Advertisement
E-Paper

অর্থলগ্নি সংস্থার দুই কর্তা ধৃত

অর্থলগ্নি সংস্থা রয়্যাল ইন্টারন্যাশনালের দুই ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শুক্রবার কোচবিহারের কোতোয়ালি থানার পুলিশ ওই দুই জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম রাকেশ গুপ্তা ও সুনীল রায়। ধৃতদের বিরুদ্ধে গত বছর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০২:৫৪

অর্থলগ্নি সংস্থা রয়্যাল ইন্টারন্যাশনালের দুই ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শুক্রবার কোচবিহারের কোতোয়ালি থানার পুলিশ ওই দুই জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম রাকেশ গুপ্তা ও সুনীল রায়। ধৃতদের বিরুদ্ধে গত বছর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। দু’জনেই শহর এলাকার বাসিন্দা। ওই দুই জন মিলিয়ে সংস্থার পাঁচ জনকে গ্রেফতার করল। তাদের চার দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ওই সংস্থার পলাতক চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর সহ অন্য ম্যানেজিং ডিরেক্টরা কোথায় রয়েছেন তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে।”

পুলিশ জানতে পেরেছে শহরের বাসিন্দা রাকেশ গুপ্তা ও সুনীল রায় এজেন্ট হিসাবে কাজ শুরু করেন। ওই সংস্থায় প্রচুর আমানতকারীর টাকা গচ্ছিত রেখে তারা প্রভাব বাড়ান। দুই জনেই অন্যতম ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্ব পান। সম্প্রতি এজেন্ট পরিচয় দিয়ে অন্যদের সঙ্গে সংস্থায় টাকা জমা দিয়ে বিপাকে পড়ার অভিযোগ করে পুলিশ সুপারের দফতরের অভিযোগও জানিয়েছিলেন। ওই দুই জন গ্রেফতার হওয়ায় সংস্থা সম্পর্কে নানা তথ্য উঠে এসেছে। ধৃতদের মধ্যে অন্য দু’জন সংস্থার সাধারণ কর্মী। পুলিশ সূত্রের খবর, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে সংস্থার কোষাধ্যক্ষ হৃষিকেশ রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। আপাতত তিনি পুলিশ হেফাজতে। তাকে জেরা করে পুলিশ কিছু তথ্য পেয়েছে বলে জানিয়েছে।

বহু কোটি টাকা প্রতারণার নালিশ দায়ের করা সত্ত্বেও বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল শেয়ারস প্রাইভেট লিমিটেডের শীর্ষ কর্তাদের বিরুদ্ধে কোচবিহার জেলা পুলিশ-প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা পুলিশ-প্রশাসনের অফিসার-কর্মীদের কয়েক জনের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগকারীদের নানা আলোচনা চলছে। এ অবস্থায় রয়্যাল-কাণ্ডের তদন্ত ভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার দাবি তুলেছেন প্রতারিতদের অনেকেই। ইতিমধ্যেই জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে সিবিআই তদন্তের দাবি তোলা হয়েছে। বামেদের তরফেও পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের দাবি তোলা হয়। আমনতকারীদের সই সংগ্রহ করে সিবিআইকে চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিছু আমানতকারী জানান, সুপ্রিম কোর্ট যে সব অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে তার মধ্যে রয়্যালকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আর্জি জানানো হবে।

কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “রয়্যাল সংস্থার ব্যাপারে যে সব অভিযোগ এসেছে তা খতিয়ে দেখে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল জানান, সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের খোঁজ চলছে।”

প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১০ সালে চান্দামারির বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় সরকার ওই সংস্থা গড়ে তোলেন। দেড় বছরে টাকা দ্বিগুণ করার টোপ দিয়ে বাজার থেকে টাকা তুলত সংস্থা। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি সহ গোটা উত্তরবঙ্গে জাল বিস্তার করে তারা। লক্ষাধিক আমানতকারী রয়্যালে টাকা রেখেছিলেন। নগদ সহ রয়্যাল গড়ে তোলে ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তি।

২০১৩ সালে মৃত্যুঞ্জয়বাবু মারা যান বলে সংস্থার তরফে দাবি করা হয়। সংস্থার চিফ ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হন মৃত্যুঞ্জয়বাবুর স্ত্রী অর্চনা সরকার। নীলিমা দে নামে তার এক বোনকে সঙ্গে নিয়ে সংস্থার কারবার চালাতে থাকেন তিনি। ওই বছর এপ্রিল থেকে আমানতকারীদের টাকা ফেরানো বন্ধ করে দেয় সংস্থা। প্রাথমিক ভাবে টাকা তারিখ দিয়ে আমানতকারীদের শান্ত রাখার চেষ্টা হয়। শেষ পর্যন্ত কোনও টাকা ফেরানো হয়নি বলে অভিযোগ।

কিছু দিনের মধ্যে অফিসে তালা ঝুলিয়ে সংস্থার শীর্ষ কর্তারা উধাও হয়ে যান। কোতোয়ালি থানায় সংস্থার বিরুদ্ধে ১০টির বেশি অভিযোগ জমা পড়ে। দিনহাটা রোড এলাকায় সংস্থার বন্ধ অফিসের সামনে আমানতকারীদের অনেকে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এর পর নানা সময়ে কোচবিহার-দিনহাটা রাস্তায় অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে।

কোচবিহারের সদর মহকুমাশাসক বিকাশ সাহা বলেন, “সরকারি নির্দেশ না থাকলেও বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে ওই সংস্থা-সহ কোচবিহারের সব লগ্নি সংস্থার কাছে তথ্য চেয়ে পাঠাই। তারা তা পাঠালে জবাবে সন্তুষ্ট হতে না পেরে ফের তথ্য চাওয়া হয়। তার পর কিছু সংস্থা ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়ায় আমাকে অনেকে দায়ী করছেন। গত বছর ২৭ মার্চ পুলিশকে নির্দিষ্ট নালিশ পেলে মামলা শুরুর জন্য চিঠি দিই। রয়্যালের অন্যতম শীর্ষকর্তাকে মেল করে টাকা ফেরানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। ওরা টাকা ফেরানোর জন্য ছয় মাস সময় বাড়াতে বলেছিলেন। কিন্তু টাকা ফেরাতে পারবেন বলে মনে হয় না।” মহকুমাশাসক জানান, নির্বাচন মিটলে এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

chit fund owner arrest coochbihar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy