মালদহের বৈষ্ণবনগরে ছাত্রীর মুখে অ্যাসিড ঢালার ঘটনায় এখনও গ্রেফতার হয়নি মূল অভিযুক্তেরা। আক্রান্তের পরিজনদের ফোনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আগেই উঠেছিল। এ বার উঠল ডাকাতির অভিযোগ। সোমবার রাতে ওই ছাত্রীর বাড়িতে চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। লন্ডভন্ড করে আলমারি। অভিযোগ, অ্যাসিড ঢালায় অভিযুক্তরাই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় এক তরুণীর মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল এক যুবকের বিরুদ্ধে। এ বার সেই তরুণীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনাতেও জড়িয়ে গেল সেই যুবকের নাম।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি মালদহের বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দা ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দা ওই যুবকের বিরুদ্ধে। তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ওই তরুণী গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর মা-ও সঙ্গে রয়েছেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভাইকে নিয়ে বাবা রয়েছেন তাঁদের বৈষ্ণবনগরের বাড়িতে। সোমবার রাত ১২টা নাগাদ ৭-৮ জন দুষ্কৃতী পাইপগান সেখানে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ওই তরুণীর চিকিৎসার জন্য রাখা প্রায় ২ লক্ষ টাকা এবং প্রায় ৫ ভরি সোনার গয়না লুঠ করে তারা। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা ওই তরুণীর বাবা ও ভাইকে শাসিয়ে গিয়েছে, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করবি না, তা হলে মেয়ের মতো তোদেরও একই হাল করে দেব।’ তারপরে ওই তরুণীর বাবা মঙ্গলবার সকালে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন, “যারা আমার মেয়ের মুখে অ্যাসিড ঢালায় অভিযুক্ত, তারাই বাড়িতে ডাকাতি করিয়েছে।”
অভিযুক্ত যুবক অ্যাসিড ঢালার ঘটনার পর থেকেই ফেরার। ওই ঘটনায় অভিযোগ করা হয়েছিল তার বাবা ও দুই দাদার বিরুদ্ধেও। তার বাবাকে পুলিশ ২১ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করে। তবে দুই দাদাও এখনও পলাতক। ওই তরুণীর বাবার দাবি, পুলিশের কাছে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য তাঁকে চাপও দিচ্ছে অভিযুক্তেরা। এই ডাকাতিও করানো হয়েছে সেই উদ্দেশ্যেই। জেলার পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি চলছে। আশা করছি, দ্রুত মূল অভিযুক্ত সহ বাকি তিন জনকেও ধরে ফেলা যাবে। ডাকাতির ঘটনায় ওই অভিযুক্তেরাই জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে।” বৈষ্ণবনগর থানার আইসি প্রফুল্ল দেবরায় এ দিন তদন্তে ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়েছিলেন।
ওই তরুণী স্থানীয় একটি বাচ্চাদের স্কুলে পড়াতেনও। এক কলেজে পড়ার সূত্রে ওই যুবকের সঙ্গে তাঁর আলাপ। ওই যুবক তাঁদের বাড়িতেও যাতায়াত করতেন বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে। তবে ওই যুবক ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করেন ওই তরুণী। তারপর থেকেই দুই পরিবারের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়।
ওই তরুণীর বাবার অভিযোগ, “মেয়ের চিকিৎসার জন্য আত্মীয় পরিজনদের কাছ থেকে ধার করে ২ লক্ষ টাকা জোগাড় করেছিলাম। বুধবার ছেলের মাধ্যমিক শেষ হলে কলকাতায় মেয়ের কাছে যেতাম। তার আগেই আলমারি ভেঙে ওই টাকা ও ৫ ভরি সোনা লুঠ করে নিয়ে পালিয়েছে ডাকাতরা।” তিনি অভিযোগ করেন, “সবার হাতে পাইপগান ছিল। সবার মুখ বাঁধা ছিল। কাউকে চিনতে পারিনি। তবে ওই ডাকাতরা যখন আমার ও আমার ছেলের বুকে পাইপগান ধরে ‘মেয়ের মতো হাল করে দেব’ বলে হুমকি দিল, তখনই বুঝলাম যারা আমার মেয়ের মুখে অ্যসিড ঢেলে খুন করতে চেয়েছিল, তারাই ডাকাতি করাচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy