E-Paper

ম্যালে চায়ের পেয়ালার আমন্ত্রণ, সাক্ষী কাঞ্চনজঙ্ঘা

প্রতি বছর ২১ মে, আন্তর্জাতিক চা দিবস হিসাবে পালন করার কথা বলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। চায়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্বাস্থ্যের উপকার ও অর্থনীতির কথা বলে বিশ্ব চা দিবসের প্রসঙ্গ এসেছে।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৩ ০৯:৫৬
রবিবার শিলিগুড়ির দাগাপুর চা বাগানে। ছবি: বিনোদ দাস

রবিবার শিলিগুড়ির দাগাপুর চা বাগানে। ছবি: বিনোদ দাস

রবিবার সাতসকালে দার্জিলিং ম্যাল রোড ধরে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন কলকাতার বালিগঞ্জের অমিতাভ বোস। ছবি তোলার নেশায় বার বার আসেন শৈলশহরে। হেঁটে চৌরাস্তার দিকে এগোতেই হাতের সামনে এক নেপালি তরুণী তুলে দেন ধোঁয়া ওঠা লাল চা। খানিকটা অবাক হয়ে তা হাতে নিতেই তিনি জানতে পারেন, এ দিন আন্তর্জাতিক চা দিবস। চা বিক্রেতা একটি বড় সংস্থার তরফে বিনামূল্যে চা খাওয়ানো হচ্ছে সবাইকে। অমিতাভ বলেন, ‘‘দিনটা আমার তখনই তৈরি হয়ে গেল। সকালের কাঞ্চনজঙ্ঘা আর এক পেয়ালা চা— এর থেকে ভাল কি জুড়ি হতে পারে!’’ খানিকটা দূরেই ছিলেন কলকাতার যোধপুর পার্কের বাসিন্দা শুভ্র দত্ত। তিনি এগিয়ে খোঁজ নিতেই, তাঁর হাতেও তুলে দেওয়া হয় এক পেয়ালা দার্জিলিং চা। শুভ্র বলেন, ‘‘এমন সুন্দর আবহাওয়ার দিনে ম্যালে বসে দার্জিলিং চা খাওয়া, উফ, অসাধারণ অভিজ্ঞতা হল! পাহাড় ও চা মিলেমিশে একাকার।’’

প্রতি বছর ২১ মে, আন্তর্জাতিক চা দিবস হিসাবে পালন করার কথা বলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। চায়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্বাস্থ্যের উপকার ও অর্থনীতির কথা বলে বিশ্ব চা দিবসের প্রসঙ্গ এসেছে। সারা দেশের সঙ্গে দার্জিলিং, শিলিগুড়িতেও চা দিবস পালিত হয়েছে। সমতলের হিলকার্ট রোডে কিয়স্ক তৈরি করে পথচলতি মানুষকে চা খাওয়ানো হয়েছে। তবে পাহাড়ের আকর্ষণ ছিল একটু অন্য রকমই। দার্জিলিঙের চা ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ১৫০ বছর ধরে দার্জিলিং চায়ের স্বাদে, গুণে মুগ্ধ গোটা বিশ্ব। ব্রিটেনের রাজবাড়ি থেকে বিশ্বকাপ ফুটবলের সরকারি পানীয়ের তকমাও পেয়েছে ‘শ্যাম্পেন অব টি’— দার্জিলিং চা।

সুদূর মুম্বই থেকে পরিবার নিয়ে পাহাড়ে ঘরতে এসেছেন শ্রীলেখা। তিনি জানান, দার্জিলিং মানেই সাদা বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা, চোখ জুড়িয়ে থাকা প্রকৃতি আর চা। এ দিন সকালে ম্যালে চা খেয়ে মন ভরেছে তাঁর, জানালেন সেটা। চৌরাস্তায় বড় বড় হট কেটলিতে চা সারা বছর পাওয়া যায়। কিন্তু বিশেষ দিনের চায়ের আলাদাই আনন্দ। চা বিক্রেতা সংস্থাটির পক্ষে কর্ণদার মাধব সারদাও সকলে চা দিবসের শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন।

পর্যটকেরা যখন দার্জিলিং চায়ের মজে ছিলেন, সেই সময় মহাকাল রোডে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় চা বিক্রেতা সুমন রাই, রোজিলা তামাং-রা। তাঁরা জানালেন, চা নিয়ে এত কিছু তাঁরা জানতেন না। কিন্তু চা বাগান, শ্রমিকদের কথাও ভাবা দরকার। উল্লেখ্য, গত বছর দার্জিলিঙের চা বাগানে নিজের রক্ত ছিটিয়ে ‘ব্লাড টি’ বলে বাগান বন্ধ, শ্রমিক শোষণ নিয়ে সরব হয়েছিলেন হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড। পরে দার্জিলিং চা’কে ‘সোল টি’ বলে পাল্টা ময়দানে নামেন জিটিএ প্রধান অনীত থাপা। রাজনীতির এই টানাপড়েনের মাঝেই পাহাড়ের চা বিক্রেতা বলছেন, ‘‘দিবস পালন হোক, কিন্তু দার্জিলিং চায়ের দিকে নজরও বাড়ুক।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tea Garden Darjeeling

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy