Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আবার সালিশির পরে তরুণীর মৃত্যু ধূপগুড়িতে

রাজনৈতিক নেতাদের সালিশির পর বিপর্যস্ত এক তরুণীর আত্মহত্যার অভিযোগ উঠল ধূপগুড়িতে। গত সেপ্টেম্বরে ধূপগুড়িতেই সালিশি সভায় অপমানিত এক কিশোরীর দেহ মিলেছিল রেল লাইনের ধারে। শুক্রবার তরুণী বধূর দেহ মিলেছে ধূপগুড়ি ও আলতাগ্রাম স্টেশনের মাঝখানে, রেল লাইনের উপর। মাস চারেকের মধ্যে একই থানার অধীনে এক কিশোরী ও এক তরুণী বধূর অপমৃত্যুর দুটি ঘটনা বুঝিয়ে দিল, পারিবারিক বিষয়ে নেতাদের সালিশি করার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ শাসক দল। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ১ জানুয়ারি, স্বামী-স্ত্রী বিবাদের জেরে বৃহস্পতিবার সালিশি বসেছিল ভেমটিয়া গ্রামের তরুণী বধূ জয়মণি রায়ের বাড়িতে। পাত্র শারীরিক অক্ষমতা লুকিয়ে বিয়ে করেছে, এই নালিশ নিয়ে বাবার বাড়িতে ফিরেছিল সদ্য-বিবাহিতা জয়মণি (২৬)।

জয়মণি রায়

জয়মণি রায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৫
Share: Save:

রাজনৈতিক নেতাদের সালিশির পর বিপর্যস্ত এক তরুণীর আত্মহত্যার অভিযোগ উঠল ধূপগুড়িতে। গত সেপ্টেম্বরে ধূপগুড়িতেই সালিশি সভায় অপমানিত এক কিশোরীর দেহ মিলেছিল রেল লাইনের ধারে। শুক্রবার তরুণী বধূর দেহ মিলেছে ধূপগুড়ি ও আলতাগ্রাম স্টেশনের মাঝখানে, রেল লাইনের উপর। মাস চারেকের মধ্যে একই থানার অধীনে এক কিশোরী ও এক তরুণী বধূর অপমৃত্যুর দুটি ঘটনা বুঝিয়ে দিল, পারিবারিক বিষয়ে নেতাদের সালিশি করার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ শাসক দল।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ১ জানুয়ারি, স্বামী-স্ত্রী বিবাদের জেরে বৃহস্পতিবার সালিশি বসেছিল ভেমটিয়া গ্রামের তরুণী বধূ জয়মণি রায়ের বাড়িতে। পাত্র শারীরিক অক্ষমতা লুকিয়ে বিয়ে করেছে, এই নালিশ নিয়ে বাবার বাড়িতে ফিরেছিল সদ্য-বিবাহিতা জয়মণি (২৬)। স্ত্রীকে ফেরাতে চাপ দিচ্ছিল তার স্বামী। সালিশিতে ঠিক হয়, ৩ লক্ষ টাকা খোরপোষ দেওয়া হবে, তরুণী আর ফিরবেন না শ্বশুরবাড়ি। এই ফয়সালার পরেও জয়মণিকে শ্বশুরবাড়িতে ফেরাতে পাত্রপক্ষ চাপ বাড়ায় বলে অভিযোগ। বিপর্যস্ত তরুণীটি ভোরে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতারণা ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে তাঁর স্বামী রবি রায় ও শাশুড়িকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

গত সেপ্টেম্বরে ধূপগুড়িতে সালিশি সভায় অপমানিত হওয়ার পর পুর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দশম শ্রেণির এক কিশোরী ছুটে পালায় সভা থেকে। পরে রেল লাইনের ধারে তার দেহ মেলে। অভিযোগ, এই ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী এবং একাধিক তৃণমূল সমর্থক।

জয়মণি রায়ের বাড়িতে সালিশি সভায় ছিলেন ভেমটিয়া এলাকার বারোঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য বিলকিস বেগমের স্বামী। বিলকিসের যুক্তি, “গ্রামের মানুষের আপদে-বিপদে আমরা পাশে দাঁড়াতে বাধ্য। এটা সালিশি সভা নয়।” তাঁর স্বামী নবিউল আলম বলেন, “মেয়ে এবং ছেলের বাড়ি উভয়েই তৃণমূলের সমর্থক। আমাদের থাকতে বলেছিলেন।” রানিরহাট অন্য যে পঞ্চায়েত সদস্য ওই সভায় ছিলেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “মৃতার বাবার বাড়ির অভিযোগের ভিত্তিতে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে বধূর দাম্পত্য জীবনে কিছু সমস্যার কথা উঠে এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” রেল পুলিশের ময়নাগুড়ির ওসি অভিষেক ভট্টাচার্য জানান, বধূর দেহটি রেল লাইনের মাঝখানে পড়ে ছিল। ইঞ্জিনের ধাক্কায় মাথা থেঁতলে গিয়েছে। সালিশি সভা না করে প্রথমেই পুলিশকে জানানো হল না কেন সেই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ মহলেও। স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক মমতা রায় বলেন, “শুনেছি সালিশি সভা হয়েছে মেয়ের বাড়িতে। এটা ঠিক হয়নি। এ ধরনের ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়াই বাঞ্ছনীয়।”

বধূর বাবা হরেনবাবু জানান, গত ৭ জুলাই মেখলিগঞ্জের রানিহাট এলাকার বাসিন্দা পেশায় চাষি রবির সঙ্গে মেয়ের বিয়ে হয় জয়মণির। বিয়েতে নগদ ৫৫ হাজার টাকা, আসবাব, সোনার গয়না দেন তাঁরা। বিয়ের পর মেয়েটি বারবার ফিরে আসত বাপের বাড়ি। সম্প্রতি ফিরে এসে জয়মণি তার মায়ের কাছে স্বামীর শারীরিক অক্ষমতার কথা জানায়। হরেনবাবু জবাবদিহি চান মেয়ের শ্বশুরবাড়ির কাছে। এর পরেই পাত্রপক্ষের তরফে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যকে ডাকা হয়। হরেনবাবুও এলাকার তৃণমূল সদস্যকে ডাকেন।

ছেলের অসুস্থতা জেনেও কেন বিয়ে দেওয়া হল? রবিবার রবির মা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি ধূপগুড়ির বাসিন্দা নূরজাহান বেগম বলেন, “গ্রামের মানুষ পঞ্চায়েত সদস্যদের কাছে যাবেন, এটা ঠিক। কিন্তু সালিশি সভা মোটেও সমর্থন যোগ্য নয়। পুলিশের কাছে গেলে হয়তো ব্যাপারটা অন্য রকম হত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dhupguri settlement meeting death suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE