শিলিগুড়ি শহরের কাছেই থাকি আমরা। বাড়িতে ছোট ছেলে এবং আমার স্বামীও একই অসুখে আক্রান্ত। একটি সংস্থার মাধ্যমে পরীক্ষা বছর চারেক আগে, আমার ওই সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। আমার স্বামী এবং ছোট ছেলের শরীরেও তা ধরা পড়েছে। ছোট ছেলে আবার প্রতিবন্ধী, মস্তিষ্কে পক্ষাঘাত রয়েছে। কথা বলতে পারে না। ১০ বছরের ওই ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই ঘুরতে হয়। ওর জন্য বড় হুইলচেয়ার একটা পেয়েছি। কিন্তু তাতেও কি সমস্যা মেটে? বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ম করে আমাকে এবং ছেলেকে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়। নিখরচায় এইচআইভি-র ওষুধ মেলে ওখানে। একটি সংস্থা সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে আগে যাতায়াতের ভাড়া দিত। এখন আর প্রকল্পটা নেই বলে দেয় না। টাকা জোগাড় করে যেতে হয় ‘এআরটি’ (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) সেন্টারে।
সেখানে ভিড় হয়। ওষুধ দিতে, পরীক্ষা করাতে দেরি হয়। অনেক সময় দিনভর বসে থাকতে হয়। ছ’মাস পর পর ‘সিডি-ফোর কাউন্ট’ করাতে হয়। বছরে এক বার ‘ভাইরাল লোড’ পরীক্ষা হয়। ছেলেরও সে সব করাতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে শরীর গুরুতর অসুস্থ হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় আমাকে বা ছেলেকে। তখন বাইরে থেকেও ওষুধ কিনতে হয়।
আমার স্বামী কিছু কাজ করলেও সে টাকা সংসারে দেয় না। মদ খেয়ে নষ্ট করে। গ্রামের প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কোথায় গেলে মিলবে, নথিপত্র কী লাগবে সে সব দেখিয়ে হয়তো কোথাও সহায়তা চাই। লোকে খুশি হয়ে কিছু টাকা দেয়। তাতেই চলে। আমাদের মতো গরিবের ঘরে এই অসুখ ধরলে কী করে চালাই বলতে পারেন? ছেলের মাসে প্রতিবন্ধী ভাতা এক হাজার টাকা। লক্ষ্মীর ভান্ডারে আমি ৫০০ টাকা করে পাই। সে সব মিলিয়েই চলে। ইন্দিরা আবাসের ঘর পেতে অনেক চেষ্টা করছি, এখনও মেলেনি। বড় ছেলেকে সংসারের এই পরিস্থিতিতে পড়াশোনা করাতে পারিনি। ও কাজ করে। চিকিৎসা এবং সামাজিক প্রকল্পে সুবিধা পেতে আমার মতো মানুষদের যাতে সমস্যা না হয়, সরকার একটু দেখলে ভাল হয়।
অনুলিখন: সৌমিত্র কুণ্ডু
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy