(বাঁ দিকে) রায়গঞ্জের সভায় বক্তৃতা করছেন রাহুল সিংহ। (ডান দিকে) রায়গঞ্জে বিজেপির সভায় ভিড়। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রে’র অভিযোগ তুলে, রায়গঞ্জেই এই হাসপাতাল চেয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিজেপি।
কল্যাণী নয়, রায়গঞ্জেই এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির পক্ষে দলের তরফ থেকে আগেই দাবি তোলা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জের রেল ময়দানে এক প্রকাশ্য সভা থেকে দলের অবস্থান ফের জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল গড়তে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও ‘সমস্যা’ নেই বলেও এ দিন জানিয়েছেন রাহুলবাবু। তাঁর অভিযোগ, “রাজ্য সরকারই নানা টালবাহানা করে রায়গঞ্জে হাসপাতাল গড়তে দিচ্ছে না। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কারণে রায়গঞ্জের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পরেও, এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল রায়গঞ্জবাসীর হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা করছে।” রাহুলবাবুর কথায়, “বিজেপি চায় রায়গঞ্জেই হাসপাতাল হোক। রায়গঞ্জবাসীর আন্দোলন ব্যর্থ হোক তা আমরা চাই না।”
গত লোকসভা ভোটের পরে উত্তরবঙ্গেই এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল চেয়ে উত্তরের জেলাগুলিতে আন্দোলন করেছিল বিজেপির সংশ্লিষ্ট জেলা নেতৃত্ব। এ দিন রাহুলবাবুর বক্তব্যের পরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে আন্দোলন শুরুর প্রস্ততি নিয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল। কেন্দ্রীয় প্রকল্প হলেও, কোথায় হাসপাতাল হবে তা যে রাজ্য সরকারই স্থির করে তাও এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপির সভাপতি। দলের জেলা নেতাদের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী কোনও রাজ্যে হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা করে কেন্দ্রীয় সরকার। সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারই কোনও জেলায় হাসপাতাল হবে সেই প্রস্তাব কেন্দ্রকে পাঠায়। তার ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় বলে দাবি করা হয়েছে। রাহুলবাবু এ দিনের সভায় বলেন, “কেন্দ্রের সরকারের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু রায়গঞ্জের পরিবর্তে কল্যাণীতে এইমস চেয়ে রাজ্য সরকার প্রস্তাব পাঠিয়েছে।” কেন কল্যাণীতে এইমসের বিরোধিতা, তার যুক্তিও দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “কলকাতার খুব কাছেই কল্যাণী। সেখানে অনেক উন্নতমানের হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গে তেমন কোনও পরিকাঠামোও রাজ্য সরকার গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের কলকাতায় যেতে হয়। উত্তরবঙ্গে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি হলে, বাসিন্দাদের সেই দুর্ভোগ কমবে।”
২০০৯ সালে ৮২৩ কোটি টাকা বরাদ্দে রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার। এই হাসপাতাল তৈরি করতে হলে অন্তত ১০০ একর জমি প্রয়োজন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। কেন্দ্র বরাদ্দ দিলেও, রাজ্য সরকারকেই জমি অধিগ্রহণ করতে হয়। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে জমি জটেই হাসপাতাল তৈরি থমকে যায় বলে বিজেপি-র অভিযোগ। রাজ্যে পরিবর্তনের পরে তৃণমূল সরকার জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এগোতে দেননি বলে কংগ্রেসও অভিযোগ তুলে গত কয়েক বছরে উত্তরবঙ্গ জুড়েই নানা আন্দোলন করে। এবার সেই দাবি নিয়েই আন্দোলনের পরিকল্পনা করেছে বিজেপি।
এ দিন রাহুলবাবুর সভায় যথেষ্ট ভিড় হয়েছিল বলে বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করে। তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অমল আচার্য পাল্টা দাবি করে বলেছেন, “কংগ্রেসের মতো বিজেপি-ও এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল নিয়ে প্রতারণার রাজনীতি করে, রাজনৈতিক জমি খোঁজার চেষ্টা করেছে। আমরা জোর করে জমি নেওয়ার বিপক্ষে। মুখ্যমন্ত্রী তো গত তিন বছর ধরে বলছেন, জমি দিতে ইচ্ছুক কৃষকরা লিখিত প্রস্তাব পাঠাক। তাহলে বিজেপি সেটা করাচ্ছে না কেন।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তর দাবি, “তৃণমূল বা বিজেপি কেউই চায় না রায়গঞ্জে এইমস হোক। রাজ্যবাসী জানে কংগ্রেসই এই ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিল, তারাই তা বাস্তবায়িত করতে পারবে।”
এইমস ছাড়াও, রাজ্যে নারী নিগ্রহ, সিভিক ভলিন্টিয়ার নিয়োগ থেকে শিল্প সম্ভাবনার মতো বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছে বিজেপি। সভায় বিজেপি-র উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি শুভ্র রায়চৌধুরী, অভিনেতা নিমু ভৌমিক সহ বিজেপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy