কংগ্রেস পরিচালিত শিলিগুড়ি পুরবোর্ডের বিভিন্ন কাজকর্ম তথ্য-সহ বিশ্লেষণ করে ‘ব্যর্থতা’ তুলে ধরতে পুস্তিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। পুরসভা নিয়ে দলের ভূমিকা কী হবে তা ঠিক করতে গত শুক্রবার তৃণমূল নেতারা বৈঠকে বসেন। রাত ১২টা পর্যন্ত সেই বৈঠক চলে। সেই বৈঠকেই রাজস্ব আদায় থেকে পুর পরিষেবা, সব ক্ষেত্রেই পুরবোর্ডের ‘ব্যর্থতা’ তুলে ধরতে পুস্তিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। রাজস্ব আদায় করা বা পরিষেবায় নজর দেওয়া কোনও কিছুই পুর কর্তৃপক্ষ করেননি। গরিব বাসিন্দাদের ভাতাও দেননি। বলতে গেলে পুরবোর্ডে তাদের কোনও সক্রিয়তাই ছিল না। সে সবই জনসাধারণকে জানানো হবে।” প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত জানিয়েছেন, গৌতমবাবুরা তাঁদের খুশি মতো কিছু করতেই পারেন। গঙ্গোত্রীদেবী বলেন, “আগে গৌতমবাবুরা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাজকর্ম নিয়ে পুস্তিকা বার করুন। সাহস থাকলে দোষীদের বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নিন। আমরা কোনও অন্যায় কাজ করিনি। তা ছাড়া দু’বছরের মতো তো ওরা আমাদের সঙ্গে বোর্ড চালিয়েছেন।”
তৃণমূলের অভিযোগ, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পুর কর্তৃপক্ষ সাফাই বিভাগ-সহ অন্যত্র ঢালাও কর্মী নিয়োগ করেছে, কোটি টাকার বেশি জল কর এবং অনান্য কর বকেয়া থাকলেও আদায় করার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। রাজস্ব আয় কমে যাওয়াতে প্রভাব পড়েছে পুর পরিষেবাতেও। বিদ্যুৎ বিল-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে পুরসভার বরাদ্দ বকেয়া রয়েছে, দরিদ্র বাসিন্দাদের ভাতাও অনিয়মিত। সব মিলিয়ে পুরসভায় যে অচলাবস্থা চলছে, তা প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যান ওই পুস্তিকায় থাকবে। সেই সঙ্গে তৃণমূল রাজ্য সরকার যে শিলিগুড়ি পুরসভাকে যথাযথ সাহায্য করেছে, তা প্রমাণ করতেও রাজ্যের বরাদ্দের হিসেব পুস্তিকায় থাকতে চলেছে বলে দল সূত্রে খবর। তৃণমূলের দাবি, গত ২৮ মাসে রাজ্য সরকার শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষকে ১৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, অথচ বিগত বাম আমলে বরাদ্দ হয়েছিল মাত্র ৪৯ কোটি টাকা। পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “এই পুরবোর্ড সাড়ে চার বছর কাজ করল। তার মধ্যে বছর দু’য়ক তো তৃণমূল-কংগ্রেস জোট করে বোর্ড চালিয়েছে। সেই সমস্ত নিয়েই তারা পুস্তকে কিছু বলছেন কি না তার অপেক্ষাতেই থাকব।”
তৃণমূলেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে পুরসভার বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা নিয়ে কাউন্সিলরদের নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন গৌতমবাবু। সেখানে কয়েকজন কাউন্সিলর এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের তরফে বোর্ড গঠনের প্রস্তাব দেন। বৈঠকে উপস্থিত অধিকাংশ কাউন্সিলেরর মত অবশ্য এই পরিস্থিতিতে বোর্ডে যাওয়া ঠিক হবে না। তাঁদের দাবি, পুরসভার কংগ্রেসি মেয়র এবং তাঁর পারিষদদের পদত্যাগের পরে, মেয়রের পদের দাবিদার না হয়ে ভোটের জন্য জনমত তৈরির কাজে এখনই নেমে পড়া দরকার। কেন না আগামী ১ অক্টোবর পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পুরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগে ভোট প্রক্রিয়া শুরু হলে কাজ করা যাবে না। তাই এখন পুরসভার ক্ষমতায় গেলে কাজ করার জন্য হাতে দু’মাস সময় মিলবে। ওই সময় বর্ষার মরসুমে কাজ হবে না। তাই আপাতত পুরসভায় প্রশাসক বসানো এবং আগামী ভোটের জন্য প্রস্তুত হওয়াই সঠিক বলে কাউন্সিলরদের অনেকেই মত দেন। দলেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, শিলিগুড়ি পুরসভার পরিস্থিতি নিয়ে পুরমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করতে চান গৌতমবাবু। পুরভোটে আসন পুনর্বিন্যাসের ব্যাপারেও কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করেন গৌতমবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy