এ মাসের শুরুতেই তৃণমূল ‘হঠানো’র ডাক দিয়ে ইস্তাহার প্রকাশ করে পুরোদমে প্রচারে নেমে পড়েছেন বামেরা। প্রচারে নেমেছে তৃণমূলও। কিন্তু এখনও কোনও ইস্তাহার প্রকাশ করতে পারেনি তারা। অথচ, ভোটের আর খুব বেশি দিন বাকি নেই। এই অবস্থায় তৃণমূলের শিলিগুড়ির পুরসভার ইস্তাহার এখনও প্রকাশ না হওয়ায় দলীয় নেতা-কমীর্দের একাংশের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, প্রচারের একেবারে শেষলগ্নে ইস্তাহার প্রকাশ কতটা কার্যকরী হবে বা বাসিন্দাদের তা দিয়ে কতটা আকর্ষণ করা যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, শিলিগুড়ির ইস্তাহার মাসের শুরুতেই প্রকাশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চার বছরের সাফল্য আরও বেশি করে সংযোজনের নির্দেশ দেন প্রদেশ নেতৃত্ব। বিষয়টি নিয়ে দলের অন্দরেও নানা আলোচনা শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত ইস্তাহারে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভলপমেন্ট অথারিটি (এসজেডিএ), উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মাধ্যমে শিলিগুড়ি পুর এলাকায় কত কাজ হয়েছে সেটা গুরুত্ব পেয়েছিল। দুটিরই মাথায় আছেন মন্ত্রী গৌতম দেব। পরে কলকাতা পুরসভার ইস্তাহার এবং গতবারের ইস্তাহারকে সামনে রেখে রাজ্য সরকারের অনেক প্রকল্পের খতিয়ানই রাখা হয়। মঙ্গলবার অবশেষে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতমবাবু জলপাইগুড়িতে প্রচারে গিয়ে সময় বার করে ইস্তাহারটি খুঁটিয়ে দেখে চূড়ান্ত করেন।
যদিও তৃণমূল জেলা সভাপতি গৌতমবাবুর দাবি, এমন ঘটনা সঠিক নয়। ইস্তাহার অদলবদলের বিষয় নেই। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত ঠিক হয়েছে ১০ এপ্রিল ইস্তাহার প্রকাশ করে দেওয়া হবে। প্রদেশ নেতৃত্ব সবই জানে। স্থানীয় ভোটে স্থানীয় বিষয়বস্তুর উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের সাফল্য তো থাকছেই। আর আমরা ধাপে ধাপে প্রচারকে সাজিয়েছি। আর ভোটের ১৫ দিন আগে ইস্তাহার প্রকাশ ঠিকই আছে।’’
দলীয় সূত্রের খবর, এবার ইস্তাহারটি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, শিক্ষক নেতা প্রণব ভট্টাচার্য, শিক্ষক সেলের নেতা জয়ন্ত কর’কে। এ ছাড়াও ইস্তাহারের ভাষা দেখেছেন শিলিগুড়ি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সমর চক্রবর্তী। মূল ইস্তাহার ছাড়াও একটি রঙিণ ছবি দেওয়া বুকলেটও তৈরি হচ্ছে। সেখানে নানা প্রকল্পের ছবি দিয়ে সাফল্যের খতিয়ান থাকবে। পাশাপাশি, ১০ মিনিট এবং ২০ মিনিটের দুটি ভিডিও ফিল্মও তৈরি হয়েছে। সেখানে জেলা সভাপতির বক্তব্যও রয়েছে। তা পাড়ায় পাড়ায় প্রোজেক্টর দিয়ে প্রচার করা হবে। দলের একাংশ নেতার অবশ্য দাবি, প্রচারের এই সামগ্রীগুলি আরও আগে থেকে নিয়ে ময়দানে নামলেই ভাল হত।
তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রাথমিক অবস্থায় মন্ত্রী গৌতমবাবুর ভোটে দাঁড়াবেন বলে ঠিক করেন। তিনি ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বাছাই করে প্রচারেও নামেন। ইতিমধ্যে শহর জুড়ে প্রার্থীরা ছাড়াও গৌতমবাবুর ছবি-সহযোগে প্রচারও শুরু হয়। মূলত শিলিগুড়িকে ঘিরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর এবং এসজেডিএ-র নানা প্রকল্প সামনে রাখা হয়। ইস্তাহারও সেইভাবে তৈরি হবে বলে মোটামুটি ঠিক হয়। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে গৌতমবাবু ভোটে দাঁড়াতে পারেননি। মেয়র পদপ্রার্থী হিসাবে প্রতুল চক্রবর্তীর নামও উঠে আসে। কিন্তু ইস্তাহারে রাজ্য সরকারের খতিয়ান বা স্থানীয় বিধায়ক তহবিলের কতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তা নিয়েই আলোচনা শুরু হয়। এরমধ্যে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শহরে এসে দলীয় কর্মিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য সরকারের সাফল্যগুলি সামনে রেখে সমস্তরকমভাবে প্রচারের নির্দেশ দেন। সেই সময় কন্যাশ্রী, যুবশ্রীর মত প্রকল্প ইস্তাহারে রাখাটা চূড়ান্ত হয়।
দলের একদল নেতার দাবি, পুর এলাকার রাস্তাঘাট, নিকাশি, বিদু্ৎত পরিষেবা, সৌন্দর্যকরণের খতিয়ান তুলে ধরাটা বেশি হচ্ছিল।
শহর জুড়ে প্রচারে রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলি কম ছিল। সেখানে গৌতমবাবুকে সামনে রেখে ভোটে লড়াই করার প্রস্তুতি হিসাবে পরিকল্পনা নেওয়া হওয়ায় তা হয়েছিল। স্থানীয় ভোটে এতে ভুলের কিছু নেই। আবার আরেক দল নেতার মতে, স্থানীয় বিষয়বস্তুকে বেশি প্রচার করতে গিয়ে রাজ্য সরকার, বিধায়ক তহবিলের কাজ ঢাকা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। যা প্রদেশ নেতৃত্ব কখনই অনুমোদন করতেন না। দলীয় রীতিও তাই নয়। সব মিলিয়েই ইস্তাহার বা প্রচারপত্র তৈরি করাটাই বাঞ্ছনীয়। এই প্রসঙ্গে শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘পুরোটাই দলের বিষয়। আমি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। যা বলার জেলা সভাপতি বলবেন।’’
ইস্তাহার, প্রচারপত্র তৈরির দায়িত্বে থাকা প্রণবাবু এবং জয়ন্তবাবু বলেছেন, ‘‘পুরোটাই আভ্যন্তরীণ বিষয়। বাইরে কিছু বলার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy