Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলকে পাশে নিয়েই কি পথ পাবে বাপন

ইংরেজবাজার ব্লকের শোভানগর চৌধুরীপাড়ায় বাড়ি বাপন চৌধুরীর। বাড়ি বলতে বাঁশের চাটাই ও টালি দিয়ে তৈরি দু’টি ঘর। সেখানে এখন মা জ্যোৎস্না চৌধুরীর সঙ্গে বাপন থাকেন। ভিনরাজ্যে মাছ বিক্রি করেও দুই ছেলের লেখাপড়া খরচের পাশাপাশি সংসার সামাল দিতে পারছিলেন না বাবা নেপালবাবু।

জয়ন্ত সেন
মালদহ শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৭ ০৩:০৭
Share: Save:

বাবা কাজের জন্য ভিনরাজ্যে। সংসারের হাল সামলাতে দাদাকেও গত বছর কলেজের পড়া মাঝপথে বন্ধ করে দিয়ে কাজের জন্য পাড়ি দিতে হয়েছে ভিনরাজ্যে। এখন উত্তরপ্রদেশের সিদ্ধার্থনগর এলাকায় গ্রামে ঘুরে ঘুরে মাছ বিক্রি করেন বাবা ও দাদা দু’জনেই। ৮৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে শোভানগরের চৌধুরীপাড়ার বাপন চৌধুরীর এখন একটাই চিন্তা। কলেজে পড়ার টাকা কি তিনি জোগাড় করতে পারবেন? নাকি তাঁকেও লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে বাবা-দাদার মতো পাড়ি দিতে হবে ভিন রাজ্যে?

ইংরেজবাজার ব্লকের শোভানগর চৌধুরীপাড়ায় বাড়ি বাপন চৌধুরীর। বাড়ি বলতে বাঁশের চাটাই ও টালি দিয়ে তৈরি দু’টি ঘর। সেখানে এখন মা জ্যোৎস্না চৌধুরীর সঙ্গে বাপন থাকেন। ভিনরাজ্যে মাছ বিক্রি করেও দুই ছেলের লেখাপড়া খরচের পাশাপাশি সংসার সামাল দিতে পারছিলেন না বাবা নেপালবাবু। তাই গত বছর বাপনের দাদা দেবুকে চলে যেতে হয়। দেবুও ২০১৫ সালে শোভানগর হাই স্কুল থেকে ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছিলেন। মালদহ কলেজে পড়তেনও। জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, ‘‘স্বামীর বয়স হয়েছে। সে ভাবে রোজগার করতে পারছিলেন না। তাই লেখাপড়া করার ইচ্ছে থাকলেও দেবুকে চলে
যেতে হল।’’

এ দিকে এ বার ৪৩৩ নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে বাপন। সে বাংলায় ৯২, ইংরেজিতে ৭৮, ভূগোলে ৯২, ইতিহাসে ৮৩ ও দর্শনে ৮৮ নম্বর পেয়েছে। বাপনের ইচ্ছে ভূগোল নিয়ে পড়ে শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু বাপনের চিন্তা কাটছে না। তিনি বললেন, ‘‘আমি তো পড়তে চাই। কিন্তু সংসারের যা পরিস্থিতি তাতে কলেজে ভর্তির টাকা, টিউশন খরচ, যাতায়াতের খরচ এ সব কী ভাবে জুটবে? বাবা-দাদা মিলে কাজ করেও সংসারের টলমল অবস্থা।’’ তাঁর আশঙ্কা, তাঁকেও হয়তো দাদারই মতো লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে দিয়ে কাজে পাড়ি দিতে হবে ভিন রাজ্যে। মা জ্যোৎস্নাদেবীও বলেন, ‘‘স্বামীর সঙ্গে কথা বলে দেখি।’’ তবে বাপনের কলেজে ভর্তির ব্যাপারে পাশে দাঁড়িয়েছে তাঁর স্কুল শোভানগর হাই স্কুল। প্রধান শিক্ষক হরিস্বামী দাস বলেন, ‘‘আমরা স্কুল থেকেই বাপনের কলেজে ভর্তি-সহ বই কেনার
টাকা দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE