কখনও ভূমি রাজস্ব দফতরে ঢুকে অফিসারকে হেনস্থা, কখনও ইঞ্জিনিয়ারকে মারধর, কখনও থানায় হামলা, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকাটা ছিল বেশ দীর্ঘই। কিন্তু এলাকায় প্রতিপত্তির কারণে মোটের উপর ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু গত সোমবার পঞ্চায়েত সমিতির বৈঠকে পঞ্চায়েত ও ব্লক নেতৃত্বের উপর হামলার পর আর শেষরক্ষা হলনা। ৬ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হল হরিরামপুরের দোর্দন্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা শুভাশিস ওরফে সোনা পালকে। যাঁর হাত ধরে তাঁর কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসা, সেই দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল সভাপতি বিপ্লব মিত্রই বুধবার বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
এ দিন জেলা পরিষদ ভবনে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট পরিষদীয় সচিবের ঘরে বসে বিপ্লববাবু বলেন, দলের তরফেই ওই শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলাপরিষদের সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা, দলের কার্যকরী জেলা সভাপতি বিপ্লব খাঁ, জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের চেয়ারম্যান কল্যাণ কুণ্ডু-সহ জেলা নেতৃত্বের উপস্থিতিতে তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু বলেন, “ক্রমাগত দলবিরোধী কাজের জন্য পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শুভাশিস পালকে আগামী ৬ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হলো। সেই সঙ্গে জেলা পরিষদের পূর্তকর্মাধ্যক্ষের পদ সহ যাবতীয় দলীয় পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো।” বিপ্লববাবু বক্তব্য, গত পয়লা ডিসেম্বর সোমবার, হরিরামপুরে পঞ্চায়েত সমিতির সভায় দলের ব্লক সভাপতি তাজেমুল ইসলাম, পঞ্চায়েত সভাপতি পঞ্চানন বর্মন এবং মহিলা কর্মাধ্যক্ষ সাগিনা পারভিনের মত দলীয় নেতৃত্বের উপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ ওঠার পর শুভাশিসবাবুর বিরুদ্ধে ওই পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ ছিল না। হরিরামপুরে ভূমি রাজস্ব দফতরে ঢুকে অফিসারকে হেনস্থা ও ইঞ্জিনিয়ারকে মারধরের ঘটনায় শুভাশিস পালের নাম জড়ানোয় দলের তরফে তাকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি শোধরাননি। ফলে দলনেত্রীর নির্দেশ মেনেই এদিন দুপুরে কোর কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে বিপ্লববাবু দাবি করেছেন। এই ধরণের ঘটনার সঙ্গে যাঁরাই যুক্ত থাকুক না কেন তাঁদের সঙ্গে কোনও আপস করা হবেনা বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তবে হরিরামপুরের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা সোনা পালকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে তৃণমূলের অন্দরেই তুমুল চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
হরিরামপুরের ডাকসাইটে নেতা সোনা পাল জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের পাশাপাশি জেলাপরিষদের তৃণমূল দলনেতা এবং তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদকের পদেও রয়েছেন। তাকে আগামী সাত দিনের মধ্যে জেলাপরিষদের ওই পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলা হবে। ইস্তফা না দিলে পরবর্তী প্রক্রিয়া অনুযায়ী দলের নিয়ম মেনে শুভাশিসবাবুকে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
চিকিত্সার জন্য সোনা পাল এখন কলকাতায়। দলের পাশাপাশি সমস্ত পদ থেকে বহিষ্কারের খবরে এদিন কলকাতা থেকে সোনা পাল বলেন, “এই ব্যাপারে লিখিতভাবে দলের সিদ্ধান্ত জানার পর যা বলার বলব। তবে ওই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কেবল দলের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পর্যবেক্ষক পূর্ণেন্দু বসু। আমাকে পদচ্যুত করার উনি (বিপ্লব মিত্র) অথরিটি নন।”
প্রসঙ্গত তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের মতো নেতাদের শেষপর্যন্ত দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও পঞ্চায়েত কিংবা সমবায় সমিতির কোনও পদ কেড়ে নেওয়া হয়নি। সোনা পালের ক্ষেত্রে কেন ওই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত? এই প্রশ্নে জেলা সভাপতি বিপ্লববাবুর অভিযোগ, জেলা পরিষদের কাজে বাধা দিয়ে উন্নয়ন রুখে দেওয়ার নালিশও ওঁর বিরুদ্ধে শুনতে হচ্ছিল। কোনও সমস্যা হলে দলের নির্দিষ্ট ফোরামে না তুলে নেতৃত্ব বিরোধী কাজ করার অভিযোগে শুভাশিস পালের বিরুদ্ধে ওই চরম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুভাশিস পালের সঙ্গে একইভাবে তার দুই ভাইকেও দলবিরোধী কাজের জন্য ৬ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন হরিরামপুরের বাগিচাপুর গ্রামপঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান দেবাশিস পাল এবং তৃণমূল কর্মী স্নেহাশিস ওরফে বিভু পাল।
২০০৭ সালে হরিরামপুর মহেন্দ্র হাইস্কুলের সভাপতি থাকাকালীন অনিয়মের অভিযোগে একমাস জেলে কাটাতে হয়েছিল তত্কালীন কংগ্রেস নেতা সোনা পালকে। ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দলবিরোধী কাজের অভিযোগে জেলা সহ সভাপতির পদে থাকা সোনা পালকে বহিষ্কার করে কংগ্রেস। ওই বছরের পাঁচই মে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। এই ডাকসাইটে নেতার বিরুদ্ধে পূর্ত দফতরের এর ঠিকাদার সংস্থার এক ইঞ্জিনিয়ারকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। প্রকাশ্য রাস্তায় এক পুলিশ আধিকারিককে নিগ্রহ ও থানায় হামলারও অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালে হরিরামপুর মোড়ে সিপিএমের দুই প্রাক্তন মন্ত্রী ও জেলা সম্পাদককে মারধরেরও অভিযুক্ত ছিলেন সোনা পাল। ২০১৪র ৬ নভেম্বর ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরে আধিকারিক হেনস্থার ঘটনাতেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy