিশন, ইন্টারনেটের যুগেও তো বহু জায়গায় স্বমহিমায় ফিরে এসেছে নাটক। তাহলে ফালাকাটাই বা মুক্তমঞ্চ ফিরে পাবে না কেন?

নীরব কথা

ওঁদের দেখলে মনে পড়ে যায় সঞ্জীব কুমার, জয়া ভাদুড়ি অভিনীত ‘কোশিশ’ ছবির কথা। যেখানে মূক-বধির এক দম্পতি ভালবাসার ভাষায় কাছাকাছি আসে। মালদহের চাঁচলের রায়হান জাহিদ, ওরফে রানা আর তার স্ত্রী, দু’জনেই জন্ম থেকে মূক ও বধির। বিয়ের ১৪ বছর পার করলেন। বারগাছিয়া পল্লির রানা-বেবিকে চেনেন না, এমন লোক এলাকায় নেই। দু’জনেই খুব গুণী। বাঁশ, বেত, চাটাইয়ের কাজে পারদর্শী রানা। অনেকের ঘরে রয়েছে তাঁর হাতের তৈরি বাঁশের আলমারি, সোফা। আর বেবি মেয়েদের পোশাক তৈরিতে হাত পাকিয়েছেন। ইশারাতেই চলে ক্রেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা। এক সময় বাড়িতে ভাড়া ছিলেন চাঁচল কলেজের প্রয়াত প্রাক্তন অধ্যক্ষ শশীকান্ত চক্রবর্তী। তাঁর নাটকের দলের প্রচুর নাটক হত চাঁচলে। তখন থেকে মঞ্চসজ্জার কাজেও দক্ষ হয়ে ওঠেন রানা।

বাঁচার ঠিকানা

আজীবন শিক্ষকতা করে এসেছেন। কোনও দিন টিউশানি করেননি। ৭৬ বছর বয়সেও তিনি তাঁর শিক্ষিকার আদর্শ থেকে সরে আসেননি। ইন্দিরা সেনগুপ্ত এখন জলপাইগুড়ি শহরের নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের একাংশকে নিয়ে পড়াশোনা, অভিনয়, আবৃত্তি, গান, ছবি আঁকা শেখাচ্ছেন। গড়ে তুলেছেন ‘বাঁচবো বাঁচাবো’ সংগঠন। তাঁকে সহায়তা করছেন তাঁর অসংখ্য ছাত্রী। ইন্দিরাদেবী জানান, রাজমিস্ত্রী, ঠেলা চালক, রিকশা চালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিচারিকার কাজ যাঁরা করেন, তাঁদের ছেলেমেয়েরা তাঁর কাছে অভিনয়, গান, আবৃত্তি, ছবি আাঁকা, হাতের কাজে অংশ নিচ্ছে। ‘‘ওরা যেখান থেকে আসছে সেখানে এগুলো শেখা সম্ভব ছিল না। ওরা এখানে এসে নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছে,” বলেন তিনি। জলপাইগুড়ির মেয়ে। জন্ম ১৯৩৯ সালের মার্চ মাসে। জলপাইগুড়ির সুনীতিবালা সদর বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা, উচ্চশিক্ষা শেষ করে জলপাইগুড়ির সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ১৯৬৪ সালে যোগদান করেন। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত সেখানে কাটিয়ে কলকাতার নিউ আলিপুরের মাল্টিপার্পাস গার্লস স্কুলে যোগদেন। ১৯৯৮ সালে কলকাতায় পিটিটিআই ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে এক বছর অধ্যক্ষার কাজ করে ১৯৯৯ সালে অবসর নেন। স্বামী উৎপল সেনগুপ্ত তাঁর কাজে সহায়তা করেন। ২০০৬ সালে পাকাপাকিভাবে জলপাইগুড়িতে এসে রেসকোর্স পাড়ায় নিজের বাড়িতেই শুরু করেন ‘বাঁচবো বাঁচাবো’ সংগঠন। সেখানে নিয়মিত আসে শর্মিষ্ঠা, মৌসুমী, মুকুন্দরা। ১২ বছর বয়সী শর্মিষ্ঠার মা নেই। তাকে বাড়ির যাবতীয় কাজ করে স্কুলে যেতে হয়। আট বছর বয়সী মৌসুমীর মা রান্নার কাজ করেন। বাবা রাজমিস্ত্রী। ছ’বছর বয়সী মুকুন্দের মা রোগীর পরিচর্যা করেন। আরও অনেক শনি, রবি ও বুধবার এখানে এসে পড়াশোনা ছাড়াও নাচ-গানের পাঠ নেয়। মহালয়ার দিন আনন্দমেলার অনুষ্ঠান হয়। সেদিন তাদের পুজোর জামাকাপড় দেওয়া হয়। একদিন সকলে মিলে বনভোজন হয়। দরকার বই-খাতাও কিনে দেওয়া হয়। ‘বাঁচবো বাঁচাবো’-র সদস্যদের একজন এ বার মাধ্যমিক, চারজন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE