Advertisement
০৬ মে ২০২৪

অভাবেও উজ্জ্বল জয়েন্ট-এ

বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। ছোট ভাই পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সংসারের হাল ধরতে মায়ের সঙ্গে চরকায় সুতো কেটে চরম কষ্টের মধ্যে লেখাপড়া করে এবারে উচ্চ মাধ্যমিকে তো বটেই, জয়েন্ট এনট্রান্সেও নজর কাড়ল দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর হাইস্কুলের ছাত্র শঙ্কর দে। মেডিক্যালে তাঁর প্রাপ্ত স্থান ১৫০০।

মার সঙ্গে চরকায় শঙ্কর।

মার সঙ্গে চরকায় শঙ্কর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০১:৫৩
Share: Save:

বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। ছোট ভাই পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সংসারের হাল ধরতে মায়ের সঙ্গে চরকায় সুতো কেটে চরম কষ্টের মধ্যে লেখাপড়া করে এবারে উচ্চ মাধ্যমিকে তো বটেই, জয়েন্ট এনট্রান্সেও নজর কাড়ল দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর হাইস্কুলের ছাত্র শঙ্কর দে। মেডিক্যালে তাঁর প্রাপ্ত স্থান ১৫০০। এবার উচ্চ মাধ্যমিকে শঙ্করের প্রাপ্ত নম্বর ৪৫০। হতদরিদ্র ওই ছাত্রের সাফল্যে খুশি স্কুলের শিক্ষকেরা। কিন্তু দিনমজুর ওই পরিবারের ছেলে শঙ্করের মুখে হাসি নেই। আগামীতে মেধাবী ছেলের পড়াশুনা কী উপায়ে চলবে, সেই আশঙ্কা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে বাবা প্রদীপ দে ও মা সাধনাদেবীকে। বাড়িতে বসে হস্তচালিত চরকায় সুতো কেটে দিনে ৬০ টাকা রোজগার করেন সাধনাদেবী। সামান্য আয়ে চারজনের দুবেলা পেট ভরে ভাতের ব্যবস্থা ও পড়াশুনার খরচ টানতে উদয়াস্ত খাটুনি। মায়ের সঙ্গে চরকা হাতে শঙ্করকেও কঠিন লড়াইয়ে নামতে হয়েছে। অসুস্থ বাবা প্রদীপবাবু হস্তচালিত তাঁত কারখানায় গিয়ে শাড়ি তৈরি করেন।

সাধনাদেবীর কথায়, “সকালে চরকায় সুতো কেটে স্কুলে যাওয়ার সময় তাঁতের কারখানায় সুতো জমা দিয়ে খালি পেটেই ছেলেটা দিনের পর দিন স্কুল করেছে।” প্রদীপবাবুর বুকের অসুখ ব্যথার জন্য ঠিকমত কাজ করতে পারেন না। সারাদিনে একটি সাধারণ তাঁত শাড়ি বুনতে পারলে ৬০ টাকা মজুরি পান। ফলে কোনও গৃহশিক্ষক দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। গঙ্গারামপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কমলেন্দু বসাক থেকে অন্য স্কুলের শিক্ষকদের সহায়তাই তাকে পরীক্ষায় ভাল করতে সাহায্য করেছে স্বীকার করে শঙ্কর বলেন, “চন্দ্রশেখর স্যার আমাকে বিনা পয়সায় রসায়ন পড়ান। মকবুল স্যার, কাদিহাট বেলবাড়ি হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক পার্থ স্যারেরা সাহায্য না করলে এগোতে পারতাম না।”

গঙ্গারামপুর শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপাড়া এলাকার টালির ছাউনি দেওয়া বেড়ার ঘরের বাসিন্দা শঙ্করের কঠিন লড়াইয়ে উচ্চমাধ্যমিকের পর জয়েন্টে ভাল ফলের খবরে এদিন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সত্যেন রায় ওর বাড়িতে গিয়ে সাহায্যের আশ্বাস দেন। শঙ্করের কথায়, “জয়েন্টের ওই র্যাঙ্কে মেডিক্যালে সুযোগ না পেলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার জন্য সুযোগ পাব বলে আশা করছি। তবে ওই পথ ধরে এগোনোর মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। তাই জানি না কী হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

joint entrance balurghat shanker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE